তুমি স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র চালাতে পার?
পারি। রিহান গলার স্বরে খানিকটা উৎসাহ ঢেলে বলল, আমার বয়স সতের হবার পর আমাকে শেখানো হয়েছে। আমি রাত্রিবেলা ডিউটি করি মহামান্য প্রভু ক্লড।
তোমার স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রটির কী হয়েছিল?
রিহানের মুখ হঠাৎ ফ্যাকাসে হয়ে যায়, তার সারা শরীর আতঙ্কে কেঁপে ওঠে। সে মাথা নিচু করে বলল, আমাকে ক্ষমা করুন প্রভু ক্লড।
কী হয়েছিল তোমার স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রের?
সেটি জ্যাম হয়ে গিয়েছিল।
অস্ত্র জ্যাম হয়ে গেলে কী করতে হয়?
তাকে সম্মানের সাথে অস্ত্রাগারে ফেরত দিয়ে নূতন অস্ত্র নিতে হয়।
আর, তুমি কী করেছিলে?
রিহান একমুহূর্তের জন্যে মাথা উঁচু করে আবার মাথা নিচু করে বলল, আমি অস্ত্রটি ঠিক করেছিলাম প্রভু ক্লড।
কীভাবে ঠিক করেছিলে?
আমি সেটা খুলেছিলাম। খুলে পরিষ্কার করেছিলাম। যেখানে যেখানে জং ধরেছিল সেখানে গ্রিজ লাগিয়েছিলাম।
তখন সেটি ঠিক হয়েছিল?
হয়েছিল প্রভু ক্লড।
প্রভু ক্লড কয়েক মুহূর্ত অপেক্ষা করে জিজ্ঞেস করলেন, ছেলে, তোমার অস্ত্রটি জ্যাম হয়েছিল কেন?
রিহান কোনো কথা না বলে মাথা নিচু করে রইল। প্রভু ক্লড শান্ত গলায় বললেন, আমার কথার উত্তর দাও ছেলে।
আমি অস্ত্রটিতে পানি ঢেলেছিলাম।
কেন পানি ঢেলেছিলে?
কী হয় দেখার জন্যে। অস্ত্রে কীভাবে জং ধরে বোঝার জন্যে।
বুঝে কী হবে?
ভবিষ্যতে অস্ত্রগুলো রক্ষা করা যাবে।
তুমি কী বুঝেছ?
রিহান কোনো কথা না বলে মাথা নিচু করে রইল। প্রভু ক্লড জিজ্ঞেস করলেন, তুমি আর কী কী করেছ রিহান?
আপনি সব জানেন। আপনি প্রভু ক্লড। আপনি ঈশ্বরপুত্র ঈশ্বর। আপনি সর্বজ্ঞ। আপনি মহাশক্তিমান।
তবুও আমি তোমার মুখেই শুনতে চাই ছেলে। বলো।
রিহান কাঁপা গলায় বলল, আমি বুলেট ভেঙে দেখেছি তার ভিতরে কী আছে।
কী আছে?
কালো রঙের এক ধরনের পাউডার।
কী হয় সেই পাউডার দিয়ে?
আগুন জ্বালালে বিস্ফোরণ হয়।
সেই পরীক্ষা করতে গিয়ে তোমার কী হয়েছিল?
রিহান নিচু গলায় বলল, আপনি সর্বজ্ঞ। আপনি জানেন। আমার হাত পুড়ে গিয়েছিল।
তুমি চিকিৎসকের কাছে গিয়েছিলে?
না মহামান্য প্রভু।
কেন যাও নি?
আমি ভয় পেয়েছিলাম।
রিহান হাঁটু ভেঙে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইল, প্রভু ক্লড হেঁটে তার খুব কাছে এসে দাঁড়ালেন। দীর্ঘ সময় কেউ কোনো কথা বলল না। একসময় প্রভু ক্লড একটি নিশ্বাস ফেলে ক্লান্ত গলায় বললেন, ছেলে, তুমি কি জান এই পৃথিবীতে কী হয়েছিল?
রিহান মাথা নাড়াল, বলল, না প্রভু। আমি জানি না।
এই পৃথিবীতে একসময় ছয় বিলিয়ন মানুষ ছিল।
রিহান মাথা তুলে বিস্তারিত চোখে প্রভু ক্লডের দিকে তাকাল, বলল, ছয় বিলিয়ন?
হ্যাঁ। একদিন তারা সব মরে গিয়েছিল। কেন জান?
জানি না প্রভু ক্লড।
প্রভু ক্লড তীব্র স্বরে বললেন, তোমার মতো মানুষের জন্যে। তাদের কৌতূহলের জন্যে। প্রভু ক্লড কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললেন, মানুষের সেই সভ্যতা শেষ হয়ে গেছে ছেলে। এখন পৃথিবীতে নূতন সভ্যতার জন্ম হয়েছে। এই সভ্যতায় কৌতূহলের কোনো স্থান নেই।
আমার ভুল হয়েছে প্রভু।
এই সভ্যতায় মানুষকে রক্ষা করার জন্যে আমরা আমাদের জীবনকে উৎসর্গ করেছি।
আমরা জানি প্রভু। আমরা সে জন্যে কৃতজ্ঞ।
আমরা তোমাদের প্রভু হয়েছি। তোমাদের ঈশ্বর হয়েছি। তোমাদের সাহায্য করার জন্যে আমরা সর্বজ্ঞ হয়েছি।
আপনাদের দয়া। আপনাদের মহানুভবতা।
আমি প্রভু ক্লড হয়ে তোমাদের প্রায় অর্ধশতাব্দী থেকে রক্ষা করে আসছি। এই সুদীর্ঘ সময়ে কেউ আমার আশাভঙ্গ করে নি। ঠিক যেভাবে চেয়েছি সেভাবে চলে এসেছে। তুমি–
রিহানের সারা শরীর হঠাৎ আতঙ্কে থরথর করে কেঁপে উঠল। প্রভু কুডের গলায় হঠাৎ এক আশ্চর্য কাঠিন্য এসে ভর করে, তুমি প্রথমবার আমাকে নিরাশ করেছ। তুমি নিউক্লিয়ার রি–একটরের কুলিং নিয়ে খেলা করেছ। তুমি জান নিউক্লিয়ার রি–একটর কী? তুমি জান রেডিয়েশান কী? তুমি জান কোর মেন্টডাউন কী? জান না–কিন্তু তার পরও তুমি সেখানে হাত দিয়েছ! নির্বোধ ছেলে প্রচণ্ড রেডিয়েশানে আমরা সবাই নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে পারতাম!
রিহান কোনো কথা বলল না, মাথা নিচু করে হাঁটু ভেঙে বসে রইল। প্রভু ক্লড আবার বললেন, তুমি বারুদের মাঝে আগুন দিয়েছ। স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র নষ্ট করেছ? সেটা খুলে ফেলেছ! তুমি জান এর অর্থ কী?
রিহান মাথা নাড়ল, বলল, জানি না প্রভু। আমি মূর্খ। আমি নির্বোধ। আমি তুচ্ছ–
এর অর্থ তুমি অনেক কষ্ট করে তৈরি করা আমাদের এই পদ্ধতিটি অস্বীকার করেছ।
রিহান মাথা নেড়ে বলল, না প্রভু না। আমি অস্বীকার করতে চাই নি। আমার ভুল হয়েছে। আমার অনেক বড় ভুল হয়েছে।
প্রভু ক্লড একটা নিশ্বাস ফেলে হঠাৎ কোমল গলায় বললেন, তুমি কেন এটা করেছ ছেলে? তুমি কেন এই নিয়ম ভেঙেছ?
রিহান প্রভু ক্লডের গলায় কোমল স্নেহের আভাস পেয়ে প্রায় মরিয়া হয়ে বলল, আমার মনে হয়েছিল
কী মনে হয়েছিল?
এই যন্ত্র তো মানুষ তৈরি করেছে। মানুষের তৈরি যন্ত্রকে কেন আমাদের উপাসনা করতে হবে? আমরা কেন যন্ত্রকে বুঝতে চেষ্টা করব না?
তোমার তাই মনে হয়েছিল?
জি মহামান্য ঈশ্বরপুত্র। আমার কাছে মনে হয়েছিল এই নিয়মটি একটি বাহুল্য। আমি পরীক্ষা করে দেখেছি যন্ত্রের উপাসনা করা না হলেও সেগুলি কাজ করে।