কী কাজ?
ম্যাঙ্গেল ক্বাসের কপোট্রন কতক্ষণ এভাবে থাকবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই; তুমি এটাকে পুরোপুরি বিকল করে দাও।
কীভাবে বিকল করব?
এই দেখো ওর মাথার পিছনে দুটি ইলেকট্রড আছে, এদিক দিয়ে যদি এক মিলিওন ভোল্টের একটা বিদ্যুৎপ্রবাহ দেয়া যায় কপোট্রনটা পাকাপাকিভাবে অচল হয়ে যাবে।
এক মিলিওন ভোল্ট?
হ্যাঁ, ঝুঁকি নিয়ে কাজ নেই। কন্ট্রোল প্যানেলেই তুমি পাবে। কমিউনিকেশন্স মডিউলের বাইপাসে এরকম ভোল্টেজ থাকে। তুমি দুটো তার বের করে নাও, নিউরাল নেটওয়ার্ক তোমাকে ভোল্টেজ প্রস্তুত করে দেবে।
আমি নিজেকে টেনে নিতে গিয়ে আবার মেঝেতে শুয়ে পড়ে কাতর গলায় বললাম, আমি পারছি না মহামান্য রিতুন।
রিতুন ক্লিস ফিসফিস করে বললেন, তোমাকে পারতেই হবে ইবান। তুমি যদি না পার তাহলে যে-কোনো মুহূর্তে ম্যাঙ্গেল কাসের কপোট্রন এই বিভ্রান্তি থেকে বের হয়ে আসবে, তখন তুমি তার সাথে পারবে না। তোমার জীবন শুধু নয় মিত্তিকার জীবনও শেষ হয়ে যাবে। তুমি চেষ্টা কর ইবান।
আমি অক্সিজেন সিলিন্ডার থেকে বুক ভরে কয়েকবার নিঃশ্বাস নিয়ে আবার গুড়ি মেরে সরীসৃপের মতো এগুতে থাকি। কন্ট্রোল প্যানেলের নিচে শুয়ে কমিউনিকেশান্স মডিউলের দুটি তার টেনে খুলে এনে ম্যাঙ্গেল ক্বাসের কাছে এগিয়ে গেলাম আর মাথার পিছনে দুটি ইলেকট্রড থাকার কথা, চুলের পিছনে লুকিয়ে আছে। আমি খুঁজে বের করে তার দুটো লাগিয়ে একটু সরে এসে নিচু গলায় ফোবিকে ডাকলাম, ফোবি।
বলুন মহামান্য ইবান।
তুমি এই তার দুটোতে এক মিলিওন ভোল্টের একটা বিদ্যুৎপ্রবাহ দাও।
দিচ্ছি, আপনি আরো একটু সরে যান।
আমি পারছি না ফোবি, তুমি দিয়ে দাও।
ম্যাঙ্গেল ক্বাস হঠাৎ একটু নড়ে উঠল, আমি চিল্কার করে উঠলাম, ফোবি, এক্ষুনি দাও।
সাথে সাথে ভয়ঙ্কর বিদ্যুঝলকে ম্যাঙ্গেল ক্বাসের পুরো শরীর কেঁপে উঠল, তার হাত দুটো হঠাৎ করে প্রায় ছিটকে সোজা হয়ে উঠল এবং আঙুলের ডগা দিয়ে ভয়ঙ্কর বিস্ফোরক বের হয়ে আসে, আমি প্রচণ্ড বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পেলাম, ফোবিয়ান থরথর করে কেঁপে উঠল, কালো ধোঁয়ায় পুরো নিয়ন্ত্রণ কক্ষটি অন্ধকার হয়ে আসে।
ম্যাঙ্গেল ক্বাসের শরীরটা বিচিত্রভাবে নড়তে শুরু করে, একটা চোখ হঠাৎ করে খুলে ছিটকে বের হয়ে আসে, চোখের কালো গর্তের ভেতর দিয়ে সবুজ রংয়ের ধোয়া এবং কিছু ফাইবার বের হতে শুরু করে। মুখটি হা করে খুলে জিবের নিচে থেকে কিছু জটিল যন্ত্রপাতি বের হয়ে আসে। যন্ত্রগুলি অনিয়ন্ত্রিতভাবে নড়তে থাকে, একধরনের কালো। তেলতেলে জিনিস মুখ বেয়ে বের হতে থাকে। কান থেকে শাদা আঠালো একধরনের জিনিস বের হতে শুরু করে।
আমি আতঙ্কে চিল্কার করে পিছনে সরে আসার চেষ্টা করলাম। রিতুন ক্লিস আমার পাশে বসে শান্ত গলায় বললেন, ভয় নেই ইবান, কোনো ভয় নেই।
কী হয়েছে? ম্যাঙ্গেল ক্বাসের কী হয়েছে?
ও হাইব্রিড মানুষ। ওর যন্ত্রের অংশটি নষ্ট হয়ে গেছে ইবান। মানুষের অংশটি আছে, ঘুমুচ্ছে।
ঘুমুচ্ছে?
হ্যাঁ সহজে ঘুম ভাঙবে না।
আমি কি একটু ঘুমুতে পারি রিতুন ক্লিস?
রিতুন ক্লিস কী বললেন আমি শুনতে পেলাম না কারণ তার আগেই আমি অচেতন হয়ে গেলাম। মানুষের শরীর অত্যন্ত বিচিত্র, যে সময়টুকু জেগে না থাকলেই নয় তখন জেগে ছিল এখন যেহেতু প্রয়োজন মিটেছে আমার শরীর আর একমুহূর্ত জেগে থাকতে রাজি নয়।
৮. মিত্তিকার হাত এবং পায়ের বাঁধন খুলে দিয়ে
আমি মিত্তিকার হাত এবং পায়ের বাঁধন খুলে দিয়ে তার মাথার কাছে রাখা বায়ো জ্যাকেটটি চালু করে দিলাম। প্রায় সাথে সাথেই বায়ো জ্যাকেটের ছোট পাম্পটি গুঞ্জন করে ওঠে। আমি মনিটরে দেখতে পেলাম তার রক্তের মাঝে দ্রবীভূত হয়ে থাকা নিহিলা গ্যাসটুকু পরিশোধন করতে শুরু করে দিয়েছে। আমি মিত্তিকার মাথার কাছে চুপচাপ দাঁড়িয়ে তার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলাম, মেয়েটি সত্যিই অপূর্ব সুন্দরী, চেহারার মাঝে একধরনের সারল্য রয়েছে যেটি সচরাচর দেখা যায় না। আমার এখনো বিশ্বাস হয় না যে মিত্তিকাকে আরেকটু হলে ম্যাঙ্গেল ক্বাস একজন ঘাঘু অপরাধীতে পাল্টে দিতে চাইছিল।
আমি মিত্তিকার দিকে তাকিয়ে রইলাম, খুব ধীরে ধীরে তার দেহে প্রাণের চিহ্ন ফিরে আসছে, মিত্তিকার মুখে গোলাপি আভা ফিরে এল, সে হাত-পা নাড়ল এবং একসময় ছটফট করে মাথা নাড়তে শুত্র করল। আমি তার হাত ধরে ঝাকুনি দিয়ে ডাকলাম, মিত্তিকা, চোখ খুলে তাকাও মিত্তিকা।
মিত্তিকা মাথা নেড়ে অস্পষ্ট স্বরে কাতর গলায় কিছু একটা বলল, আমি ঠিক বুঝতে পারলাম না। মিত্তিকার হাত ধরে ঝাকুনি দিয়ে আমি আবার ডাকলাম, মিত্তিকা। মিত্তিকা—
মিত্তিকা হঠাৎ চোখ খুলে তাকাল, তার দৃষ্টি অপ্রকৃতস্থ মানুষের মতো বিভ্রান্ত। আমাকে দেখে সে চিনতে পারল বলে মনে হলো না। মিত্তিকা অসহায়ের মতো চারদিকে একবার তাকিয়ে হঠাৎ করে আমার দুই হাত জাপটে ধরে বলল, আমি কোথায়? আমার কী হয়েছে?
তোমার কিছু হয় নি মিত্তিকা। আমি মিত্তিকার মাথায় হাত বুলিয়ে বললাম, তোমার যেখানে থাকার কথা ছিল তুমি সেখানেই আছ।
মিত্তিকার হঠাৎ কিছু একটা মনে পড়ে গেল, আর্তচিৎকার করে ভয়ার্ত গলায় বলল, ম্যাঙ্গেল ক্বাস?
আমি হেসে বললাম, তোমার কোনো ভয় নাই মিত্তিকা। ম্যাঙ্গেল ক্বাসকে নিয়ে আর কোনো ভয় নাই।