রাফি বলল, তার আগে আমি কি তোমাকে এক-দুটি প্রশ্ন করতে পারি?
কী প্রশ্ন?
আমাদের এভাবে ধরে আনার অধিকার তোমাকে কে দিয়েছে?
বব লাস্কি শব্দ করে হেসে ওঠে, তোমার ধারণা, আমার সে জন্য কারও কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে?
রাফি কঠিন মুখে জিজ্ঞেস করল, আমাদের তোমরা কী জন্য ধরে এনেছ? এ বব লাস্কি বলল, বোকার মতো কথা বলো না। তোমরা খুব ভালো করে জানো, তোমাদের কী জন্য ধরে এনেছি। ধানাই-পানাই না করে সোজাসুজি কাজের কথায় চলে এসো।
ঈশিতা জিজ্ঞেস করল, কাজের কথাটি কী?
বব লাস্কি হাত তুলে শারমিনকে দেখিয়ে বলল, এই মেয়েটাই কি সেই মেয়ে? শারমিন?
চুল ছোট করে ছাঁটা সাফারি কোট পরা মধ্যবয়স্ক মানুষটি বলল, হ্যাঁ, বস। এইটাই সেই মেয়ে। আমি জানি।
বব লাস্কি বলল, তুমি কেমন করে জানো?
আমি যখন তাকে ধরে আনছিলাম, ইউনিভার্সিটির কিছু বখা ছেলে ছিনিয়ে নিল।
বব লাস্কি চোখ লাল করে বলল, তোমার বলতে লজ্জা করে না যে ইউনিভার্সিটির কিছু বখা ছেলে তোমার হাত থেকে বাচ্চা একটা মেয়েকে ছিনিয়ে নিল? তুমি এই ঘর থেকে বের হয়ে যাও। আর আমি না ডাকলে তুমি কখনো এই ঘরে ঢুকবে না।
সাফারি কোট পরা চুল ছোট করে ছাঁটা মানুষটির মুখ অপমানে কালো হয়ে উঠল। ঈশিতা মানুষটির দিকে তাকিয়ে বলল, আশা করছি, এই ধরনের অপমান সহ্য করার জন্য এরা তোমাকে যথেষ্ট টাকা দেয়।
মানুষটা কোনো উত্তর না দিয়ে গটগট করে বের হয়ে গেল। বব লাস্কি গজগজ করে বলল, এই পোড়া দেশে বিশ্বাসযোগ্য কাজের মানুষের এত অভাব!
রাফি বলল, তোমার তো কাজের মানুষ দরকার নেই, তোমার দরকার ঘাঘু ক্রিমিনাল, নিজের দেশ থেকে নিয়ে এলে না কেন?
বব লাস্কি রক্তচক্ষু করে রাফির দিকে তাকাল, কিছু একটা বলতে গিয়ে থেমে গেল। শারমিন রাফির হাত ধরে ফিসফিস করে জানতে চাইল, এই মানুষটা এখন কী নিয়ে কথা বলছে?
তোমাকে নিয়ে। জানতে চাইছে, তুমি কি সেই মেয়েটা নাকি, যে সবকিছু করতে পারে।
কেন জানতে চাইছে?
এখনো বুঝতে পারছি না।
বব লাস্কি তার সামনে রাখা ছোট খেলনার মতো কম্পিউটারটির কি-বোর্ডে চাপ দিয়ে সেখানে নিচু গলায় কিছু একটা বলল এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘরের ভেতর বেশ কয়েকজন মানুষ এসে ঢুকল। ঈশিতা মানুষগুলোকে চিনতে পারে। গতকাল তাদের সবার সঙ্গে দেখা হয়েছে। শারমিন একটু অবাক হয়ে বিদেশি মানুষগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকে। সে আগে কখনো মানুষ দেখেনি। মানুষগুলো কালো টেবিলের দুই পাশে এসে বসে। বব লাস্কি তাদের দিকে তাকিয়ে বলল, তোমরা যে মেয়েটিকে খুঁজছিলে, এটি সেই মেয়ে।
দাড়ি-গোঁফের জঙ্গল মানুষটি বলল, দেখে মনে হচ্ছে, একজন ছেলে।
বব লাস্কি বলল, কেউ যেন চিনতে না পারে, সে জন্য তাকে এভাবে সাজিয়েছে।
হাউ ইন্টারেস্টিং!
নীল চোখের মানুষটি বলল, আমরা মেয়েটিকে একটু পরীক্ষা করতে চাই।
করো।
মানুষটা শারমিনের দিকে তাকিয়ে ইংরেজিতে বলল, তুমি কি ইংরেজি জানো?
রাফি শারমিনের হয়ে বলল, না, জানে না।
নীল চোখের মানুষটি তার ল্যাপটপের ক্যালকুলেটরে কিছু একটা হিসাব করে বলল, তুমি তাকে জিজ্ঞেস করো, বারো মিলিয়ন আট শ নয় হাজার দুই শ একচল্লিশের বর্গমূল কত?
শারমিন জিজ্ঞেস করল, স্যার, কী করতে বলেছে?
একটা সংখ্যা বলে তার বর্গমূল জানতে চাইছে।
সংখ্যাটা বুঝতে পেরেছি। বর্গমূল মানে কী?
কোনো সংখ্যাকে সেই সংখ্যা দিয়ে গুণ করলে এটা পাবে।
তিন হাজার পাঁচ শ উনআশি।
রাফি সংখ্যাটি বলল এবং সব বিদেশি মানুষ তখন তাদের জায়গায় নড়েচড়ে বসল। দাড়ি-গোঁফের জঙ্গল মানুষটি ল্যাপটপে কিছু একটা লিখে সেদিকে তাকিয়ে থেকে শারমিনকে জিজ্ঞেস করল, চৌত্রিশ হাজার সাত শ একানব্বইকে ছাপ্পান্ন হাজার নয় শ বত্রিশ দিয়ে গুণ করলে কত হয়?
শারমিন বলল, এক বিলিয়ন, নয় শ আশি মিলিয়ন সাত শ একুশ হাজার দুই শ বারো।
দাড়ি-গোঁফের জঙ্গল মানুষটিব লাস্কির দিকে তাকিয়ে বলল, এটাই সেই মেয়ে। আমাদের কোনো সন্দেহ নেই।
বব লাস্কি জানতে চাইল, এখন কী করতে চাও?
অনেক কিছু। প্রথমে ওর ব্রেনের থ্রি ডি একটা স্ক্যান করতে চাই। তারপর ইমেজিং। সবার শেষে ইমপ্ল্যান্ট বসিয়ে ইন্টারফেসিং।
গুড। শুরু করে দাও।
মানুষগুলো উঠে দাঁড়িয়ে বলল, আমরা তাহলে মেয়েটিকে নিয়ে যাই।
যাও।
রাফি চমকে উঠে বলল, কোথায় নিয়ে যাবে?
নীল চোখের মানুষটি বলল, আমরা তোমার কথার উত্তর দিতে বাধ্য নই। আমাদের ঝামেলা কোরো না।
রাফি শারমিনকে শক্ত করে ধরে রেখে বলল, না। আমি শারমিনকে নিতে দেব না।
সরে যাও।
রাফি হিংস্র স্বরে বলল, তোমরা সরে যাও।
মানুষটা একপাশে এসে শারমিনের হাত ধরে বলল, ছেড়ে দাও।
রাফি বুকে ধাক্কা দিয়ে মানুষটিকে সরিয়ে দিয়ে বলল, তুমি ছেড়ে দাও।
রাফির ধাক্কা খেয়ে মানুষটি পড়তে পড়তে কোনোভাবে নিজেকে সামলে নিয়ে অবাক হয়ে রাফির দিকে তাকাল, তারপর হিস হিস করে বলল, তুমি অনুমানও করতে পারছ না, তুমি কোথায় আছ। তোমার একটা দ্রুত যন্ত্রণাহীন মৃত্যুর ব্যবস্থা করতে পারতাম, এখন মনে হচ্ছে, তার প্রয়োজন। নেই।
বব লাস্কি উঠে দাঁড়িয়ে বলল, বাচ্চাদের মতো হাতাহাতি করার কোনো প্রয়োজন নেই। সরে দাঁড়াও। আমাদের ফাইভ ডিগ্রি ব্ল্যাক বেল্ট তোমাদের ব্যবস্থা করে দিচ্ছে। সে একটু ইঙ্গিত করতেই কুচকুচে কালো মানুষটি রাফির দিকে এগিয়ে আসে এবং কিছু বোঝার আগেই রাফি অনুভব করল, কেউ একজন তার ঘাড়ে আঘাত করেছে, মুহূর্তে চারদিক অন্ধকার হয়ে যায়। ঈশিতা রাফিকে ধরার চেষ্টা করল, ভালো করে ধরতে পারল না। রাফি টেবিলের কোনায় ধাক্কা খেয়ে নিচে পড়ে গেল। ঈশিতা চিলের মতো চিৎকার করে রাফিকে ধরল, মাথা কেটে রক্ত বের হচ্ছে। প্রথমে হাত দিয়ে, তারপর নিজের কাপড় দিয়ে রক্ত থামানোর চেষ্টা করল।