ভালো নেই, মাথায় প্রচণ্ড ব্যথা!
কমে যাবে। ওষুধের অ্যাফেক্টটা কেটে যেতেই কমে আসবে।
আমরা কোথায়?
ঠিক জানি না, মনে হয় বারিধারার কাছে কোনো বাসায়।
নিশীতা চোখ খুলে চারদিকে তাকাল, একটা বড় গুদামঘরের মতো জায়গার একপাশে খানিকটা জায়গা ঘিরে ঘরটা তৈরি করা হয়েছে। এটি নিয়মিত কোনো বাসা নয়। তাকে শুইয়ে রাখা হয়েছে শক্ত মেঝেতে, নিচে হয়তো একটা কম্বল বিছানো হয়েছে এর বেশি কিছু নেই। ঘরের ভিতরে কোনো আলো নেই, বাইরের আলো স্কাই লাইটের ফাঁক দিয়ে ভিতরে এসে ঢুকছে। নিশীতা সাবধানে উঠে দেয়ালে হেলান দিয়ে বসল, এই ভয়ঙ্কর এবং অনিশ্চিত পরিবেশেও সে প্রথমে হাত দিয়ে চুল বিন্যস্ত করতে করতে বলল, আমাকে কি ভূতের মতো দেখাচ্ছে?
রিয়াজ হাসান হেসে বলল, তোমাকে কেমন দেখাচ্ছে সেটাই তোমার প্রথম চিন্তার বিষয়?
নিশীতা একটু কষ্ট করে হেসে বলল, আমার ব্যাগটা কি আছে?
কেন?
ভিতরে একটা আয়না আছে, কেমন দেখাচ্ছে দেখতাম। চিরুনি দিয়ে চুলটা ঠিক করতাম।
রিয়াজ হাসান উঠে গিয়ে ঘরের অন্যপাশ থেকে তার ব্যাগটা এনে দিল। নিশীতা ব্যাগটা খুলতেই তার সেলুলার ফোনটি চোখে পড়ল, সে চোখ উজ্জ্বল করে বলল, সেলুলার ফোন! আমরা বাইরে ফোন করতে পারব!
রিয়াজ হাসান মাথা নাড়ল, বলল, না, পারবে না। তোমাকে যখন এখানে রেখে গেছে তখন লোকগুলো সেটা নিয়ে কথাবার্তা বলেছে। তোমার ফোনের ব্যাটারি ডিসচার্জ করে দিয়েছে।
নিশীতা ফোনটি হাতে নিয়ে দেখল সতি সত্যি এটি পুরোপুরি অন্ধকার হয়ে আছে। ফোনটি পাশে সরিয়ে রেখে সে তার কমপ্যাক্ট বের করে তার ছোট আয়নাটাতে নিজেকে দেখে একটা গম্ভীর হতাশাব্যঞ্জক শব্দ বের করল। সে ব্যাগ হাতড়ে একটা চিরুনি বের করে তার চুলগুলোকে এক মিনিটের মাঝে বিন্যস্ত করে নেয়। রিয়াজ হাসানকে আড়াল করে ঠোঁটে দ্রুত একটু লিপস্টিকের একটা ছোঁয়া লাগিয়ে নিল।
রিয়াজ শব্দ করে হেসে বলল, আমি জানতাম না তোমাকে কেমন দেখাচ্ছে সেটা তোমার কাছে এত গুরুত্বপূর্ণ।
কেমন দেখাচ্ছে নয়–বলেন, ভূতের মতো দেখাচ্ছে কি না!
রিয়াজ হাসান একটা নিশ্বাস ফেলে বলল, আমি জানি না, তোমাকে ঠিক পরিবেশে বলার সুযোগ পাব কি না তাই এখনই বলে রাখি, তুমি যেভাবেই থাক তোমাকে কখনোই ভূতের মতো দেখায় না।
রিয়াজের গলার স্বরে কিছু একটা ছিল সেটা শুনে নিশীতা একটু অবাক হয়ে তার দিকে তাকাল। রিয়াজ একটু লজ্জা পেয়ে বলল, আমি জানি না তোমাকে এর আগে কেউ বলেছে কি না–তোমার মাঝে একটা অসম্ভব সতেজ ভাব আছে। দেখে ভালো লাগে।
নিশীতা এবারে শব্দ করে হেসে ফেলল, বলল, শুনে খুশি হলাম যে অন্তত কেউ একজন বলল আমার সতেজ ভাবটি ভালো লাগে। সারা জীবন শুনে আসছি আমার তেজ হচ্ছে আমার সব সর্বনাশের মূল।
সেটিও নিশ্চয়ই সত্যি! রিয়াজ বলল, আজকে যে তুমি এখানে এই গাড্ডায় পড়েছ, আমার ধারণা সেটাও তোমার তেজের জন্য।
নিশীতা মাথা নাড়ল, বলল, না, পুরোটা তেজের জন্য না। আপনি জানেন একটা বিশাল ষড়যন্ত্র হচ্ছে আমি ধরে ফেলেছি সেটাই হচ্ছে সমস্যা। নিশীতা দেয়াল ধরে সাবধানে উঠে দাঁড়াল, দাঁড়িয়ে চারদিকে একবার তাকিয়ে বলল, আপনাকে কেন ধরে এনেছে?
আমার সেই কোডটার জন্য।
আপনি কি দিয়েছেন?
দিতে হয় নি। বাসা তোলপাড় করে নিজেরাই বের করে নিয়েছে।
তা হলে আপনাকে ধরে এনেছে কেন?
রিয়াজ একটা নিশ্বাস ফেলে বলল, আমি যেন কাউকে বলে না দিই সে জন্য। আমার মুখ বন্ধ করার চেষ্টা করবে।
কীভাবে করবে?
এ ব্যাপারে আমাদের ফ্রেন্ড লিস্টারের সৃজনী ক্ষমতা খুব কম। তার ধারণা টাকা দিয়েই সব করে ফেলা যায়।
নিশীতা ছোট ঘরটি ঘুরে ঘুরে পরীক্ষা করতে করতে হঠাৎ করে বলল, আমাদেরকে মেরে ফেলবে না তো?
রিয়াজ হাসান চমকে উঠে বলল, মেরে ফেলবে? মেরে ফেলবে কেন? একজন মানুষকে মেরে ফেলা কি এত সোজা?
জানি না। আমার কেন জানি ব্যাপারটা ভালো লাগছে না।
রিয়াজ মাথা নাড়ল, বলল, না। মেরে ফেলবে না। তোমার কথাটি ধর, তোমাকে মারতে চাইলে ঐ রাস্তাতেই মেরে ফেলতে পারত। মারে নি। তোমাকে অজ্ঞান করেছে– অনেক মানুষ দেখেছে তুমি রাস্তায় অজ্ঞান হয়ে পড়েছ, তোমাকে কিছু মানুষ তুলে নিয়ে গেছে। এখন যদি দেখে তোমার ডেডবডি, ব্যাপারটি নিয়ে সন্দেহ করবে না? পত্রপত্রিকায় হইচই শুরু হয়ে যাবে না? ফ্রেড লিস্টার একটা জিনিসকে খুব ভয় পায়–সেটা হচ্ছে খবরের কাগজ।
আপনার কথা যেন সত্যি হয়। নিশীতা একটা নিশ্বাস ফেলে বলল, কিন্তু কেন জানি পুরো ব্যাপারটি নিয়ে আমার কেমন ভয় ভয় করছে। আমার মনে হচ্ছে এর মাঝে খুব বড় একটা অশুভ ব্যাপার রয়েছে।
রিয়াজ আর নিশীতা দেয়ালে হেলান দিয়ে অপেক্ষা করতে থাকে। এ রকম পরিবেশে ক্ষুধা–তৃষ্ণার অনুভূতি থাকার কথা নয়, কিন্তু দুজনেই বেশ অবাক হয়ে আবিষ্কার করল তাদের বেশ খিদে পেয়েছে। রাত দশটার দিকে একজন গোমড়ামুখো আমেরিকান মানুষ এসে তাদের কিছু খাবার দিয়ে গেল। খাবারগুলো পশ্চিমা খাবার, খুব সম্ভ্রান্ত রেস্টুরেন্ট থেকে আনা হয়েছে–দুজনে বেশ গোগ্রাসে খাওয়া শেষ করল। এ রকম সময়ে ঘরের দরজা দ্বিতীয়বার খুলে গেল এবং দেখা গেল সেখানে ফ্রেন্ড লিস্টার দাঁড়িয়ে আছে। ফ্রেন্ড লিস্টারের পিছনে আরো দুজন পাহাড়ের মতো আমেরিকান মানুষ, মাথার চুল ছোট করে ছাটা দেখে মনে হয় মেরিন বা কমান্ডো জাতীয় কিছু। মানুষগুলো প্রকাশ্যেই স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র হাতে ঘুরছে। ফ্রেন্ড লিস্টার মুখে একটা হাসি ফুটিয়ে বলল, রিয়াজ, পুরোনো বন্ধু আমার, তোমাকে আর তোমার গার্লফ্রেন্ডকে দেখতে আসতে দেরি হয়ে গেল। আমি খুবই দুঃখিত। তবে– ফ্রেড লিস্টার নোংরা একটা ভঙ্গি করে চোখ টিপে বলল, আমি সবাইকে বলে দিয়েছিলাম কেউ যেন তোমাদের ডিস্টার্ব না করে। কথা শেষ করে সে বিকট স্বরে হাসতে শুরু করে।