নিশীতা দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ তাদের কথাবার্তা শুনল, যখন ভিড় একটু কমে এল সে এগিয়ে গিয়ে নিজের পরিচয় দিল। বড় অফিসার মুখে বিস্তৃত হাসি ফুটিয়ে বলল, আপনাকে আমি কীভাবে সাহায্য করতে পারি?
আমি ফ্রেড লিস্টার নামে একজন আমেরিকান বিজ্ঞানীকে খুঁজছি।
এখানে ফ্রেড লিস্টার নামে তো কেউ নেই।
এখানে না থাকতে পারেন, কিন্তু আমি নিশ্চিত এই এলাকায় আছেন। তাকে একটু খোঁজ দেওয়া যেতে পারে?
বড় অফিসারটি গম্ভীর মুখে বলল, আমি কমান্ডিং অফিসে খোঁজ করতে পারি।
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। ফ্রেন্ড লিস্টারকে পাওয়া গেলে তাকে একটা খুব জরুরি। ম্যাসেজ দিতে হবে।
কী ম্যাসেজ?
আমি একটা কাগজে লিখে দিই, ম্যাসেজটা কটমটে, এমনি বললে আপনার মনে থাকবে না। নিশীতা পকেট থেকে একটা কাগজ বের করে ইংরেজিতে লিখল, আমি রিয়াজ হাসানের এলগরিদমের কথা জানি। বব ম্যাকেঞ্জির সুটকেস ছাড়া ই.টি. বিষয়ক সাংবাদিক সম্মেলন আটকানো যাবে না।
কাগজটি হাতে নিয়ে বড় অফিসারটি ম্যাসেজটি পড়ে বলল, ঠিকই বলেছেন, এই ম্যাসেজ পড়ে মনে রাখা অসম্ভব! সাঙ্কেতিক ভাষার লেখা মনে হচ্ছে, পড়ে কিছুই তো বুঝতে পারলাম না!
নিশীতা হাসার ভঙ্গি করে বলল, জানা না থাকলে সবই সাঙ্কেতিক।
তা ঠিক। আপনি ওখানে বসুন, চা কফি কোল্ড ড্রিংকস আছে। আমি খোঁজ করে দেখি ফ্রেন্ড লিস্টারকে পাওয়া যায় কি না।
নিশীতা জানালার কাছে একটা নরম চেয়ারে বসে অপেক্ষা করতে থাকে। তার ভিতরে এক ধরনের অস্থিরতা তাকে এক মুহূর্ত শান্তি দিচ্ছে ঠিক, কিন্তু কী করবে সে বুঝতে পারছে না। ফ্রেন্ড লিস্টারের সাথে এভাবে দেখা করাটাও ঠিক হচ্ছে কি না সেটা নিয়েও সে আর নিশ্চিত নয়।
কয়েক মিনিটের মাঝে বড় অফিসারটি এসে বলল, ফ্রেড লিস্টারকে পাওয়া গেছে। প্রথমে আপনার সাথে কথা বলতে চাইছিল না কিন্তু আপনার ম্যাসেজটুকু পড়ে শোনানোর পর ম্যাজিকের মতো কাজ হয়েছে। একটা হেলিকপ্টারে করে চলে আসছে!
সত্যি?
হ্যাঁ। আপনি বসুন, বলেছে আধঘণ্টার মাঝে হাজির হবে।
আধঘণ্টার আগেই ছোট একটা খেলনার মতো হেলিকপ্টারে করে ফ্রেড লিস্টার হাজির হল। কাছাকাছি একটা ছোট মাঠে অনেক ধুলো ছড়িয়ে সেটি নামল এবং তার ভিতর থেকে ফ্রেন্ড লিস্টার মাথা নিচু করে নেমে এল। নিশীতা ঘরের ভিতরে দাঁড়িয়ে তার জন্য অপেক্ষা। করতে থাকে।
ফ্রেড লিস্টারকে ঘরে ঢুকতে দেখে নিশীতা মুখে জোর করে একটা হাসি ফুটিয়ে এগিয়ে গেল। ফ্রেড মুখ শক্ত করে বলল, তুমি কী চাও?।
আমি কী চাই সেটা পরে হবে, আগে সামাজিকতাটুকু সেরে নিই। নিশীতা হ্যান্ডশেক করার জন্য হাত এগিয়ে দিল। ফ্রেড হাত স্পর্শ করতেই নিশীতা ঘুরে উপস্থিত সাংবাদিকদের দিকে তাকিয়ে বলল, আপনারা একটা ছবি নিন। ইনি ফ্রেন্ড লিস্টার, আমেরিকান খুব বড় বিজ্ঞানী। আমাদের সাহায্য করতে এসেছেন।
সাংবাদিকেরা এগিয়ে এসে ফ্ল্যাশ জ্বালিয়ে চোখের পলকে অনেকগুলো ছবি তুলে নিল। ফ্রেড লিস্টারের মুখ হঠাৎ করে পাথরের মতো শক্ত হয়ে যায়। নিশীতা গলার স্বর নিচু করে বলল, এই ছবিগুলো নষ্ট করার জন্য তোমার বব ম্যাকেঞ্জির সুটকেসে টান পড়বে না তো?
ফ্রেড লিস্টার চোখ দিয়ে আগুন বের করে বলল, তুমি কী চাও?
আমি তোমার সাথে কথা বলতে চাই।
এস আমার সাথে।
কোথায়?
হেলিকপ্টারে।
তোমার নিশ্চয়ই মাথা খারাপ হয়ে গেছে! আমি তোমার সাথে হেলিকপ্টারে উঠি আর তুমি ধাক্কা দিয়ে হেলিকপ্টার থেকে ফেলে দিয়ে বল, এবোলা ভাইরাসের আক্রমণে মাথা খারাপ হয়ে হেলিকপ্টার থেকে লাফ দিয়েছে!
তা হলে কোথায় কথা বলবে?
বাইরে চল, ঐ গাছটার নিচে কেউ নেই।
নিশীতা ফ্রেড লিস্টারকে নিয়ে কাছাকাছি একটা ঝাঁপড়া কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে দাঁড়াল। ফ্রেড লিস্টার মুখ শক্ত করে বলল, তুমি কী বলতে চাও?
ড. রিয়াজ হাসান কোথায়?
সেটি আমি কী করে বলব?
দেখ ফ্রেড, আমার সাথে মামদোবাজি কোরো না। আমি জানি তুমি ড. রিয়াজ হাসানকে ধরে নিয়ে গেছ।
আমি তোমার কাছে সেই কৈফিয়ত দিতে বাধ্য নই।
বেশ। তা হলে আমি বলি আমি কী করব। আমি জানি এই এলাকায় একটা মহাজাগতিক প্রাণী এসেছে। সেই প্রাণীর সাথে তোমরা যোগাযোগ করার চেষ্টা করছ। ড. হাসানের এলগরিদমটা সে জন্য তোমাদের খুব জরুরি হয়ে পড়েছে। ভাইরাসের কথা আসলে একটা ভাঁওতাবাজি সেটা আমি খুব ভালো করে জানি।
তুমি এর কিছু প্রমাণ করতে পারবে না।
নিশীতা মাথা নাড়ল, তুমি এত নিশ্চিত হয় না। তোমার ছবি নেওয়া হয়েছে, ওয়েবসাইট থেকে তোমাদের ওরগানোগামটি ডাউনলোড করলেই দেখা যাবে তুমি ভাইরাসের এক্সপার্ট নও তুমি মহাজাগতিক প্রাণীর এক্সপার্ট। আমি একটা সাংবাদিক সম্মেলন করে কমপক্ষে এক শ সাংবাদিক নিয়ে আসতে পারি। আমরা থার্ড ওয়ার্ল্ড কান্ট্রি হতে পারি কিন্তু আমাদের সংবাদপত্র খুব স্বাধীন।
তুমি কত চাও?
নিশীতা একটা নিশ্বাস ফেলল, মানুষটি টোপ গিলতে শুরু করেছে। ধরেই নিয়েছে সে টাকার জন্য করছে, মনে হয় এই লাইনেই কথাবার্তা চালিয়ে যেতে হবে। সে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে ফ্রেডের দিকে তাকিয়ে বলল, প্রথমে রিয়াজ হাসানকে ছেড়ে দাও, তারপর আমি বলব।
ফ্রেড ঠোঁট কামড়ে খানিকক্ষণ কিছু একটা ভাবল, তারপর বলল, কিন্তু আমি কেমন করে নিশ্চিত হব যে তুমি কোনো পাগলামি করবে না?