সেটা নিয়েই তোমার সাথে কথা বলতে চাইছি।
একটু দাঁড়াও। আমি এদের প্লাঙ্ক কনস্টেন্টটা বের করে দিয়ে আসছি।
ঠিক আছে।
রিহান সময় কাটানোর জন্যে ক্লাসরুমের করিডর ধরে হাঁটতে থাকে। একপাশে একটা ল্যাবরেটরিতে একটা মাইক্রোস্কোপে চোখ লাগিয়ে একটা মেয়ে কিছু একটা দেখছে, মাথা তুলতেই দেখল মেয়েটি ত্রানা। রিহান হাসিমুখে বলল, কী খবর এনা? কেমন চলছে তোমার গবেষণা?
জানা গম্ভীর মুখে মাথা নাড়ল, এক জায়গায় আটকে গেছি! কিছুতেই একটা জিনিস ধরতে পারছি না।
কী জিনিস?
তুমি বুঝবে না। জিনেটিক কোডিঙের একটা ব্যাপার।
তথ্যকেন্দ্র থেকে জেনে নাও।
উঁহু। আমি নিজে নিজে বের করতে চাই। জিজ্ঞেস করে জেনে নিলে লাভ কী?
ত্রানা আবার মাইক্রোস্কোপে চোখ রাখতে গিয়ে থেমে গিয়ে উচ্চ স্বরে ডাকল, ক্লড।
পাশের ঘর থেকে ক্লড বলল, কী হল?
আমার পেটরি ডিশগুলো কোথায়?
এই যে নিয়ে আসছি। বলে একটা ট্রেতে বেশ কিছু পেটরি ডিশ নিয়ে ক্লড ল্যাবরেটরির ঘরে ঢুকল। তার মাথার চুলগুলো আরো সাদা হয়েছে, মুখে বয়সের বলিরেখা। ত্রানা একটা পেটরি ডিশ হাতে নিয়ে ভালো করে দেখে বলল, এটা কি পরিষ্কার করা হল? তোমাকে এত করে বলেছি ভালো করে পরিষ্কার করতে কিন্তু তুমি আমার কথা শোনোই না।
ক্লড অপরাধীর মতো মুখ করে কাঁচুমাচু হয়ে বলল, ইয়ে, মানে চেষ্টা করেছিলাম!
তুমি একটা পেটরি ডিশ ঠিক করে পরিষ্কার করতে পার না কিন্তু একসময় তুমি নাকি একজন ঈশ্বর ছিলে! মানুষ তোমাকে ডাকত প্রভু ক্লড আর তুমি কথায় কথায় মানুষকে ফাঁসি দিয়ে দিতে। তোমাকে দেখলে কেউ সেটা বিশ্বাস করবে?
ক্লড কিছু একটা কথা বলতে যাচ্ছিল না তাকে থামিয়ে দিয়ে বলল, এস আমার সাথে। আমি তোমাকে দেখিয়ে দিই কেমন করে পরিষ্কার করতে হয়। আর যেন ভুল না হয়।
.
প্রিমা রিহানের হাত ধরে যাচ্ছে বড় একটা পাথরের উপর থেকে পানির ধারা বাঁচিয়ে অন্য একটা পাথরে পা দিয়ে বলল, তুমি কি রাগ করেছ রিহান?
করেছিলাম, কিন্তু এখন কমে গেছে।
কমে গেলেই ভালো।
রিহান প্রিয়াকে নিজের কাছে টেনে এনে বলল, কিন্তু আমাকে একটা কথা বলল, কোর্টে মামলা করার বুদ্ধিটা তোমাকে কে দিয়েছে?
কে আবার? গ্রুস্তান!
আমার আগেই বোঝা উচিত ছিল।
প্রিমা রিহানের হাত টেনে বলল, তুমি যেন আবার গ্রুস্তানের সাথে রাগারাগি না কর।
না, করব না।
প্রিমা সুর পাল্টে বলল, তুমি এরকম একটা পাগলামি করবে, আর আমার ভয় করবে না?
পাগলামি?
হ্যাঁ, যদি কিছু একটা হয়? সব বিপদের কাজগুলো তোমাকেই কেন করতে হয়? তুমি অন্যদের সুযোগ দিতে চাও না কেন?
রিহান বলল, কে বলেছে দিতে চাই না?
আমি জানি বিপদের কাজগুলো তুমি নিজে করতে চাও। মনে রেখো এখন কিন্তু তুমি মানে শুধু তুমি না। তুমি মানে তুমি আর আমি আর আমাদের বাচ্চা কিশি।
রিহান কোন কথা বলল না, ধীরে ধীরে একবার মাথা নাড়ল। প্রিমা হাত টেনে বলল, মনে থাকবে তো?
থাকবে।
.
রিহান তার টেবিলে একটা প্লেনের নকশার উপর ঝুঁকে পড়ে কত গতিবেগে কত লিফট হতে পারে সেটা হিসাব করে বের করছে। প্রিমা গিয়েছে কিশিকে ঘুম পাড়াতে। হিসাব করতে করতে রিহান শুনতে পেল কিশি বলছে, মা আমাকে সেই পাখির গল্পটা বলো না।
কোন পাখির গল্প?
ফিনিক্স পাখির গল্প।
এক গল্প কতবার শুনবে বোকা ছেলে।
শুনব মা শুনব! বলো না–
.
রিহান শুনতে পেল প্রিমা তাদের সন্তানকে ফিনিক্স পাখির গল্প বলছে। কেমন করে ফিনিক্স পাখি আকাশের বুকে পাখা উড়িয়ে উড়ত–কেমন করে একদিন সেই ফিনিক্স পাখি আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেল। সেই ছাইয়ের ভেতর থেকে কেমন করে আবার নতুন ফিনিক্স পাখির জন্ম হল, বিশাল পাখা উড়িয়ে কীভাবে সেই পাখি আবার আকাশের বুকে ডানা মেলে দিল–
টেবিলের নকশার উপর ঝুঁকে কাজ করার ভান করতে করতে রিহান প্রিমার মুখ থেকে ফিনিক্স পাখির গল্প শুনতে থাকে।
তার ছেলের মতোই সমান আগ্রহে।