কোর মেল্টডাউন হচ্ছে, রেডিয়েশনে মারা যাব আমরা।
না, আমরা মারা যাব না।
প্রিমা অবাক হয়ে বলল, কেন মারা যাব না
কারণ এখানে কিছু হচ্ছে না, শুধু প্রচণ্ড শব্দে একটা এলার্ম বাজছে।
শুধু এলার্ম বাজছে? সেটি কীভাবে সম্ভব?
খুব সম্ভব। এটা একটা হাস্যকর খেলনা যন্ত্র–ভয়ংকর এলার্ম বাজিয়ে আতঙ্কের সৃষ্টি করে দেয়। আসলে কিছু না।
কিন্তু কিন্তু
কিন্তু কী?
কেউ সেটা বুঝতে পারছে না কেন?
কারণ প্রভু ক্লডের তথ্য পাওয়ার জন্যে যোগাযোগ মডিউলে যে হলোগ্রাফিক ইন্টারফেস ছিল সেটা আর কাজ করছে না। তার বোঝার কোনো উপায় নেই। এখানে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করত প্রত্ ক্লড। প্রভু ক্লড যখন অচল হয়ে যায় সবকিছু অচল হয়ে যায়।
প্রিমা চোখ বড় বড় করে বলল, কী বলছ তুমি?
হ্যাঁ। আমি ঠিকই বলছি। যে যন্ত্রের ওপর ভরসা করে সবাই ঈশ্বর হত সেই যন্ত্র আর কোনোদিন কাজ করবে না। পৃথিবীতে আর কেউ ভবিষ্যতে ঈশ্বর হতে পারবে না।
কেন?
সেটি অনেক বড় কাহিনী।
আমি সেটি শুনতে চাই।
রিহান হেসে বলল, তার চাইতে ভালো একটা কাজ করা যায়।
কী করা যায়?
তোমাকে সেটা দেখানো যায়।
কী দেখানো যায়?
আমি সেটা তোমাকে বলে বুঝাতে পারব না প্রিমা। সেটা বিশ্বাস করতে হলে তোমাকে নিজের চোখে দেখতে হবে। আমি বাজি ধরে বলতে পারি তুমি নিজের চোখে দেখেও সেটা বিশ্বাস করবে না।
প্রিমা অবাক হয়ে রিহানের দিকে তাকিয়ে রইল, তারপর হঠাৎ ছটফট করে বলল, আমাকে দেখাও। এক্ষুনি দেখাও।
হ্যাঁ দেখাব, কিন্তু তার আগে চল এই এলার্মটা বন্ধ করে দিই। কান ঝালাপালা হয়ে যাচ্ছে।
.
কিছুক্ষণের ভেতরেই দেখা গেল রিহান শক্তিশালী মোটরবাইকে করে মরুভূমির পাথুরে প্রান্তরের উপর দিয়ে ছুটে যাচ্ছে। পিছনের সিটে বসে প্রিমা রিহানকে শক্ত করে ধরে রেখেছে। নিরাপত্তার জন্যে যতটুকু শক্ত করে ধরা দরকার প্রিমা তার চাইতে অনেক শক্ত করে ধরেছে। তাকে দেখলে মনে হয় সে ভাবছে এই মানুষটিকে ছেড়ে দিলেই বুঝি সে হারিয়ে যাবে। সে কিছুতেই এই মানুষটিকে হারাতে চায় না। কিছুতেই না।
৯. শেষ কথা
চার বছর পরের কথা।
রিহান ককপিটে বসে হাত দিয়ে ইঙ্গিত করতেই প্রপেলার ধরে রাখা মানুষটি সেটা ঘোরানোর চেষ্টা করল। রিহান ফুয়েল পাম্পে চাপ দিয়ে ইগনিশান কী-টা ঘোরানোর সাথেই। ভট ভট শব্দ করে ইঞ্জিনটা চালু হবার চেষ্টা করে কয়েকবার শব্দ করে থেমে গেল। রিহান। ফুয়েল পাম্প কয়েকবার চাপ দিয়ে হাত দিয়ে আবার ইঙ্গিত করতেই প্রপেলারের কাছে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটা দ্বিতীয়বার গায়ের জোর দিয়ে প্রপেলারটা ঘোরানোর চেষ্টা করল, এবারে বার কতক আঁকুনি দিয়ে হঠাৎ ইঞ্জিনটা বিকট শব্দ করে চালু হয়ে যায়। দেখতে দেখতে ইঞ্জিনটা পুরো শক্তিতে ঘুরতে শুরু করে, প্রবল বাতাসে ধুলোবালি এবং বড়কুটো। উড়ে যেতে শুরু করে। রিহান গগলসটা চোখে লাগিয়ে কন্ট্রোলটা হাতে নিয়ে প্লেনটা একটু সামনে নেবার প্রস্তুতি নিচ্ছিল ঠিক তখন দেখতে পেল কে একজন হাত নাড়তে নাড়তে ছুটে আসছে মানুষটি ছুটতে ছুটতে প্রাণপণে রিহানের দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করছে। রিহান একটু অবাক হয়ে দেখল, মানুষটি গ্রুস্তান, তার ডান হাতে একটা কাগজ এবং কাগজটা নাড়তে নাড়তে সে ছুটে আসছে।
রিহান সুইচ টিপে ইঞ্জিনটা বন্ধ করে একটা যন্ত্রণাসূচক শব্দ করে চোখের গগলসটা খুলে গ্রুস্তানের জন্যে অপেক্ষা করতে লাগল। এই চার বছরে গ্রুস্তানের দেহটি আরো বিস্তৃত হয়েছে এবং ছুটে আসার কারণে সে রীতিমতো হাঁপাতে থাকে। রিহান জিজ্ঞেস করল, কী হয়েছে গ্রুস্তান?
গ্রুস্তান প্রত্যেকটি শব্দের পর একটা করে নিশ্বাস নিয়ে বলল, ঠিক সময়ে তোমাকে ধরেছি।
মোটেও ঠিক সময়ে আমাকে ধর নি। খুব ভুল সময়ে ধরেছ। রিহান গলা উঁচু করে বলল, আমি এক্ষুনি প্লেনটা ফিল্ড টেস্ট করতে নিয়ে যাচ্ছিলাম।
সেজন্যেই বলেছি ঠিক সময়ে ধরেছি। গ্রুস্তান হঠাৎ করে তার মুখটা প্রয়োজন থেকে অতিরিক্ত গম্ভীর করে বলল, তোমার এই প্লেনের কার্যক্রমের ওপর আইনগত বাধা এসেছে।
রিহানের কথাটা বুঝতে কয়েক মুহূর্ত সময় লাগল, সে মুখ হাঁ করে বলল, কী বাধা?
আইনগত বাধা।
আইনগত বাধা? রিহানের মুখ দেখে মনে হল সে কথাটার অর্থ বুঝতে পারছে না। বারকয়েক চেষ্টা করে আবার বলল, আইনগত বাধা?
হ্যাঁ। গ্রুস্তান খুব চেষ্টা করে মুখে একটা কঠোর ভাব এনে বলল, একজন নাগরিক তোমার প্লেনের কার্যক্রমের ওপর মামলা করেছে। সে বলেছে মানুষের আকাশে ওড়ার কোনো প্রয়োজন নেই। যদি প্রকৃতি চাইত মানুষ আকাশে উড়ুক তা হলে তাদের পাখির মতো ডানা থাকত। যেহেতু মানুষের ডানা নেই কাজেই তাদের আকাশে ওড়ার কোনো প্রয়োজন নেই।
রিহান খুব চেষ্টা করে নিজেকে শান্ত রেখে বলল, কোর্ট এই যুক্তি গ্রহণ করেছে?
করে নাই। গ্রুস্তান গম্ভীর গলায় বলল, কোর্ট বলেছে বিজ্ঞানের গবেষণার ক্ষেত্রে কোনো সীমা বেঁধে দেওয়া যাবে না। যার যেটা ইচ্ছে সে সেটা নিয়ে গবেষণা করতে পারবে।
তা হলে আইনগত বাধাটা এল কোথা থেকে?
কারণ মামলার আবেদনে আরো একটি কথা ছিল।
সেটি কী কথা?
গ্রুস্তান হাতের কাগজটি দেখে বলল, সেখানে বলা হয়েছে তোমার প্লেনের কার্যক্রম এখনো পরীক্ষামূলক অবস্থায় আছে। এখনই এটার ফিড টেস্ট করা হলে জানমালের ক্ষতি হতে পারে।