হ্যাঁ আমি রিয়াজকে বলেছি। সে জানে। কিন্তু এখন সে নেই, আমার মনে হয় তোমাকেও বলতে হবে।
নিশীতা একটু ভয় পাওয়া গলায় বলল, কী বলবে?
তোমাদের অনেক বড় বিপদ নিশীতা।
নিশীতা চমকে উঠল, বলল, কী বললে?
বলেছি তোমাদের অনেক বড় বিপদ।
সেটা তুমি কেমন করে জানবে? তুমি পাঁচ শ বারো মেগাবাইটের একটা প্রোগ্রাম!
আমি পাঁচ শ বারো মেগাবাইটের একটা প্রোগ্রাম না। আমি পাঁচ শ বারো মেগাবাইটের একটা প্রোগ্রাম ব্যবহার করছি তোমার সাথে কথা বলার জন্য। তোমাদের সাথে কথা বলার এর চাইতে সহজ কোনো উপায় আমি খুঁজে পাই নি।
নিশীতা কাঁপা গলায় বলল, তুমি কে?
আমি সেটা বললে তুমি বুঝতে পারবে না, নিশীতা।
কেন? কেন বুঝতে পারব না?
একটা পিঁপড়া থেকে তুমি কি অনেকগুণ বেশি বুদ্ধিমান নও?
হ্যাঁ।
কিন্তু তুমি কি একটা পিঁপড়াকে বোঝাতে পারবে তুমি কে?
নিশীতা নিশ্বাস আটকে রেখে বলল, তুমি দাবি করছ তোমার বুদ্ধিমত্তার কাছে আমি পিঁপড়ার মতো?
এটি একটি উপমা।
নিশীতা মনিটরটির কাছে গিয়ে বলল, আমি তোমার উপমা বিশ্বাস করি না।
তোমাকে আমার কথা বিশ্বাস করতে হবে।
কেন?
কারণ তোমাদের অনেক বড় বিপদ। তোমাদের সাহায্য করার কেউ নেই।
কেন আমাদের অনেক বড় বিপদ?।
কারণ তোমরা চতুর্থ মাত্রার একটা মহাজাগতিক প্রাণীকে পৃথিবীতে ডেকে এনেছ।
নিশীতা ভুরু কুঁচকে বলল, আমরা?
হ্যাঁ। তোমরা। পৃথিবীর মানুষেরা। ফ্রেড লিস্টার আর তার দলবলেরা।
তাতে কী হয়েছে?
চতুর্থ মাত্রার প্রাণী এখানে তার প্রভৃতি রেখে যাবে।
রেখে গেলে কী হয়?
সেটি অনেক বড় বিপদ। দুইটি ভিন্ন বুদ্ধিমত্তার প্রাণী এক সময় এক জায়গায় থাকতে পারে না। একটি অন্যকে পরাভূত করে।
নিশীতা কোনো কথা না বলে এক ধরনের বিষয় নিয়ে মনিটরটির দিকে তাকিয়ে রইল–এটি কি সত্যিই বিশ্বাসযোগ্য যে একটি কম্পিউটার প্রোগ্রাম হঠাৎ করে এ রকম হয়ে যেতে পারে? নিশীতা হতবাক হয়ে মনিটরের এপসিলনের ভাবলেশহীন মুখের দিকে তাকিয়ে রইল, একটু পর সংবিৎ ফিরে পেয়ে বলল, আমরা এখন কী করব?
আমি জানি না।
তুমি জান না? তুমি বলেছ তুমি এত বড় বুদ্ধিমান প্রাণী, তা হলে তুমি জান না কেন?
কারণ তোমাদের সভ্যতাকে আমার স্পর্শ করার কথা নয়। তোমাদের সমস্যার সমাধান তোমাদের নিজেদেরই বের করতে হবে। আমি দুঃখিত নিশীতা।
তা হলে? তা হলে আমাদের কী হবে?
আমি জানি না।
.
নিশীতা দীর্ঘ সময় একা একা বসে রইল, কী করবে বুঝতে পারছে না। হঠাৎ করে সে বুঝতে পারল তার ভয়ঙ্কর খিদে পেয়েছে। নিশীতা ঘরের বারান্দায় বসে তার খাবারের প্যাকেট বের করে বুভুক্ষের মতো খেতে শুরু করে। একা খাবে না বলে এখানে এসেছিল কিন্তু আবার
তাকে একাই খেতে হল। সে ঘড়ির দিকে তাকাল, প্রায় দুটো বেজে গিয়েছে। ভাইরাস আক্রান্ত বলে যে বিশাল এলাকা ঘিরে রাখা হয়েছে সেই এলাকাটা গিয়ে একবার দেখে আসতে হয়। রিয়াজ হাসান কোথায় আছে কে জানে। সত্যিই যদি ফ্রেন্ড লিস্টারের দল তাকে ধরে নিয়ে থাকে তা হলে তাকে ছাড়িয়ে আনা যায় কীভাবে? পুলিশের লোক কি বিশ্বাস করবে তার কথা? ফ্রেড লিস্টার নাকি দুই সুটকেস ভরে ডলার নিয়ে এসেছে, এই ডলারের সাথে সে কি যুদ্ধ করতে পারবে?
» ০৭. কালা জব্বারের মৃতদেহটি
কালা জব্বারের মৃতদেহটি যেখানে পাওয়া গিয়েছিল তার কাছাকাছি যাবার আগেই মিলিটারি পুলিশ নিশীতাকে আটকাল। বিস্তৃত এলাকা কাটাতার দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে, উপরে হাই ভোল্টেজ বৈদ্যুতিক তার, নিশীতা জেমসবন্ডের সিনেমাতে এ রকম দেখেছে, সত্যি সত্যি যে হতে পারে তার ধারণা ছিল না। মিলিটারি পুলিশটি ভদ্রভাবে বলল, আপনি কোথায় যেতে চাইছেন?
নিশীতা হেলমেট খুলে তার কার্ড বের করে দেখিয়ে বলল, আমি সাংবাদিক, এই এলাকার ওপর রিপোর্ট করতে এসেছি।
ও! সাংবাদিকদের জন্য আলাদা সেল করা হয়েছে–আপনি এই রাস্তা ধরে সোজা এক মাইল চলে যান। ঘণ্টায় ঘণ্টায় সেখানে নিউজ বুলেটিন দেওয়া হচ্ছে।
ঘণ্টায় ঘণ্টায় গৎবাঁধা যে বুলেটিন দেওয়া হয় সেটাতে নিশীতার উৎসাহ নেই, সে ভিতরে একবার দেখে আসতে চায়, তাকে যেতে দেবে বলে মনে হয় না, কিন্তু তবু একবার চেষ্টা করল, বলল, আমি মোটর সাইকেলটা এখানে রেখে ভিতর থেকে চট করে দুটো ছবি তুলে নিয়ে আসি?
নিশীতার কথা শুনে হঠাৎ করে মিলিটারি পুলিশটির মুখ শক্ত হয়ে গেল, সে কঠিন গলায় বলল, না, কাউকে ভিতরে যেতে দেওয়া যাবে না। আপনি সাংবাদিকদের সেলে যান।
নিশীতা মাথায় হেলমেট চাপিয়ে তার মোটর সাইকেল স্টার্ট করল, পুরো এলাকাটা একেবারে নিচ্ছিদ্রভাবে ঘিরে রাখা হয়েছে। এর ভিতরে কোথাও নিশ্চয়ই একটা মহাজাগতিক প্রাণী আছে, কী বিচিত্র ব্যাপার এখনো তার বিশ্বাস হতে চায় না।
সাংবাদিকদের জন্য সেলটি খুব সুন্দর করে করা হয়েছে, তাদেরকে সংবাদ দেওয়া থেকে আপ্যায়ন করার মাঝে অনেক বেশি জোর দেওয়া হয়েছে। বেশ কিছু সাংবাদিক এসেছেন, তারা মনে হয় বেশ ভালোভাবে আপ্যায়িত হয়ে আছেন। কয়েকটি কম্পিউটারে বুলেটিন প্রস্তুত করে তার প্রিন্ট আউট, রঙিন ছবি দেওয়া হচ্ছে। প্রশ্নের উত্তর দেবার জন্য একজন বড় অফিসার আছেন, তার সাথে সাদা পোশাক পরা দুজন ডাক্তার। সাংবাদিকরা তাদের নানা ধরনের প্রশ্ন করছে।