রাশেদ মাথা নাড়লেন, বললেন, মোস্ট ইন্টারেস্টিং!
রাফি বলল, আমি লেখাপড়ার কথা জিজ্ঞেস করলাম। ওর বাবা বলল, শারমিন লেখাপড়া করতে পারে না। কথা শুনে মনে হলো ডিসলেক্সিয়া।
সুহানা জিজ্ঞেস করল, ডিসলেক্সিয়া কী?
রাফি ইতস্তত করে বলল, এক ধরনের লারনিং ডিজঅর্ডার। কাগজের লেখা মনে হয় উল্টে গেছে।
প্রফেসর হাসান মাথা নাড়লেন, বললেন, হ্যাঁ। আসলে আমরা যে লেখাপড়া করি, এটা কিন্তু খুবই নতুন একটা ব্যাপার—হয়তো মাত্র কয়েক শ বছরের ব্যাপার। আদিম মানুষ লেখাপড়া করত না। কাজেই বলতে পারো আমাদের অনেকের ব্রেন সেটার জন্য রেডি হয়নি—সেটা হচ্ছে ডিসলেক্সিয়া। আমরা যে রকম লেখা পড়তে পারি, অর্থাৎ আমাদের ব্রেন যেভাবে একটা গ্রাফিক সিম্বলকে ইন্টারপ্রেট করতে পারে, ডিসলেক্টিক মানুষেরা পারে না।
সুহানা জানতে চাইল, এর চিকিৎসা নেই স্যার?
ঠিক চিকিৎসা নেই, তবে এটাকে মেনে নিয়ে মানুষজন অন্যভাবে লিখতে-পড়তে শেখে। এর সঙ্গে আইকিউয়ের কোনো সম্পর্ক নেই। অনেক স্মার্ট মানুষ আছে, যাদের ডিসলেক্সিয়া। আমার ধারণা, বাদশাহ আকবরের ডিসলেক্সিয়া ছিল!
কেন স্যার?
আকবর খুব স্মার্ট মানুষ ছিল, কিন্তু লেখাপড়া শেখেনি! মনে হয়, শিখতে পারেনি ডিসলেক্সিয়ার কারণে।
রাফি জিজ্ঞেস করল, ডিসলেক্সিয়া হলে কীভাবে লেখাপড়া করে?
আমি ঠিক জানি না। অনেক দিন আগে টেলিভিশনে একটা প্রোগ্রাম দেখেছিলাম। একদল রিসার্চারের ধারণা, সাদার ওপরে কালো লেখাটা হচ্ছে সমস্যা। সাদার বদলে লাল কাগজে লিখলেই অনেক ডিসলেক্টিক মানুষ পড়তে পারে। যদি লাল কাচের চশমা পরে কিংবা লাল আলোতে চেষ্টা করে, তাহলে অনেকেই নাকি পড়তে পারে।
রাফি অবাক হয়ে বলল, ইন্টারেস্টিং!
প্রফেসর হাসান বললেন, তবে টেলিভিশনের সব কথা বিশ্বাস করতে নেই। বেশির ভাগই ভুয়া।
কবির বলল, কিন্তু শারমিনের নয় ডিজিটের সংখ্যা গুণ করার ক্ষমতাটা তো খুবই ইন্টারেস্টিং! আমাদের এত দিন ধরে চা খাওয়াচ্ছে আমরা জানি না, আর রাফি এসে এক দিনে বের করে ফেলল।
সুহানা বলল, তোদের গলায় দড়ি দিয়ে মরা উচিত।
আমি একা কেন, তোদেরও গলায় দড়ি দিয়ে মরা উচিত।
ঠিকই বলেছিস, আমাদের সবার গলায় দড়ি দিয়ে মরা উচিত।
প্রফেসর হাসান বললেন, মরতে চাইলে মরো, কিন্তু তার আগে সবাই নিজের নিজের পরীক্ষার খাতা দেখে কমিটির কাছে জমা দেবে।
রানা বলল, স্যার, আপনার জন্য আমরা শান্তিতে মরতেও পারব না?
না। পারবে না।
সুহানা বলল, শারমিন মেয়েটির যদি ডিসলেক্সিয়া না থাকত তাহলে অনেক বড় ম্যাথমেটিশিয়ান হতে পারত?
প্রফেসর হাসান বললেন, নো নো! ডোন্ট গেট ইট রং। মাথার ভেতরে বড় বড় গুণ করে ফেলার ক্ষমতা আর ম্যাথমেটিশিয়ান হওয়া এক জিনিস না। এক শ টাকার ক্যালকুলেটরও বড় বড় গুণ করতে পারে। তার মানে এই না যে এক শ টাকার ক্যালকুলেটর খুব বড় ম্যাথমেটিশিয়ান!
তার মানে এই গিফটার কোনো গুরুত্ব নেই?
যদি শুধু বড় বড় গুণ করতে পারে আর কিছু পারে না, তাহলে সে রকম। গুরুত্ব নেই। ইন্টারেস্টিং কিন্তু সে রকম গুরুত্বপূর্ণ না। মাঝেমধ্যেই এ রকম মানুষ পাওয়া যায়। কম্পিউটার আবিষ্কার হওয়ার আগে এ রকম মানুষ খুব ইউজফুল ছিল। গাউস তার জীবনে এ রকম মানুষকে ব্যবহার করে অনেক ক্যালকুলেশন করেছেন।.
রাশেদ বললেন, অনেক অটিস্টিক স্যাভেন্ট আছে যারা এ রকম পারে। আর কিছু পারে না, কিন্তু এ রকম ক্যালকুলেশন করতে পারে। পাইয়ের মান কয়েক শ ডিজিট পর্যন্ত বের করে ফেলতে পারে!
তাই? সুহানার কেমন যেন মন খারাপ হলো। বলল, আমি আরও ভাবছিলাম শারমিন এখন ফেমাস হয়ে যাবে। এত কিউট একটা মেয়ে কত কষ্ট করে, তার টাকা-পয়সার সমস্যা মিটে যাবে।
প্রফেসর হাসান বললেন, সেটা হয়তো হতে পারে। আজকালকার টিভি চ্যানেলগুলো যদি খবর পায়, তাহলে তাকে নিয়ে প্রোগ্রাম শুরু করে দেবে—কিন্তু ইন দ্য লং রান ব্যাপারটা ভালো হয় না। ছোট বাচ্চাদের। ফেমাস বানানো ঠিক না। ক্ষতি হয়।
রাফির মুখ নিশপিশ করছিল ভোটকা হান্নানের কথা বলার জন্য, কিন্তু সে বলল। শারমিনের বাবা খুব করে বলে দিয়েছে সে যেন কাউকে না বলে। তবে বিষয়টি নিয়ে প্রফেসর হাসানের সঙ্গে কথা বলা যায়—এই মানুষটি অনেক কিছু জানেন। তাকে বললে মনে হয় ঠিক ঠিক সাহায্য করতে পারবেন। ইউনিভার্সিটিতে নতুন এসেই সে ভোটকা হান্নানদের সঙ্গে ঝামেলা করতে চায় না।
মিটিং শেষে যখন সবাই চলে গেল, তখন রাফি প্রফেসর হাসানের কাছে গিয়ে বলল, স্যার আপনার সঙ্গে একটু কথা ছিল।
প্রফেসর হাসান বললেন, নিরিবিলি?
জি স্যার। নিরিবিলি।
বল।
কথাটা শারমিন নামের মেয়েটিকে নিয়ে।
প্রফেসর হাসান বললেন, কী কথা?
আমি যখন শারমিনের গুণ করার ক্ষমতাটা টেস্ট করছি, তখন আশপাশে অনেক ছাত্রছাত্রী ছিল, তার ব্যাপারটা জেনে গেছে।
তারা এখন মেয়েটাকে জ্বালাচ্ছে?
তা একটু জ্বালাচ্ছে, কিন্তু সেটা সমস্যা না। সমস্যা অন্য জায়গায়।
কোন জায়গায়?
একটা মাস্তান ছাত্রনেতা শারমিনকে তুলে নিতে চাচ্ছে।
প্রফেসর হাসান ভুরু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলেন, শারমিনের বয়স কত?
দশ-এগার হবে।
এত ছোট মেয়েকে তুলে নিতে চাচ্ছে কেন?
তাকে টিভি চ্যানেলে নিয়ে যাবে।
প্রফেসর হাসান হতাশার ভঙ্গি করে মাথা নাড়লেন, বললেন, মাস্তানের নাম কী? নাম কী?