ভোটকা হান্নানকে এবার একটু দুর্বল দেখাল, মাথা চুলকে বলল, আমি ভাবলাম গরিব ফ্যামিলি সাহায্য করি। আপনি দেখি উল্টা কথা বলছেন।
এটা উল্টা কথা না, এটা সোজা কথা। ছোট বাচ্চাকে ছোট বাচ্চাদের মতো থাকতে দিতে হয়। টেলিভিশনে টানাটানি করতে হয় না।
কিন্তু স্যার অলরেডি মোবাইল করে দিয়েছি।
আবার মোবাইল করে দাও। যাও।
ভোটকা হান্নানকে কেমন জানি মনমরা দেখাল। সে তার গাল চুলকাতে চুলকাতে বের হয়ে গেল।
০৪. অ্যাসিসট্যান্ট এডিটর
অ্যাসিসট্যান্ট এডিটর বাকের ঈশিতাকে বলল, এই যে নাও, এই চিঠিগুলো তোমার জন্য।
ঈশিতা বলল, থাক, আমি এমনিতেই বেশ আছি, তোমার চিঠি না হলেও চলবে!
বাকের প্রত্যেক দিন চিঠিগুলো থেকে উদ্ভট চিঠিগুলো আলাদা করে ঈশিতাকে পড়তে দেয়। সারা দেশ থেকে বিচিত্র বিচিত্র চিঠি আসে, কারও জিনের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও গ্রামে মানুষখেকো বিচিত্র প্রাণী, কেউ কবর দেওয়ার পর জীবন্ত হয়ে উঠে এসেছে, কারও গ্রামে দুই মাথাওয়ালা বাছুর জন্ম দিয়েছে ইত্যাদি ইত্যাদি। বাকের বলল, পড়ে দেখো। আজকের চিঠিতে তুমি পাবে মাত্র দশ হাজার টাকার মনুষ্যরূপী কম্পিউটার।
মনুষ্যরূপী কম্পিউটার? এবার ঈশিতা একটু কৌতূহল দেখাল, কোথায়, দেখি?
বাকের একটা খাম ঈশিতার দিকে এগিয়ে দিল। ঈশিতা চিঠি খুলে পড়ে। হেলাল নামের একজন লিখেছে—তাকে মাত্র দশ হাজার টাকা দিলেই সে খবরের কাগজে মানুষ কম্পিউটারের সঙ্গে ইন্টারভিউয়ের ব্যবস্থা করে দেবে। এই মানুষ কম্পিউটারের বিস্তৃত বর্ণনা দেওয়া আছে, সে বার বছরের বালিকা, চোখের পলকে যেকোনো সংখ্যার সঙ্গে অন্য যেকোনো সংখ্যা গুণ করে ফেলতে পারে। চিঠির নিচে একটা মোবাইল ফোনের নম্বর দেওয়া আছে।
বাকের জিজ্ঞেস করল, কী? মাত্র দশ হাজার টাকায় মানুষ কম্পিউটার কিনতে চাও? কোন অপারেটিং সিস্টেম দেবে বলেছে?
ঈশিতা হাসল। বলল, না হার্ড ড্রাইভের সাইজ কিংবা অপারেটিং সিস্টেম কিছুই দেওয়া নেই। তার পরও হয়তো আমি ফোন করতাম, কিন্তু এই দশ লাইনের চিঠিতে প্রায় দুই ডজন বানান ভুল। যে চিড়িয়া দন্ত্যস দিয়ে মানুষ বানান করে তাকে সিরিয়াসলি নেওয়া ঠিক না।
তারপরও ঈশিতা হেলাল নামের মানুষটির টেলিফোন নম্বরটা টুকে রাখল। কিছুদিন আগে এনডেভারের সঙ্গে তার সেই অভিজ্ঞতার পর থেকে যে কয়েকটা বিষয় নিয়ে তার কৌতূহল হয়েছে, তার একটা হচ্ছে নিউরাল নেটওয়ার্ক। বিষয়টা নিয়ে সে কিছুই জানত না। গত কিছুদিন থেকে সে পড়াশোনা করার চেষ্টা করছে। সে জার্নালিজমের ছাত্রী। বিজ্ঞান, গণিত, কম্পিউটার—এসব খুঁটিনাটি বিষয় ভালো বোঝে না। কী পড়াশোনা করবে, বুঝতে পারছে না। তাই ইন্টারনেট থেকে কিছু জিনিসপত্র ডাউনলোড করে পড়ার চেষ্টা করছে। ইন্টারনেটের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, সে ঠিক যে বিষয়টা জানতে চায় সেটা ছাড়া সেখানে অন্য সবকিছু আছে। যদি ঠিক সেই বিষয়টা পেয়েও যায়, তাহলে সেটা হয় এমন দুর্বোধ্যভাবে লেখা আছে, যা পড়ে মাথামুণ্ডু কিছু বোেঝার উপায় নেই, কিংবা হাস্যকর ছেলেমানুষিভাবে লেখা যে সেটা পড়ে পুরো বিষয়টা সম্পর্কে একটা ভুল ধারণা হয়ে যায়। তার প্রয়োজন একজন মানুষের যে এটি সম্পর্কে জানে এবং যে তাকে একটু সময় দেবে। ঈশিতার বয়স বেশি না, সেজেগুজে থাকলে তাকে মনে হয় বেশ ভালোই দেখায়, যদিও সে কখনোই সেজেগুজে থাকে না। কাজেই যাদের একটু সময় দেওয়া দরকার, দেখা যায় তারা প্রয়োজনের চেয়ে বেশি সময় দিচ্ছে এবং সময়টা দিচ্ছে ভুল জায়গায়!
ঈশিতা যদিও বলেছিল, দন্ত্যস দিয়ে মানুষ বানান করা হেলাল নামের সেই মানুষটিকে সিরিয়াসলি নেওয়া ঠিক না। তার পরও বিকেলের দিকে সে তাকে ফোন করল। যে ফোন ধরল, তার গলার স্বর আনুনাসিক, মনে হলো মানুষটির সর্দি হয়েছে। ঈশিতা জিজ্ঞেস করল, আমি কি হেলাল সাহেবের সঙ্গে কথা বলছি?
জে। কথা বলছি।
আমরা আপনার একটা চিঠি পেয়েছি। আপনি বলেছেন আপনি একজন মানুষ কম্পিউটারকে চেনেন, আপনাকে দশ হাজার টাকা দিলে আপনি তার সঙ্গে ইন্টারভিউ করার ব্যবস্থা করে দেবেন।
জি বলেছিলাম। কিন্তু—
কিন্তু কী? একটা সমস্যা হয়েছে।
কী সমস্যা?
সেটা শুনে লাভ নাই। আপনি বুঝবেন না। সোজা কথায় দশ হাজার টাকায় হবে না। মেয়েটার বাপ বেঁকে বসেছে।
ঈশিতা খুব মিষ্টি করে বলল, আসলে আমি কিন্তু একবারও বলিনি যে আমরা টাকা দিয়ে এই খবরটা পেতে চাচ্ছি। নীতিগতভাবে আমরা টাকা দিয়ে খবর কিনি না। মেয়েটার বাবা যদি রাজি না থাকেন তাহলে তো কিছু করার নেই।
আসলে মেয়ের বাপ মহা ধুরন্ধর।
ঈশিতা হঠাৎ করে প্রশ্ন করল, আপনি কী করেন?
আমি? আমি স্টুডেন্ট। ইউনিভার্সিটিতে পড়ি। কেন?
না না, এমনি জানতে চাইছি। কোন ইউনিভার্সিটিতে পড়েন?
ছেলেটি ইউনিভার্সিটির নাম বলল, মনে হলো একটু অহংকারের সঙ্গেই। মফস্বল শহরের ছোট ইউনিভার্সিটি, সেটা নিয়ে এই হাবাগোবা ছেলেটির এত অহংকার কেন কে জানে। ঈশিতা তার সাংবাদিকসুলভ কায়দায় শেষ চেষ্টা করল। সে জানে রথী মহারথী থেকে শুরু করে খুব সাধারণ মানুষ, সবারই পত্রিকায় ছবি ওঠানোর শখ থাকে। তাই সে বলল, আমরা টাকা দিয়ে কোনো খবর কিনতে পারব না, কিন্তু আপনি যদি এমনি আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেন রিপোর্টিং করার সময় আপনার ছবি রেফারেন্স দিতে পারি।