কী ব্যাপার? আমি ঠিক বুঝতে পারছি না।
বলছি, কিন্তু তার আগে এপসিলন নিয়ে কয়েকটা কথা জেনে নিই। প্রথম প্রশ্ন, এর নাম এপসিলন কেন?
রিয়াজ হাসান একটু হেসে বলল, যদি এর নাম হত তেতাল্লিশ, আপনি তবুও জিজ্ঞেস করতেন এর নাম তেতাল্লিশ কেন! যদি এর নাম হত বকুল ফুল, আপনি জিজ্ঞেস করতেন কেন বকুল ফুল হল। যদি এর নাম হত ঝিনাইদহ
তার মানে বলতে চাইছেন নামটির সাথে সফটওয়্যারটির কোনো সম্পর্ক নেই?
রিয়াজ মাথা চুলকে বলল, একেবারে নেই তা নয়। যেদিন কোডিং শুরু করেছি সেদিন হঠাৎ টেলিভিশনে দেখি আমার এক ক্লাসফ্রেন্ডকে দেখাচ্ছে, সে প্রতিমন্ত্রী হয়ে গেছে! ইউনিভার্সিটিতে থাকার সময় তাকে আমরা ডাকতাম এপসিলন অর্থাৎ খুবই ছোট! সে এত তুচ্ছ ছিল যে তাকে এপসিলন ডাকাটাই বেশি। তাই প্রোগ্রামটা লিখতে গিয়ে এই নাম।
নিশীতা সব কিছু বুঝে ফেলার মতো করে মাথা নেড়ে বলল, আপনার এপসিলন অসম্ভব স্মার্ট! যখন কথা বলে তখন মুখে অভিব্যক্তি দেখা যায়। এটি কীভাবে করেছেন? এর মাঝে কি আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্যবহার করেছেন?
রিয়াজ হাসান হো হো করে হেসে বলল, আপনি আমাকে কী ভেবেছেন? আমি প্রফেশনাল প্রোগ্রামার নই, একেবারেই এমেচার। সময় কাটানোর জন্য জোড়াতালি দিয়ে এটা দাঁড়া করিয়েছি। মুখের অভিব্যক্তিটি ইন্টারনেট থেকে ডাউনলোড করেছি। জানেন তো আজকাল প্রোগ্রামিং পানির মতো সোজা!
নিশীতা মাথা নেড়ে বলল, কিন্তু এপসিলন কী চমৎকার কথা বলল! একেবারে সত্যিকার মানুষের মতো।
রিয়াজ হাসান সকৌতুকে নিশীতার দিকে তাকিয়ে রইল। মুখ টিপে হাসি চেপে বলল, আপনার তাই ধারণা?
হ্যাঁ। নিশীতা জোর গলায় বলল, একটু মেজাজী বা একটু বেয়াদপ হতে পারে কিন্তু খাঁটি মানুষের মতো কথা বলেছে সে ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই!
আসলে আপনি মাত্র অল্প সময় কথা বলেছেন দেখে ধরতে পারেন নি–এটি আসলে একটি অত্যন্ত নির্বোধ প্রোগ্রাম।
নির্বোধ?
হ্যাঁ। আপনি যে কথাগুলো বলেন সেই কথাগুলো ব্যবহার করে একটা প্রশ্ন তৈরি করে। আপনার সব কথার উত্তর দেয় প্রশ্ন করে– প্রশ্নের উত্তর দেয় প্রশ্ন দিয়ে তাই আপনার মনে হয় এটা বুঝি বুদ্ধিমান!
নিশীতা চমৎকৃত হয়ে বলল, আমি ধরতে পারি নি।
এখন থেকে পারবেন। রিয়াজ মুখে খানিকটা গাম্ভীর্য এনে বলল, তবে এখানে হার্ডওয়্যারের কিছু কাজ আছে। একটা ভিডিও ক্যামেরা দিয়ে কিছু ইমেজ প্রসেসিং হয়–
যার অর্থ এটি দেখতে পায়? ও
না–না–না—-এটাকে দেখতে পাওয়া বলে দেখা ব্যাপারটিকে অপমান করবেন না। বলেন ভিডিও ক্লিপকে প্রসেস করে। এ ছাড়া ভয়েস রিকগনিশান, ভয়েস সিনথেসিসের কিছু ভালো কাজ আছে। বেশিরভাগ হার্ডওয়্যারে, বুঝতেই পারছেন আমি হার্ডওয়্যারের মানুষ।
নিশীতা মাথা নাড়ল, বলল, আমি জানি।
সেটাই শুনি আপনার কাছে। কতটুকু জানেন? কীভাবে জানেন? কেন জানেন?
আপনাকে আমি অনেকদিন থেকে খুঁজছি। সারা আমেরিকা খুঁজে আপনাকে পাই নি, তখন একজন বলল, আপনি নিশ্চয়ই দেশেই আছেন। দেশে খুঁজতেই সত্যি সত্যি পেয়ে গেলাম।
রিয়াজ হাসান অবাক হয়ে নিশীতার দিকে তাকাল কিন্তু কিছু বলল না। নিশীতা একটা নিশ্বাস ফেলে বলল, একটা ব্যাপারে আমি আপনার সাহায্য চাই।
কী ব্যাপার?
প্রায় তিন সপ্তাহ আগে আকাশ থেকে একটা নীল আলো নিচে নেমে এসেছে, যারা দেখেছে তারা বলেছে একেবারে সোজা নেমে এসেছে উল্কাপাতের মতো। কিন্তু কোনোরকম বিস্ফোরণ হয় নি।
রিয়াজ হাসান কোনো কথা না বলে ভুরু কুঁচকে তাকাল।
আলোটা যেখানে নেমেছে তার কাছাকাছি জায়গায় একটা মানুষের ডেডবড়ি পাওয়া গেছে। মানুষটার পোস্টমর্টেম করেও কেউ বুঝতে পারে নি সে কেমন করে মারা গেছে। শরীরের ভিতরে এক ধরনের বিচিত্র ক্রিস্টাল, মনে হয় রক্তের এক ধরনের প্রসেসিং হয়েছে। মানুষটা আন্ডারওয়ার্ল্ডের, নাম কালা জব্বার। তার সাথে আরেকজন ছিল, তার নাম কব্জি কাটা দবির–সে বাতাসের মাঝে উবে গেছে। মানুষটা–
নীল আলোটা কবে নেমেছে?
তিন তারিখ। রাত দুটো পঁয়ত্রিশ মিনিটে।
আকাশের কোনদিক থেকে নেমেছে?
দক্ষিণ-পূর্ব থেকে সোজা নিচের দিকে।
রিয়াজ একটা কাগজে কী যেন লিখল, ছোট কয়েকটা সংখ্যা দিয়ে কিছু একটা হিসাব করল, তারপর হঠাৎ করে খুব গম্ভীর হয়ে গেল।
নিশীতা রিয়াজের দিকে তাকিয়ে একটু ইতস্তত করে বলেই ফেলল, আমার ধারণা মহাকাশ থেকে কোনো মহাকাশযান পৃথিবীতে নেমে এসেছে।
রিয়াজ নিশীতার কথা শুনে হেসে ফেলল না বা হাসার চেষ্টাও করল না, এক দৃষ্টিতে একটা বিচিত্র ভঙ্গি করে নিশীতার দিকে তাকিয়ে রইল। নিশীতা অস্বস্তিতে নড়েচড়ে বলল, আপনার কী মনে হয়? কোনো মহাজাগতিক প্রাণী কি এসেছে?
রিয়াজ কয়েক মুহূর্ত তার হাতের আঙুলের দিকে তাকিয়ে বলল, সম্ভাব্য মহাজাগতিক প্রাণীদের তাদের বুদ্ধিমত্তা দিয়ে কয়েকটা ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যদি প্রথম স্তরের বুদ্ধিমত্তা হয়ে থাকে তা হলে আমাদের সভ্যতা কখনো তাকে দেখতে পাবে না। হয়তো তারা এখনই আছে, হয়তো আমাদের নিয়ন্ত্রণ করছে, হয়তো আমাদের দিয়ে একটা পরীক্ষা। করছে, আমরা জানতেও পারব না। মহাজাগতিক ঋীর সভ্যতা, বুদ্ধিমত্তা যদি তৃতীয় কিংবা চতুর্থ স্তরের হয় শুধু তা হলেই আমরা তারে দেখব।