রিয়াজ উৎফুল্ল মুখে বলল, চমৎকার! উত্তরটা কী হবে আমি কিন্তু সেটা প্রোগ্রাম করে দেব!
আমি জানি। নিশীতা চোখ নামিয়ে বলল, আমার সেটা নিয়ে খুব দুর্ভাবনা নেই।
.
নিশীতাকে ক্যাপ্টেন মারুফ আর তার স্ত্রী বাসায় নামিয়ে দিল রাত এগারটায়। নিশীতা গুনগুন করে গান গাইতে গাইতে নিজের ঘরে যাচ্ছিল, আম্মা তাকে থামালেন, জিজ্ঞেস করলেন, কী হল, আজ তোর মনে খুব আনন্দ মনে হচ্ছে।
নিশীতা থতমত খেয়ে হঠাৎ করে হেসে ফেলল, বলল, হ্যাঁ মা।
কেন?
কারণ ফ্রেন্ড লিস্টার আর তার দলবলকে আচ্ছামতন শিক্ষা দেওয়া গেছে। প্রজেক্ট নেবুলার সব তথ্য বের করার জন্য বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন হয়েছে। মহাজাগতিক প্রাণীর তৈরি করা মানুষের দেহগুলো সারা পৃথিবীর বড় বড় ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হচ্ছে। রাহেলা ভালো হয়ে যাচ্ছে, তার বাচ্চাটি দুধ খেয়ে পেটটাকে ছোট একটা ঢোলের মতো করে ফেলছে। ক্যাপ্টেন মারুফকে তার কাজের জন্য একটা বড় খেতাব দেবে। আমি শ্রেষ্ঠ সাংবাদিক হিসেবে পুরস্কার পাব। রিয়াজ–মানে ড. হাসান ইউনিভার্সিটিতে যোগ দেবে। একদিন এতগুলো ভালো সংবাদ শুনলে মনে আনন্দ হয় না!
হয়। আম্মা হেসে বললেন, কিন্তু তোর মনে তো তার চাইতেও বেশি আনন্দ!
তুমি কেমন করে জান?
আমি জানি। আমি তোর মা। তোর আব্বুর সাথে যেদিন আমার প্রথম দেখা হয়েছিল আমি সেদিন এ রকম গুনগুন করে গান গেয়ে ঘরে এসেছিলাম।
নিশীতা কিছুক্ষণ তার মায়ের দিকে তাকিয়ে থেকে কাছে এসে মাকে জড়িয়ে ধরল।
.
গভীর রাতে নিশীতার সেলুলার ফোনটি বেজে উঠল। ঘুমের মাঝে হাতড়ে হাতড়ে নিশীতা সেলুলার ফোনটি তুলে নেয়, ঘুম ঘুম গলায় বলল, হ্যালো।
কে, নিশীতা?
নিশীতা চমকে উঠল, এটি এপসিলনের গলার স্বর। কে?
আমি।
তুমি? তুমি কোথায়?
আমি এখানে-ওখানে সব জায়গায়।
আমি ভেবেছিলাম তুমি চলে গেছ।
না যাই নি। আমি এখন যাব তাই তোমার কাছে বিদায় নিতে এসেছি।
তুমি কে, তুমি কেমন কিছুই জানতে পারলাম না।
তার কোনো প্রয়োজন আছে? কেউ কখনো সবকিছু জানতে পারে?
নিশীতা ব্যাকুল গলায় বলল, কিন্তু আমি তোমাকে কখনো ধন্যবাদ জানাতে পারলাম না। আমার কৃতজ্ঞতার কথাটুকুও বলতে পারলাম না।
তার কোনো প্রয়োজন নেই। কারণ ভালবাসাটা কী আমি তোমার কাছেই শিখেছি। আমি সব জানি নিশীতা। কণ্ঠস্বর এক মুহূর্ত চুপ করে থেকে বলল, তুমি জানালার কাছে এসে দাঁড়াও।
নিশীতা জানালার কাছে দাঁড়াল।
বিদায়।
বিদায়।
ঠিক সেই মুহূর্তে সমস্ত আকাশ চিরে একটা নীল আলো ঝলসে উঠল। সেই আলো এই পৃথিবী থেকে শুরু করে দূর গ্যালাক্সি পার হয়ে মহাকালের মাঝে হারিয়ে গেল।
.
নিশীতা স্তব্ধ হয়ে রাতের আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে।