ক্যাপ্টেন মারুফ আর তার স্ত্রী বনানীতে একটা থাই রেস্টুরেন্টে নিশীতা আর রিয়াজকে খেতে ডেকেছে। রিয়াজ হাসান ঢাকার রাস্তাঘাট ভালো চেনে না, নিশীতা বলেছে তাকে বাসা থেকে তুলে নেবে। নিশীতা ট্যাক্সিতে উঠে রিয়াজের বাসার ঠিকানা দিতেই ট্যাক্সির ডাইভার ট্যাক্সি ছেড়ে দেয়।
রিয়াজ নিশীতাকে দেখে এক ধরনের মুগ্ধ বিস্ময় নিয়ে কিছুক্ষণ তার দিকে তাকিয়ে। রইল। নিশীতা একটু লজ্জা পেয়ে বলল, কী হল আপনার?
তোমাকে অপরিচিত একজন মহিলার মতো দেখাচ্ছে!
আপনাকে বলেছিলাম একদিন শাড়ি পরে দেখিয়ে দেব–তাই দেখিয়ে দিচ্ছি!
হ্যাঁ, শাড়িটি একটি অপূর্ব পোশাক। একজন মেয়ে যখন শাড়ি পরে তখন তাকে যে কী চমৎকার দেখায়!
নিশীতা একটা নিশ্বাস ফেলে বলল, আমি না হয়ে অন্য যে কোনো মেয়ে হলে আপনার এই কথায় একটা ভিন্ন অর্থ বের করে আপনার বারোটা বাজিয়ে দিত।
ভিন্ন অর্থ? রিয়াজ একটু অবাক হয়ে বলল, কী ভিন্ন অর্থ?
যে আমাকে যখন সুন্দর দেখায় তার কৃতিত্বটা আমার নয়–কৃতিত্বটা শাড়ির!
রিয়াজ হেসে বলল, অন্য কোনো মেয়ে হলে আমি কি এ ধরনের কোনো কথা বলতাম? তুমি বলেই করেছি।
কেন?
কারণ গত কয়েকদিন তুমি আর আমি যার ভিতর দিয়ে গিয়েছি যে পৃথিবীর খুব বেশি মানুষ তার ভিতর দিয়ে যায় না। তখন তোমাকে যেটুকু দেখেছি, মনে হয়েছে তুমি খুব চমৎকার একটা মেয়ে।
থ্যাংক ইউ।
রিয়াজ একটা নিশ্বাস ফেলে অনেকটা স্বগতোক্তির মতো করে দ্বিতীয়বার বলল, খুব চমৎকার একটা মেয়ে!
নিশীতা দ্বিতীয়বার থ্যাংক ইউ বলবে কি না ভাবছিল কিন্তু তার আগেই টেবিলের ওপর থেকে এপসিলন কর্কশ গলায় বলল, কে? কে এসেছে?
নিশীতা বলল, আমি।
আমি কে?
আমি নিশীতা।
তুমি কেন নিজেকে নিশীতা বলে দাবি করছ? আমার ডাটাবেসে নিশীতার যে তথ্য আছে তার সাথে তোমার মিল নেই কেন?
কারণ আমি শার্ট-প্যান্ট না পরে আজকে শাড়ি পরেছি।
কেন তুমি শাড়ি পরেছ?
নিশীতা একটা নিশ্বাস ফেলল, মহাজাগতিক প্রাণীটি চলে যাবার পর এপসিলনকে ব্যবহার করে দ্বিতীয় মহাজাগতিক প্রাণীটি আর তার সাথে যোগাযোগ করে নি। প্রাণীটিকে ঠিকভাবে বিদায়ও দেওয়া হয় নি। কোথায় আছে এখন কে জানে। কেমন আছে সেটাই-বা কে জানে।
এপসিলন আবার কর্কশ গলায় বলল, কী হল তুমি আমার প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছ না কেন?
রিয়াজ বলল, অনেক হয়েছে এপসিলন। তুমি এবারে থাম।
কেন আমি থামব?
কারণ আমরা কথা বলছিলাম।
তোমরা কি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার নিয়ে কথা বলছিলে?
রিয়াজ বিরক্ত হয়ে বলল, আমরা কী নিয়ে কথা বলছি তাতে তোমার কী আসে-যায়?
তুমি কি নিশীতাকে বলেছ যে সে চমৎকার মেয়ে?
রিয়াজ থতমত খেয়ে বলল, হ্যাঁ বলেছি।
তুমি কি বলেছ নিশীতা সুন্দরী মেয়ে?
হ্যাঁ বলেছি।
তার মানে কি তুমি নিশীতাকে ভালবাস?
রিয়াজ বিস্ফারিত চোখে একবার নিশীতার দিকে আর একবার এপসিলনের দিকে তাকাল।
এপসিলন চোখ টিপে বলল, তুমি কি নিশীতকে বিয়ে করতে চাও?
রিয়াজ হতচকিত হয়ে কী করবে বুঝতে বা পরে এপসিলনের কাছাকাছি গিয়ে হ্যাঁচকা টান দিয়ে পাওয়ার কর্ডটা খুলে ফেলতেই এপসিলন একটা আর্তচিৎকারের মতো শব্দ করে মিলিয়ে গেল।
রিয়াজ অপরাধীর মতো নিশীতার দিকে তাকিয়ে বলল, আমি–আমি খুবই দুঃখিত নিশীতা, খুবই লজ্জিত।
নিশীতা হঠাৎ করে নিজেকে সামলাতে না পেরে শাড়ির আঁচল মুখে দিয়ে খিলখিল করে হেসে উঠল, কিছুতেই সে আর তার হাসি থামাতে পারে না। হাসতে হাসতে তার চোখে পানি এসে গেল, শাড়ির আঁচলে ঠোঁটের লিপস্টিলেগে চোখের পানিতে তার চোখের নীল রং ভিজে মাখামাখি হয়ে গেল।
রিয়াজ খানিকক্ষণ নিশীতার দিকে তাকিয়ে থেকে বলল, তুমি কিছু মনে কর নি তো নিশীতা?
নিশীতা হাসতে হাসতে কোনোমতে বলল, না, আমি কিছু মনে করি নি।
রিয়াজ নিশীতার দিকে তাকিয়ে ইতস্তত করে বলল, নিশীতা–মানে আমি বলছিলাম কী–এপসিলন ব্যাটা গর্দভ–কিন্তু সে যেটা বলেছে–
নিশীতা হঠাৎ করে তার হাসি থামিয়ে রিয়াজের দিকে চোখ বড় বড় করে তাকাল।
রিয়াজ বলল, আমি জানি এটা খুবই তাড়াতাড়ি হয়ে যাচ্ছে। তুমি আমাকে চেন না, আমার সম্পর্কে কিছুই জান না। আমিও তোমাকে চিনি মাত্র কয়েকদিন, যদিও আমার মনে হচ্ছে তোমাকে আমি অনেকদিন থেকে চিনি। তাই আমি বলছিলাম কী
নিশীতা স্থির চোখে রিয়াজের দিকে তাকিয়ে রইল। নিশীতাকে এর আগেও যে
এক–দুজন তার মনের কথা বলার চেষ্টা করে নি তা নয়, কিন্তু এটি সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি ব্যাপার।
তাই আমি বলছিলাম কী– রিয়াজ ইতস্তত করে বলল, আমি ঠিক জানি না এসব কথা কীভাবে বলতে হয়। ব্যাটা গর্দভ এপসিলন অবশ্য বলেই দিয়েছে, সেই ব্যাটা একেবারে না বুঝে বলেছে, কিন্তু যে কথাটি বলেছে সেটি আমিও বলতে চাইছিলাম। এত তাড়াতাড়ি না হলেও বলতাম। মানে–
নিশীতা বড় বড় চোখে রিয়াজের দিকে তাকিয়ে রইল। রিয়াজ তার অপ্রস্তুত ভাবটা ঝেড়ে ফেলে বলল, তোমার এখনই কিছু বলার প্রয়োজন নেই নিশীতা। তুমি এটা নিয়ে ভাবনাচিন্তা করতে পার।
নিশীতা কিছুক্ষণ রিয়াজের দিকে তাকিয়ে বলল, আসলে আমি আবার খুব বেশি ভাবনাচিন্তা করতে পারি না।
পার না?
না। নিশীতা মুখ টিপে হেসে বলল, কাজেই আমি কী করব জানেন?
কী?
আপনার এপসিলনকেই আমার জন্য চিন্তাভাবনা করতে দেব!