কম কথা বলে মানুষটি বলল, তোমার কথা শুনলে বব লাস্কি খুব খুশি হবে মনে হয় না!
দাড়ি-গোঁফের জঙ্গল বলল, তোমার বব লাস্কি এখন আমাদের কাছে। একটা জঞ্জাল ছাড়া আর কিছু নয়! তাকে খুশি রাখার দায়িত্ব আমার না।
নীল চোখের মানুষটি বলল ঠিক আছে, তাহলে কাজ শুরু করে দেওয়া যাক।
দাড়ি-গোঁফের জঙ্গল মাথা চুলকে বলল, আমাদের সমস্যা হচ্ছে, এই মেয়ের সঙ্গে কথা বলা। আমাদের কথা বোঝে না। যখন ভয় পাওয়ার কথা, নয়, তখন ভয় পেয়ে বসে থাকে!
হ্যাঁ, ইউনিভার্সিটির মাস্টার আর ওই সাংবাদিক মেয়েটাকে ধরে এনে এখানে বেঁধে রাখলে আমাদের কথাবার্তা অনুবাদ করতে পারত।
মানুষগুলো তখনো জানে না, রাফি আর ঈশিতা ঠিক তখন চুপি চুপি তাদের কাছেই এসেছে।
পায়ের শব্দ শুনে রাফি আর ঈশিতা ঠিক তখন চুপি চুপি বা দিকের একটা ছোট করিডরে ঢুকে গেল। করিডর ধরে একজন নার্স তার জুতার শব্দ তুলে হেঁটে চলে গেল। দুজন তখন আবার বের হয়ে সতর্কভাবে হাঁটে। ঠিক কোথায় শারমিন আছে, তারা জানে না। ঠিক কীভাবে তাকে খুঁজে বের করতে হবে, কিংবা খুঁজে বের করলেও ঠিক কীভাবে তাকে মুক্ত করবে, সেটাও তারা জানে না। তাদের হাতে এখন একটা সত্যিকারের অস্ত্র আছে, সেটা দিয়ে কাউকে জিম্মি করে কিছু একটা করা যায় কি না, সেটাই তাদের লক্ষ্য।
করিডর ধরে হেঁটে তারা কোনো কিছু খুঁজে পেল না এবং ঠিক তখন একজন বিদেশি মেয়ের সঙ্গে দেখা হয়ে গেল। রাফির হাতে রিভলবার এবং দুজনের শরীরে রক্তের ছোপ, তাদের চেহারায় একটা বেপরোয়া ভাব, বিদেশি মেয়েটি হকচকিয়ে গেল। হয়তো আর্তচিৎকার করে উঠত, রাফি সেই সুযোগ দিল না, রিভলবারটা মাথায় ঠেকিয়ে বলল, খবরদার, টু শব্দ করবে না।
মেয়েটি ভয়ে ভয়ে বলল, আমি কিছু জানি না। আমি কিছু করিনি।
আমি জানি, তুমি কিছু করনি, কিন্তু তুমি কিছু জানো না, সে ব্যাপারে আমি এত নিশ্চিত নই। গণিতের সেই প্রডিজি মেয়েটা কোথায়?
গণিতের কোন মেয়েটা?
অসাধারণ প্রতিভাবান সেই মেয়েটা, যাকে তোমরা তুলে এনেছ। মস্তিষ্ক কেটেকুটে নেওয়ার চেষ্টা করছ।
বিদেশি মেয়েটি কাঁপা গলায় বলল, বিশ্বাস করো, আমি এ সম্পর্কে কিছুই জানি না।
তুমি কি বব লাস্কিকে চেনো?
চিনি।
ঠিক আছে, আমাদের তাহলে বব লাস্কির কাছে নিয়ে যাও। খবরদার, কোনো রকম হ্যাংকি-প্যাংকি করবে না।
করব না। কোনো রকম হ্যাংকি-প্যাংকি করব না। বিশ্বাস করো।
বিদেশি মেয়েটি কয়েক মিনিটে তাদের বব লাস্কির অফিসে নিয়ে গেল। রাফি লাথি দিয়ে অফিসের দরজাটি খুলে রিভলবার তুলে চিৎকার করে বলল, হাত ওপরে তোলো, বব লাস্কি।
বিশাল একটা টেবিলের সামনে বসে থাকা বব লাস্কি হতচকিত হয়ে তাদের দিকে তাকাল। তার চোখে অবিশ্বাস। রাফি চিৎকার করে বলল, হাত তোলো আহম্মক। না হলে এই মুহূর্তে আমি গুলি করব।
বব লাস্কি আহাম্মক নয়, তাই সে এবার হাত ওপরে তুলল। রাফির কণ্ঠস্বরের তীব্রতা সে টের পেয়েছে।
দুই হাত ওপরে তুলে বের হয়ে এসো।
বব লাস্কি দুই হাত ওপরে তুলে বের হয়ে এল। রাফির কাছাকাছি এসে বলল, ইয়াং ম্যান। আমরা নিশ্চয়ই কোনো এক ধরনের সমঝোতায় আসতে পারি।
কথার মাঝখানে প্রচণ্ড ধমক দিয়ে রাফি তাকে থামিয়ে দেয়, খবরদার, কথা বলবে না। খুন করে ফেলব আমি। শারমিনের কাছে নিয়ে যাও আমাদের। দশ সেকেন্ড সময় দিলাম আমি।
বব লাস্কি বলল, ঠিক আছে, নিয়ে যাচ্ছি আমি। কিন্তু দশ সেকেন্ডে তো সম্ভব নয়।
রাফি হুঙ্কার দিয়ে বলল, আমি কোনো কিছু পরোয়া করি না। দরকার হলে তুমি দৌড়াও। দৌড়াও! ডবল মার্চ!
বব লাস্কি আর কথা বলার সাহস করল না। লম্বা লম্বা পা ফেলে হাঁটতে শুরু করে। সে এখনো বুঝতে পারছে না, দাবার চালটি কেমন করে উল্টে গেল।
করিডর ধরে সোজা হেঁটে গিয়ে বব লাস্কি ডান দিকে ঢুকে গেল, সেখান
আমার বহর দিয়ে সিড়ি দিয়ে নেমে বাঁ দিকে একটা আলোকোজ্জ্বল ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে বলল, এইটা সেই ঘর।
শারমিন এখানে?
হ্যাঁ।
দরজা খোলো।
বব লাস্কি ইতস্তত করতে থাকে। রাফি হুঙ্কার দিয়ে বলল, আমি বলছি, দরজা খোলো।
বব লাস্কি দরজায় গোপন সংখ্যা প্রবেশ করানোর সঙ্গে সঙ্গে খুট করে দরজা খুলে যায়। রাফি লাথি দিয়ে দরজা খুলে বব লাস্কিকে ধাক্কা দিয়ে ভেতরে ঢুকিয়ে দেয়।
ঘরের ভেতর চারজন মানুষ মাথা ঘুরিয়ে তাকিয়ে হতবাক হয়ে গেল। ঘরের এক কোনায় একটা চেয়ার, সেখানে নানা রকম স্ট্র্যাপ দিয়ে শারমিনকে বেঁধে রাখা হয়েছে। তার মাথায় একটা হেলমেট, সেখান থেকে অসংখ্য তার বের হয়ে আসছে। ঈশিতা ও রাফিকে দেখে শারমিন ড়ুকরে কেঁদে উঠে বলল, ঈশিতা আপু! আমাকে এরা মেরে ফেলবে!
ঈশিতা বলল, না শারমিন, তোমাকে কেউ মারতে পারবে না। আমরা তোমাকে ছুটিয়ে নিতে এসেছি। ঈশিতা শারমিনের কাছে গিয়ে তার বাঁধনগুলো খুলতে থাকে।
রাফি বব লাস্কিকে ধাক্কা দিয়ে অন্য মানুষগুলোর দিকে ঠেলে দিয়ে বলল, খবরদার, কেউ নড়বে না।
নীল চোখের মানুষটি বলল, যদি নড়ি, তাহলে কী করবে?
গুলি করে দেব।
নীল মানুষটি শব্দ করে হেসে বলল, তুমি আগে কখনো কাউকে গুলি করেছ?
রাফি হিংস্র গলায় বলল, আমি এখন তোমার সঙ্গে সেটা নিয়ে কথা বলতে চাই না।
নীল চোখের মানুষটি হেসে বলল, অবশ্যই তুমি সেটা নিয়ে কথা বলতে চাইবে না। কারণ, সেটা নিয়ে কথা বললে দেখা যাবে, তুমি মানুষ। তো দূরে থাকুক, তুমি হয়তো কখনো একটা মশাও মারনি! রক্ত দেখলেই হয়তো তোমার নার্ভাস ব্রেক ডাউন হয়ে যায়! কাজেই তুমি হয়তো কোনো না কোনোভাবে একটা রিভলবার জোগাড় করে ফেলেছ, কিন্তু সেখানে ট্রিগার টানাটা তোমার জন্য এত সোজা নয়।