হ্যাঁ।
কেন?
আমি ঈশ্বরী প্রিমার খোঁজ নিতে এসেছি। তিনি কেমন আছেন জানতে এসেছি।
তুমি একজন মানুষ হয়ে ঈশ্বরীর খোঁজ নিতে এসেছ, তোমার এত বড় দুঃসাহস?
রিহান তরল গলায় বলল, আমার দুঃসাহসের জন্য ক্ষমা চাই প্রভু ক্লড। তবে আমার কারণে ঈশ্বরী প্রিমা শাস্তি পাচ্ছেন সেজন্যে নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে।
প্রভু ক্লড কোনো কথা না বলে তীক্ষ্ণ চোখে রিহানের দিকে তাকিয়ে রইলেন। রিহান বলল, আমি এখন আমার শাস্তির জন্যে এসেছি। ঈশ্বরী প্রিমাকে কি তার কমিউনে ফিরে যেতে দেবেন?
সেই সিদ্ধান্ত নেব আমি।
অবশ্যই। অবশ্যই প্রভু ক্লড। রিহান কয়েক মুহূর্ত অপেক্ষা করে বলল, ঈশ্বরী প্রিমা এখন কোথায় আছেন?
তোমার সেটি জানার কোনো প্রয়োজন নেই।
আমি কি তা হলে অন্য একটি জিনিস জানতে পারি?
কী জানতে চাও?
আমি কেন সাধারণ মানুষ আর আপনি কেন ঈশ্বর?
প্রভু ক্লডের মুখ হঠাৎ ভয়ংকর হিংস্র হয়ে ওঠে, তিনি চিৎকার করে বললেন, বেশি দুঃসাহস দেখিও না ছেলে।
আপনি যে তথ্যটুকু পান, হঠাৎ করে সেই তথ্য যদি বন্ধ হয়ে যায় তা হলে আপনি কি সাধারণ মানুষ হয়ে যাবেন?
তুমি কী বলতে চাইছ?
আপনি যে তথ্যটুকু পান, আমরা সবাই যদি সেই তথ্য পেতে শুরু করি তা হলে কি আমরা সবাই ঈশ্বর আর ঈশ্বরী হয়ে যাব?
ভয়ংকর ক্রোধে প্রভু ক্লডের মুখ বিকৃত হয়ে ওঠে, তিনি চিৎকার করে বললেন, কে আছ? নিয়ে যাও একে এই মুহূর্তে নিয়ে যাও।
প্রায় সাথে সাথে দুইজন মানুষ স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র হাতে ছুটে আসে। দুই পাশ থেকে তাকে দুজনে ধরে ফেলে, রিহান ঝটকা মেরে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করল কিন্তু ছাড়াতে পারল না। প্রভু ক্লড চিৎকার করে বললেন, বাইরে নিয়ে যাও একে। গুলি করে হত্যা কর সবার সামনে। এই মুহূর্তে।
মানুষ দুইজন মাথা নিচু করে বলল, আপনার যেরকম ইচ্ছে প্রভু ক্লড।
.
সবার সামনে কাউকে গুলি করে হত্যা করার জন্যে খানিকটা প্রস্তুতির প্রয়োজন হয়। কমিউনে বহুদিন কাউকে প্রকাশ্যে হত্যা করা হয় নি–ঠিক কীভাবে সেটা করা হয় সেটাও ভালো জানা নেই। রিহানের সামনেই যখন ব্যাপারটি নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল ঠিক তখন এক কোনা থেকে নিউক্লিয়ার রি–এক্টর থেকে এলার্মের শব্দ শোনা গেল। বিপদের মাত্রা অনুযায়ী এলার্মের শব্দের তারতম্য হয়, এই এলার্মটি সর্বোচ্চ বিপদের। মুহূর্তের মাঝে পুরো কমিউনে একটি আতঙ্কের শিহরন বয়ে গেল। ঘরের দরজা খুলে চিৎকার গ্রতে প্রতে লোকজন বের হয়ে ছোটাছুটি ক্ষ করে দেয়। গ্রাউস দুই হাত তুলে তাদের থামানোর চেষ্টা করে, বলতে থাকে, শান্ত হও। সবাই শান্ত হও। ভয় পাবার কিছু নেই। প্রভু কড এক্ষুনি সব নিয়ন্ত্রণ করে দেবেন–
সবাই তার কথা শুনতে পেল না, যারা শুনতে পেল তারাও খুব শান্ত হল বলে মনে হল। এই কমিউনে বেঁচে থাকার অংশ হিসেবে তাদেরকে এই এলার্মের শব্দগুলোর সাথে পরিচয় করানো হয়েছে।
গ্রাউস একজনকে ধাক্কা দিয়ে বলল, যাও। প্রভু ক্লডের নির্দেশ নিয়ে এস। এক্ষুনি যাও।
মানুষটি প্রভু ক্লডের আর. ভি. এর দিকে ছুটে যেতে থাকে। রিহান মুখে এক ধরনের কৌতুকের হাসি নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল, গ্রাউসকে ডেকে বলল, গ্রাউস! আমার একটি কথা শুনবে?
কী কথা?
যদি প্রাণে বাঁচতে চাও, পালাও।
তুমি কী বলতে চাইছ?
এই এলার্মটি হচ্ছে কোর মেন্টডাউনের এলার্ম। কিছুক্ষণের মাঝে মেল্টডাউন হবে, রেডিয়েশনে কেউ বেঁচে থাকবে না।
গ্রাউস ক্রুদ্ধ গলায় বলল, সেটা নিয়ে তোমার মাথা ঘামাতে হবে না। প্রভু ক্লড তার সমাধান দেবেন।
দেবেন না।
কী বলতে চাইছ তুমি?
তোমাদের প্রভু ক্লড যে তথ্যের সরবরাহ পেয়ে ঈশ্বর হয়েছিলেন তার সেই সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে। প্রভু ক্লড এখন আর ঈশ্বর নেই। তিনি এখন আমাদের মতো মানুষ!
গ্রাউস অবাক হয়ে বলল, তুমি কেমন করে জান?
রিহান হা–হা করে হেসে বলল, আমি এমন অনেক জিনিস জানি যেটা তোমরা কেউ জান না! আমার কথা বিশ্বাস না হলে প্রভু ক্লডের কাছে যাও। নিজের কানে শুনে এস। নিজের চোখে দেখে এস।
গ্রাউস অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে রিহানের দিকে তাকিয়ে রইল।
মানুষজন হইচই করে ছোটাছুটি করছে তার মাঝে ভয়ংকর শব্দ করে এলার্ম বাজতে থাকে, কে কী করবে বুঝতে পারছে না। ছোট বাচ্চারা চিৎকার করে কাঁদছে, অনেকে হাঁটু গেড়ে বসে প্রার্থনা করতে শুরু করেছে। গ্রাউস যে মানুষটিকে প্রভু ক্লডের কাছে পাঠিয়েছিল হঠাৎ করে দেখল সে বিবর্ণ ফ্যাকাসে মুখে ছুটতে ছুটতে আসছে। গাউসের কাছে এসে বলল, গ্রাউস!
কী হয়েছে?
প্রভু ক্লড কিছু বলছেন না—
কিছু বলছেন না মানে?
মানে কিছু বলছেন না। তার কাছে কোনো সমাধান নাই।
গ্রাউস আর্তচিৎকার করে বলল, কী বলছ তুমি পাগলের মতো?
আমি ঠিকই বলছি। বিশ্বাস না হলে তুমি যাও। তুমি শুনে এস।
গ্রাউস ভয়ার্ত মুখে একবার চারদিকে তাকাল, তাকে কেমন জানি অসহায় দেখায়। রিহান গলা উঁচু করে বলল, আমার কথা বিশ্বাস হল গ্রাউস?
গাউসের চোখ–মুখ হঠাৎ হিংস্র হয়ে ওঠে, সে রিহানের কাছে ছুটে এসে বলল, তুমি কিছু একটা করেছ! তুমি?।
রিহান হা–হা করে হেসে বলল, আমি? আমি তুচ্ছ মানুষ ঈশ্বরের কাজে বাধা দেব? কী বলছ তুমি গ্রাউস?
মানুষ ছুটোছুটি করে গ্রাউসের কাছে ছুটে আসতে থাকে, দেখতে দেখতে সবাই তাকে ঘিরে ফেলে, ভয়ার্ত কণ্ঠে বলে, আমরা কী করব গ্রাউস? এখন আমরা কী করব?