গুড।
কী দিয়ে অ্যাটাক করবে?
এই ট্রে দুটি মোটামুটি ভারী। একসঙ্গে নিয়ে মাথায় বাড়ি দিতে পারি।
চিনামাটির প্লেট, পিরিচ, থালা এগুলোও ভেঙে টুকরো টুকরো একটা ব্যাগে ভরে মাথায় বাড়ি দিতে পারি–
ব্যাগ? রাফি বলল, ব্যাগ কোথায় পাবে?
আমার এই ওড়নাটা দিয়ে বেঁধে নিতে পারি।
ভেরি গুড। তাহলে কাজ শুরু করে দিই।
হয়তো টেলিভিশনে আমাদের দেখছে।
বাথরুমে নিয়ে যাই, সেখানে নিশ্চয়ই ক্যামেরা নেই।
রাফি বলল, এত নিশ্চিত হয়ো না—কিন্তু কিছু করার নেই। চলো, কাজ শুরু করি।
কিছুক্ষণের মধ্যেই তারা প্রস্তুত হয়ে নিল। প্লেট, হাফ প্লেট, পিরিচ, কাপ, গ্লাস মিলে অনেক কিছু ছিল। সেগুলো ভেঙে ওড়নায় বেঁধে নেওয়ার পর সেটা যথেষ্ট ভারী একটা অস্ত্র হয়ে দাঁড়াল, এটি দিয়ে ঠিকভাবে মারতে পারলে মানুষটিকে অচেতন করা কঠিন হওয়ার কথা নয়।
রাফি আর ঈশিতা এবার দরজার কাছাকাছি দাঁড়িয়ে থাকে। দরজা খোলার পর তারা দরজার আড়াল থেকে বের হয়ে আসবে, প্রথমে রাফি মারবে তার ঘাড়ে, তারপর ঈশিতা। ঘাড়ে ঠিক করে মারলে যে মানুষ অচেতন হয়ে যায়, সেটা রাফি আজ সকালেই দেখেছে। তারা ফিফথ ডিগ্রি ব্ল্যাক বেল্ট নয়, কিন্তু যখন কেউ একেবারে মৃত্যুর মুখোমুখি এসে দাঁড়ায়, তখন সে হয়তো ব্ল্যাক বেল্ট থেকেও ভয়ংকর হয়ে যেতে পারে।
রাফি ঈশিতার পিঠে হাত রেখে বলল, ঈশিতা।
বলো।
কিছুক্ষণের মধ্যে এখানে কী ঘটবে, একটু পর কী হবে, আমরা জানি। আমি তোমাকে আবার কিছু বলার সুযোগ পাব কি না, সেটাও জানি। তাই তোমাকে এখন একটা কথা বলি।
বলো।
তুমি খুব চমৎকার একটা মেয়ে।
থ্যাংকু।
আমি যদি তোমার মতো একটা মেয়ের কাছাকাছি বাকি জীবনটা কাটাতে পারতাম, তাহলে আর কিছু চাইতাম না।
ঈশিতা একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলল, যদি আমরা দুজনেই এখন মরে যাই, তাহলে এক অর্থে তোমার কথাটা সত্যি হবে।
রাফি হেসে ফেলল। বলল, কিন্তু আমি সেই অর্থে এটা সত্যি করতে চাই না। আমি চাই সত্যিকার অর্থে—
ঠিক তখন দরজায় খুট করে শব্দ হলো, তারপর চাবি দিয়ে দরজা খুলে মানুষটি ভেতরে ঢুকল। সে কিছু বোঝার আগেই রাফি আর ঈশিতা তার ওপর চিতা বাঘের ক্ষীপ্রতা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। মানুষটি কিছু বোঝার আগেই কাটা কলাগাছের মতো মেঝেতে পড়ে যায়।
দরজাটা বন্ধ করে তারা মানুষটিকে দেখে, সত্যি সত্যি অচেতন হয়ে আছে। রাফি তার পকেটে হাত ঢুকিয়ে ছোট একটা রিভলবার পেয়ে যায়। সে কখনো রিভলবার ব্যবহার করেনি—ট্রিগার টানলেই গুলি হয়, নাকি আগে অন্য কিছু করতে হয়, সে জানে না। গল্প-উপন্যাসে সেফটি ক্যাচের কথা পড়েছে। সেটি কী, কে জানে!
রাফি ঈশিতাকে বলল, চলো, বের হই।
চলো। রিভলবারটা আছে তো?
রাফি মাথা নাড়ল, আছে। তুমি?
আমার হাতে তোমার ওড়না দিয়ে বানানো মুগুরটা থাকুক। জিনিসটা যথেষ্ট কার্যকর, সেটা তো পরীক্ষা করে দেখলাম।
হ্যাঁ, সেটা দেখেছি। রাফি হাসার চেষ্টা করল কিন্তু হাসিটি খুব কাজে এল না।
দুজনে বের হয়ে আসে। বাইরে থেকে ঘরটিতে তালা মেরে তারা করিডর ধরে হাঁটতে থাকে। তাদের শ্বাপদের মতো তীক্ষ্ণ দৃষ্টি, সমস্ত শরীর ইস্পাতের মতো টান টান হয়ে আছে উত্তেজনায়।
১১. শারমিনকে একটা চেয়ারে উঁচু করে
শারমিনকে একটা চেয়ারে উঁচু করে বসানো আছে। তার হাত-পা-শরীর বেল্ট দিয়ে বাঁধা। মাথায় একটা হেলমেট পরানো আছে, সেখান থেকে অসংখ্য তার বের হয়ে এসেছে। ঘর বোঝাই যন্ত্রপাতি, সেখান থেকে একটা চাপা গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। শারমিনের সামনে একটা বড় মনিটর, সেখানে অসংখ্য নকশা এবং সংখ্যা খেলা করছে।
শারমিনকে সকাল থেকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। তার মস্তিষ্কের ত্রিমাত্রিক একটা ছবি নেওয়া হয়েছে অত্যন্ত নিখুঁতভাবে তার মস্তিষ্কের প্রায় প্রতিটি কোষ, প্রতিটি সিনাঙ্গের তথ্য নেওয়া হয়েছে। সে যখন মস্তিষ্ক ব্যবহার করে, তখন সেখানে কী পরিমাণ অক্সিজেন যায়, মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশে কী পরিমাণ তাপমাত্রার জন্ম নেয়, এইমাত্র সেই পরীক্ষাটি শেষ করা হয়েছে। দাড়ি-গোঁফের জঙ্গল মানুষটি বলল, আমি যে রকম আশা। করেছিলাম, ঠিক তা-ই। মেয়েটার মস্তিষ্কে অস্বাভাবিক অক্সিজেন খরচ হয়। সাধারণ মানুষের মস্তিষ্কে এ রকম অক্সিজেন খরচ হলে সেটা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কথা।
নীল চোখের মানুষটি বলল, দেখতেই পাচ্ছ, এটা সাধারণ মস্তিষ্ক নয়। এটা যে হওয়া সম্ভব, আমি নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস করতাম না।
কম কথা বলে মানুষটি ভারী গলায় বলল, আমাদের প্রতি নিশ্চয়ই ঈশ্বরের এক ধরনের করুণা আছে। তা না হলে আমরা কেমন করে এই মেয়েটিকে পেলাম। অন্য কেউও তো একে পেতে পারত!
দাড়ি-গোঁফের জঙ্গল মানুষটি বলল, এই মেয়েটির শরীরের প্রত্যেকটা কোষ আমরা ক্লোন করার জন্য মিলিয়ন ডলারে বিক্রি করতে পারি।
হ্যাঁ। মেয়েটার মস্তিষ্কের টিস্যু বিক্রি করতে পারি প্রতিগ্রাম বিলিয়ন। ডলারে!
আর আমরা স্ক্যান করে যেটা পেয়েছি, সেটা?
সেটা আমরা কাউকে দেব না।
নীল চোখের মানুষটি বলল, কাউকে না?
না। এনডেভারকেও না?
এনডেভারকে দিতে হবে, আমরা কোথায় সেই চুক্তি করেছি? আমাদের চুক্তি সাধারণ মানুষের মস্তিষ্কে ইমপ্ল্যান্ট বসিয়ে ইন্টারফেস তৈরি করার—এ রকম একটি জিনিয়াসের মস্তিষ্কে এনালাইসিসের জন্য কোনো চুক্তি হয়নি। এনডেভার যদি চায়, তাহলে তাদের নতুন করে আমাদের সাথে চুক্তি করতে হবে।