সত্যি?
হ্যাঁ।
রাফি শারমিনের দিকে তাকিলে বলল, সত্যি পার?
শারমিন ঘাড় নেড়ে জানাল, সে পারে। রাফি বলল, বলো দেখি, সতেরোকে তেরো দিয়ে গুণ করলে কত হয়?
শারমিন একটু হকচকিয়ে গেল, ইতস্তত করে বলল, জানি না।
তাহলে যে বললে, সব হিসাব মাথার মাঝে করে ফেলতে পার?
শারমিনের বাবা বলল, আসলে আমার এই টঙে চা-নাশতার হিসাব করতে পারে। যোগ-বিয়োগ পারে না।
রাফি একটু অবাক হয়ে বলল, যোগ-বিয়োগ পারে না, কিন্তু চানাশতার হিসাব করতে পারে! ঠিক আছে, তাহলে চা-নাশতার হিসাবই করতে দিই। রাফি শারমিনের দিকে তাকিয়ে বলল, একটা বিস্কুট কত?
শারমিন বলল, এক টাকা।
সতেরোজন এসেছে বিস্কুট খেতে। একজন তেরোটা করে বিস্কুট খেয়েছে। কত টাকা বিল হবে, বলো?
শারমিন কোনো চিন্তা না করে সঙ্গে সঙ্গে বলল, দুই শ একুশ টাকা।
রাফি মনে মনে হিসাব করে দেখল, ঠিকই বলেছে। শারমিন ঠিকই গুণ করতে পারে। কিন্তু গুণ বলতে কী বোঝায়, সে জানে না। রাফি জিজ্ঞেস করল, যদি তেতাল্লিশজন লোক এসে সবাই তেতাল্লিশটা করে বিস্কুট খায়, তাহলে কত টাকার বিস্কুট খাবে?
শারমিন বলল, আঠারো শ ঊনপঞ্চাশ টাকা।
রাফিকে এবার কাগজে লিখে হিসাব করে দেখতে হলো, শারমিন ঠিক বলেছে কি না। অনুমান করেছিল, সঠিক হবে এবং দেখা গেল সত্যিই সঠিক হয়েছে। রাফি এবার একটু অবাক হতে শুরু করেছে, মেয়েটি কত পর্যন্ত যেতে পারে, তার দেখার ইচ্ছে হলো। জিজ্ঞেস করল, নয় শ রিরাশি জন এসে সবাই সাত শ একুশটি করে বিস্কুট খেয়েছে। বলো দেখি, কত টাকার বিস্কুট খেয়েছে?
সত্তুর শ আশি শ বাইশ টাকা।
শারমিনের উত্তরটা বিচিত্র, রাফি আবার জিজ্ঞেস করল, কী বললে?
সত্তুর শ শ, আশি শ বাইশ টাকা
রাফি কথাটা বুঝতে পারল না, কিন্তু তার পরও সে কাগজে লিখে ফেলল। তারপর নয় শ রিরাশিকে সাত শ একুশ দিয়ে গুণ করতে শুরু করে। কয়েক মিনিট পর উত্তর বের হলো, সাত লাখ আট হাজার বাইশ। শারমিন সাত লাখকে বলে সত্ত্বর শ শ আর আট হাজারকে বলেছে আশি শ। অন্যরকমভাবে বলেছে কিন্তু ভুল বলেনি। রাফি অবাক হয়ে শারমিনের দিকে তাকিয়ে দেখল, মেয়েটি মুখে হাত চাপা দিয়ে খিল খিল করে হাসছে। রাফি জিজ্ঞেস করল, হাসো কেন?
কেউ যদি সাত শ একুশটা বিস্কুট খায়, তাহলে তার পেট ফেটে যাবে! শারমিনের কথা শুনে রাফিও হেসে ফেলল। শারমিন ভুল বলেনি, সাত শ একুশটা বিস্কুট খেলে সত্যিই পেট ফেটে যাওয়ারই কথা। এই মুহূর্তে রাফি অবশ্যি সেটা নিয়ে মাথা ঘামাল না। মেয়েটি কত পর্যন্ত হিসাব করতে পারে, সেটা সে দেখতে চাইল। বলল, পেট ফাটলে ফাটুক, সেটা নিয়ে তুমি চিন্তা করো না। তুমি আমাকে বলো, যদি দুই হাজার তিন শ বাইশ জন এসে সবাই সাত হাজার নয় শ আটচল্লিশটা করে বিস্কুট খায়, তাহলে কত টাকা বিল হবে?
শারমিনকে একটু ইতস্তত করতে দেখা গেল, বলল, দুই হাজার? হাজার মানে কী?
রাফি বুঝতে পারল, মেয়েটি এর আগে কখনো হাজার কথাটি ব্যবহার করেনি। তার দৈনন্দিন হিসাব কখনোই কয়েক শয়ের বেশি যায় না। তাই সে হাজার শব্দটি ব্যবহার না করে জিজ্ঞেস করল, তেইশ শ বাইশজন সবাই উনাশি শ আটচল্লিশটা করে বিস্কুট খেয়েছে, কত টাকা বিল?
শারমিন এক মুহূর্ত দ্বিধা না করে বলল, আঠারো শ শ শ পয়তাল্লিশ শ শ বাহান্ন শ ছাপ্পান্ন।
রাফিকে এবারে তার পকেট থেকে মোবাইল টেলিফোন ব্যবহার করে সেখানে ক্যালকুটরে হিসাব করে দেখতে হলো, শারমিন তার এক থেকে এক শ পর্যন্ত সংখ্যার জ্ঞান নিয়ে উত্তরটা নিখুঁতভাবে বলেছে। অবিশ্বাস্য। সে অবাক হয়ে শারমিনের দিকে তাকিয়ে রইল, জিজ্ঞেস করল, তুমি এইভাবে কত পর্যন্ত পার?
কত পর্যন্ত? শারমিন ইতস্তত করে বলল, যত পর্যন্ত দরকার।
ঠিক আছে, বলো দেখি, বত্রিশ হাজার চুয়ান্ন শ সাতষট্টিজন মানুষ এসে সবাই নয় হাজার আট শ তেরোটা করে বিস্কুট খেয়েছে প্রশ্নটা শেষ করার আগেই তার মনে পড়ল, মেয়েটি হাজার শব্দটা জানে না। কাজেই হাজার শব্দটা ব্যবহার না করে কীভাবে বলা যায়, চিন্তা করছিল। তার আগেই শুনতে পেল শারমিন বলছে, তিন হাজার হাজার হাজার এক শ তিরানব্বই হাজার হাজার আট শ পঁচানব্বই হাজার নয় শ আটাশি টাকা।
রাফি ভুরু কুঁচকে বলল, তুমি না এক্ষুনি বললে, হাজার জানো না?
এখন জানি।
কেমন করে জানলে?
এই যে আপনি প্রথমে বললেন, দুই হাজার তিন শ বাইশ, তারপর সেটাকে বললেন তেইশ শ বাইশ। তার মানে দশ শ হচ্ছে হাজার।
রাফি শারমিনের দিকে তাকিয়ে রইল। এই মেয়েটি শুধু যে মাথার মধ্যে গুণ করতে পারে, তা-ই নয়, নিজে নিজে শিখেও নিতে পারে। শারমিন যে সংখ্যাটা বলেছে, রাফি সেটা কাগজে লিখে নিল। তার মোবাইল টেলিফোনের ক্যালকুলেটরে সেটা সঠিকভাবে দেখাতে পারবে না। তার ক্যালকুলেটর নয় অঙ্কের বেশি দেখাতে পারে না। অন্যভাবে গুণটা করে দেখতে হবে, কিন্তু রাফির কোনো সন্দেহ রইল না যে সংখ্যাটি সঠিক। যে বিষয়টা বিস্ময়কর সেটা হচ্ছে, মাথার মধ্যে হিসাব করতে এই মেয়েটি এক মুহূর্তও সময় নিচ্ছে না। প্রত্যেকবারই সঠিকভাবে বলে দিচ্ছে।
রাফি শারমিনের হাত ধরে জিজ্ঞেস করল, তুমি কোন ক্লাসে পড়ো? শারমিন কোনো কথা না বলে বিব্রতভাবে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইল, প্রশ্নের উত্তর দিল তার বাবা। বলল, লেখাপড়া করে না।