হ্যাঁ, দেখেছি। থ্যাংকু।
যখন যেটা দরকার হয়, বলবেন স্যার।
হ্যাঁ, বলব।
আপনি তাহলে শারমিনকে দেখবেন, স্যার।
হ্যাঁ, দেখব।
আমি তাহলে যাই?
আমাকে আরেকটু সাহায্য করতে পারবে?
কী সাহায্য, স্যার?
দশ-বারো বছরের ছেলের জন্য একটা প্যান্ট আর শার্ট কিনে দিতে পারবে?
হান্নান বলল, ঠিক আছে, স্যার কম
হান্নান যখন চলে যাচ্ছিল, তখন রাফি তাকে ডাকল। বলল, হান্নান, আরও একটা জিনিস।
কী জিনিস?
ওই লোকগুলোকে দেখে মনে হলো, তাদের কিছু একটা হারিয়ে গেছে।
হান্নানের মুখে আবার হাসি ফুটে উঠল। বলল, আপনাদের ওই সব বিষয় নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। এগুলো আমাদের ব্যাপার।
তোমাদের ব্যাপার? জি, স্যার। আজকে বিশাল বিজনেস হলো। থ্যাংকু স্যার।
রাফি কী বলবে বুঝতে না পেরে বলল, ইউ আর ওয়েলকাম। কথাটি বলে তার নিজেকে কেমন জানি বোকা বোকা মনে হতে থাকে।
হান্নান চলে যাওয়ার পর শারমিন রাফির কাছে এসে বলল, স্যার, আমার খুব ভয় করছে।
রাফি বলল, তোমার ভয় পাওয়া খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু এখন আর ভয় নেই।
কেন ভয় নেই, স্যার? ওরা যদি আবার আসে?
আসলে আসবে। আমি আছি না?
স্যার।
বলো, শারমিন।
ওই লোক দুটি খুব খারাপ।
তুমি কেমন করে জানো?
আমাকে বলেছে, আমাকে নাকি কেটে আমার ব্রেন নিয়ে যাবে। রাফি কিছু বলল না। শারমিন বলল, কেন আমার ব্রেন নিয়ে যেতে চায়? কারা আমার ব্রেন নিয়ে যেতে চায়?
আমি জানি না, শারমিন।
কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে শারমিন নিচু গলায় বলল, স্যার।
বলো। আমার খুব ভয় করছে, স্যার।
রাফির শারমিনের জন্য খুব মায়া হলো। সে তার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল, শোনো, শারমিন। আমি তোমার কাছে আছি। কেউ তোমার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।
সত্যি, স্যার?
হ্যাঁ, সত্যি।
এই প্রথমবার শারমিনের মুখে একটু হাসি ফুটে উঠল। মেয়েটি রাফির কথা বিশ্বাস করেছে।
ইউনিভার্সিটির গেটে সাদা পাজেরোটি নিয়ে মানুষ দুটি অপেক্ষা করছিল। রাফি তাদের সামনে দিয়েই শারমিনকে নিয়ে বের হয়ে এল, মানুষ দুটি টেরও পেল না। টের পাওয়ার কথাও না। কারণ রাফি শারমিনের চুল ছোট করে ছেলেদের মতো করে কাটিয়েছে। একটা হাফপ্যান্ট আর শার্ট পরিয়েছে, পায়ে সাদা টেনিস শু—তাকে দেখাচ্ছে ঠিক একজন বাচ্চা ছেলের মতো। রাফি সরাসরি রেলস্টেশনে চলে এসে ট্রেনের টিকিট কিনে ট্রেনে উঠেছে। আজ রাতেই সে ঢাকা পৌঁছাতে চায়। ঈশিতার ফোন পায়নি সত্যি, কিন্তু মাজু বাঙালি নামের একজন মানুষ তাকে ফোন করে বলেছে, সে তার সঙ্গে সামনাসামনি কথা বলতে চায়। রাফি তাই ঢাকা রওনা দিয়েছে। শারমিনকে রেখে যেতে সাহস পায়নি—তার বাবাও খুব ভয় পেয়েছে। নিজের কাছে রাখার চেয়ে শারমিনকে রাফির কাছে রাখাই তার বেশি নিরাপদ মনে হয়েছে। শারমিন তাই রাফির সঙ্গে ঢাকা যাচ্ছে—তার নাম অবশ্যি এখন শারমিন নয়, আপাতত তাকে শামীম বলে ডাকা হচ্ছে।
গভীর রাতে শারমিন যখন রাফির ঘাড়ে মাথা রেখে ট্রেনের দুলুনিতে ঘুমিয়ে পড়েছে, ঠিক তখন এনডেভারের ভেতর বব লাস্কি সাফারি কোট পরা মানুষ দুজনের সঙ্গে কথা বলছে। মানুষ দুজন হেলিকপ্টারে করে রাতের মধ্যেই ফিরে এসেছে। বব লাস্কি তাদের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে থেকে বলল, কী বললে? মেয়েটাকে তোমাদের হাত থেকে ছিনিয়ে নিল?
মধ্য বয়স্ক মানুষটি মাথা নাড়ে। হ্যাঁ, শুধু মেয়েটাকে না, আমার রিভলবারটাও।
তোমার রিভলবারটাও?
হ্যাঁ। ছাত্রগুলো ভয়ংকর বদ। কীভাবে খবর পেল, বুঝতে পারলাম।
বব লাস্কি হুঙ্কার দিয়ে বলল, কিন্তু তোমরা মেয়েটাকে না নিয়ে ফিরে এসেছে কেন?
মেয়েটা এখন সেখানে নেই।
তাহলে এখন কোথায়?
আমরা খোঁজ নিচ্ছি, পেয়ে যাব।
কেমন করে পাবে?
রাফি নামের ছেলেটাও নাই। নিশ্চয়ই দুজন একসঙ্গে আছে।
তোমাকে আমি চব্বিশ ঘণ্টা সময় দিলাম।
চব্বিশ ঘণ্টা অনেক সময়। শুধু একটা ব্যাপার—
কী ব্যাপার?
এই চব্বিশ ঘণ্টা ঈশিতাকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। রাফিকে ধরার জন্য তার সাহায্য লাগতে পারে।
ঠিক আছে। কিন্তু মনে রেখো, চব্বিশ ঘণ্টার এক মিনিট বেশি নয়।
ঈশিতা চব্বিশ ঘণ্টার জন্য আয়ু পেয়ে গেল। একটা ছোট ঘরে মেঝেতে হাঁটু মুড়ে বসে সে যখন রাত কাটাচ্ছিল, সে তার কিছুই জানতে পারল না।
০৯. বাসাটা খুঁজে বের করে
বাসাটা খুঁজে বের করে বেল টেপার সঙ্গে সঙ্গে দরজাটা খুলে গেল, মনে হলো দরজার ওপাশেই যেন মাজু বাঙালি রাফির জন্য দাঁড়িয়ে ছিল। রাফি শারমিনের হাত ধরে ভেতরে ঢোকে, ছোটখাটো একটা অ্যাপার্টমেন্ট, এখানে শুধু পুরুষ মানুষ থাকে, সেটি একনজর তাকালেই বোঝা যায়।
মাজু বাঙালি বলল, আমার নাম মাজহার। আমি যখন কবিতা লিখি, তখন নাম লিখি মাজু বাঙালি।
ইন্টারেস্টিং নাম। আমি রাফি আহমেদ। আমার সঙ্গে যে বাচ্চা ছেলেটা আছে, তার নাম হচ্ছে শামীম।
আহা, বেচারা! সারা রাত জার্নি করে কাহিল হয়ে গেছে। রাফি মাজহারের দিকে তাকাল, ঈশিতার ব্যাপার নিয়ে কথা বলার জন্য এসেছে, সে নিশ্চয়ই সবকিছু জানে। তাকে নিশ্চয়ই বিশ্বাস করা যায়। তাকে শারমিনের পরিচয়টা দিয়ে রাখা ভালো। রাফি বলল, ঈশিতা কি আপনাকে শারমিন নামের একটা মেয়ের কথা বলেছিল?
হ্যাঁ, বলেছিল। মানুষ কম্পিউটার। অসাধারণ জিনিয়াস।
হ্যাঁ। আমাদের শামীম আসলে সেই অসাধারণ জিনিয়াস মানুষ কম্পিউটার শারমিন। তার ওপর হামলা হচ্ছে, তাই তাকে ছেলে সাজিয়ে এনেছি। সুন্দর লম্বা চুল ছিল, আমি কেটে কেটে ছোট করেছি। চুল কাটা এত কঠিন, বুঝতে পারিনি।