গ্রাউস আমতা–আমতা করে বলল, আমি জানি না
কী বলছ তুমি জান না? প্রভু ক্লড কী বলেছেন?
প্রভু ক্লডও জানেন না।
গ্রাউসকে ঘিরে থাকা মানুষগুলো অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে, তারা নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না। ছোট একটা বাচ্চাকে শক্ত করে বুকে ধরে রাখা মা ভয় পাওয়া গলায় বলল, তা হলে কে জানে?
রিহান গলা উঁচু করে বলল, আমি জানি।
একসাথে সবাই তার দিকে ঘুরে তাকাল। রিহান বলল, হ্যাঁ, আমি জানি। এই এলার্ম সর্বোচ্চ বিপদের এলার্ম। এর অর্থ নিউক্লিয়ার রি-একটরের কোর গলতে শুরু করেছে। কিছুক্ষণের মাঝেই অচিন্তনীয় পরিমাণ রেডিয়েশন বের হবে। তোমরা অর্ধেক মানুষ সাথে সাথে মারা যাবে, বাকি অর্ধেক মারা যাবে আগামী তিন মাসের মাঝে। তারপরেও যারা বেঁচে থাকবে, তারা ক্যান্সারে ভুগে ভুগে মারা যাবে।
কয়েকজন চিৎকার করে বলল, কিন্তু আমরা কী করব?
তোমরা পালাও।
পালাব?
হ্যাঁ, এই মুহূর্তে ট্রাকে উঠে পালাও। বাতাসের বিপরীত দিকে পালাও, কারণ কোর মেন্টডাউন হলে বাতাসে রেডিয়েশন ভেসে আসতে পারে!
একজন ভয়ার্ত মুখে বলল, কিন্তু প্রভু ক্লডের আদেশ ছাড়া আমরা পালাব?
রিহান হা–হা করে হেসে বলল, তোমাদের প্রভু ক্লডও তোমাদের সাথে পালাবেন। তিনি আর ঈশ্বর নন, তিনি এখন সাধারণ মানুষ! সত্যি কথা বলতে কী সাধারণ মানুষ তবু কোনো না কোনো কাজে লাগে, একজন ঈশ্বর যখন সাধারণ মানুষ হয়ে যায় সে কোনো কাজে আসে না
উপস্থিত মানুষজন এক ধরনের আতঙ্ক নিয়ে রিহানের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। একজন কাঁপা গলায় বলল, তুমি কেমন করে জান?
আমি জানি। তোমাদের প্রভু ক্লড যে তথ্য দিয়ে ঈশ্বর হয়েছিল, সেই তথ্য তার কাছে আর আসছে না। তার কাছে আর কখনো আসবে না।
কিন্তু–কিন্তু তুমি কেমন করে জান?
বেঁচে থাকলে আমরা সেটা নিয়ে কথা বলার সুযোগ পাব, এখন পালাও। দেরি কোরো না!
জরুরি এলার্মটা তীক্ষ্ণ থেকে তীক্ষ্ণতর হতে শুরু করেছে। শব্দের সাথে সাথে লাল আলো জ্বলতে শুরু করেছে, দেখতে দেখতে পুরো পরিবেশটা ভয়ংকর হয়ে উঠল। রিহান দেখতে পেল তার কথা শুনে ট্রাকে করে মানুষজন পালাতে শুরু করেছে। একটি ট্রাককে চলে যেতে দেখে সবাই ছুটোছুটি করে অন্য ট্রাকে উঠতে রু করেছে। দেখতে দেখতে পুরো এলাকাটি ফাঁকা হয়ে যেতে শুরু করে, শুধু ভয়ংকর এলার্মটি তীক্ষ্ণ কর্কশ শব্দ করে বাজতে থাকে।
যে দুজন মানুষ রিহানকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করার জন্যে এনেছিল তাদেরকে কেমন জানি বিভ্রান্ত দেখায়, তারা কী করবে ঠিক বুঝতে পারছে না। রিহান তাদের দিকে তাকিয়ে বলল, তোমরা পালাবে না?
তোমাকে কী করব?
প্রভু ক্লড গুলি করে মারতে বলেছে, গুলি করে মার।
মানুষ দুজন একটু অবাক হয়ে রিহানের দিকে তাকাল, এর আগে তারা কখনো কাউকে এত সহজে নিজেকে গুলি করার কথা বলতে শোনে নি। রিহান চোখ মটকে বলল, যেটা করতে চাও, তাড়াতাড়ি কর।
কেন?
রিহান হা–হা করে হেসে বলল তোমরা যে প্রভু ক্লডের ওপর ভরসা করে আছ ঐ যে তাকিয়ে দেখ সেও তোমাদের ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছে!
মানুষগুলো অবাক হয়ে দেখল সত্যি সত্যি আতঙ্কিত প্রভু ক্লড তার আর. ভি. থেকে বের হয়ে এসেছেন, কী করবেন বুঝতে না পেরে খোলা প্রান্তরের উপর দিয়ে ছুটতে শুরু করেছেন।
রিহান বলল, আমাকে মারার অনেক সুযোগ পাবে। যাও, আগে এই বুড়ো মানুষটাকে পালিয়ে যেতে সাহায্য কর। ধরে কোনো একটা ট্রাকে তুলে দাও।
স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রটা হাত বদল করে বলল, কিন্তু তুমি
আমি যদি তুমি হতাম তা হলে আমাকে ঘাটাতাম না! কারণ কী জান?
কী?
তোমার প্রভু ক্লড আর কোনোদিন তোমাদের সাহায্য করতে পারবে না। যে তথ্য দিয়ে সে তোমাদের সাহায্য করত সেই তথ্য বন্ধ হয়ে গেছে! কিন্তু আমি এখনো তোমাদের সাহায্য করতে পারব। শুধু আমি জানি কেমন করে এই নিউক্লিয়ার রি-এক্টর রক্ষা করা যায়।
মানুষগুলো এক ধরনের বিস্ময় নিয়ে রিহানের দিকে তাকিয়ে রইল। রিহান নিচু গলায় বলল, আর দেরি কোরো না, যা করার তাড়াতাড়ি কর। কিছুক্ষণের মাঝে রেড এলার্ট শুরু হয়ে যাবে, তখন আর কিছু করা যাবে না।
স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র হাতে মানুষ দুটো নিজেদের ভেতর নিচু গলায় কথা বলল, তারপর এগিয়ে এসে রিহানকে খুলে দিয়ে বলল, ঠিক আছে, আমরা তোমাকে ছেড়ে দিচ্ছি।
চমৎকার। তোমাদের ধন্যবাদ।
তুমি চেষ্টা করে দেখো রি-একটর মেন্টডাউন বন্ধ করতে পার কি না!
দেখব। তোমরা এখন পালাও।
রিহান কিছুক্ষণের মাঝেই দুটো শক্তিশালী মোটরবাইকের শব্দ শুনতে পায়। মানুষ দুটো এই কমিউন ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছে। মৃত্যুভয় খুব বড় ভয়।
.
রিহান একটা নিশ্বাস ফেলে প্রভু ক্লডের বাসভবনের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। পুরো কমিউনের সবাই সরে গেছে এখানে এখন আছে শুধু রিহান এবং প্রিমা। প্রিমাকে খুঁজে বের করতে হবে, সে নিশ্চয়ই আতঙ্কে অধীর হয়ে আছে।
রিহান যখন প্রিমার হাত এবং পায়ের শেকল খুলছে তখন নিউক্লিয়ার রি–এক্টরের কোর মেন্টডাউন শুরু হয়ে গেছে, রেড এলার্ট হিসেবে ভয়ংকর সাইরেন বাজছে, ভয়ংকর। রেডিয়েশন ছড়িয়ে পড়তে রু করেছে। প্রিমা ভয়ার্ত গলায় রিহানের হাত আঁকড়ে ধরে বলল, আমাদের কী হবে রিহান?
রিহান হেসে বলল, কিছু হবে না।