দরজার কাছে দাঁড়িয়ে কঠিন চেহারার মানুষটি ফ্রেন্ড লিস্টারকে ডাকল, চলে এস ফ্রেড।
ফ্রেড খানিকটা কৌতুকের ভঙ্গিতে রিয়াজের দিকে তাকিয়ে চোখ টিপে ঘর থেকে বের হয়ে গেল।
সবাই বের হয়ে যাবার পর রিয়াজ হাসান নিশীতার দিকে তাকিয়ে হাসার চেষ্টা করল, বলল, তুমি না এলে খুব বড় বিপদে পড়ে যেতাম। থ্যাংকস নিশীতা।
রিয়াজ হাসান নিশীতাকে আপনি করে বলত, ঘটনার উত্তেজনায় এখন তুমি করে বলছে! নিশীতা সেটা নিয়ে মাথা ঘামাল না, বলল, ইউ আর ওয়েলকাম। তারপর বুক থেকে আটকে থাকা একটা নিশ্বাস বের করে দিয়ে বলল, এখানে কী হচ্ছে আমি কিছু বুঝতে পারছি না।
আমিও বুঝতে পারছি না। তবে বোঝা যাচ্ছে মহাকাশ থেকে কিছু একটা আসা নিয়ে তুমি যে সন্দেহ করছিলে সেটা সত্যি।
নিশীতা চমকে উঠে রিয়াজের দিকে তাকাল, সত্যি?
হ্যাঁ। দেখতেই পাচ্ছ আমেরিকা থেকে পুরো দল চলে এসেছে। পালের গোদা হচ্ছে ফ্রেড লিস্টার। আমরা ওকে ডাকতাম ফ্রেড ব্লিস্টার। ব্লিস্টার মানে ফোঁসকা। বিষফোড়া ভয়ানক বদমাইশ।
কেন? কী হয়েছে?
মহাজাগতিক প্রাণীর সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করার সময় কিছু নিয়মকানুন মানতে হয়। পৃথিবীর নিরাপত্তার ব্যাপারটি দেখতে হয়। কিন্তু ফ্রেড লিস্টার এই বিষফোড়া সেসব করত না। একবার করেছে কী–
রিয়াজ হঠাৎ কথা থামিয়ে বলল, ওসব ছেড়ে দাও। নতুন যন্ত্রণা নিয়ে বাঁচি না, পুরোনো যন্ত্রণার কথা বলতে ভালো লাগে না।
নিশীতা জিজ্ঞেস করল, নতুন যন্ত্রণাটি কী?
মহাজাগতিক প্রাণীর সাথে যোগাযোগ করার জন্য আমি যে এলগরিদম তৈরি করেছিলাম এই ব্যাটা সেটা চায়।
কিন্তু আমি তো দেখেছি আপনি সেটি পাবলিশ করেছেন। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের জার্নালে সেটা প্রকাশ হয়েছে।
সেটা ছিল প্রাথমিক ভার্সান। পুরো কাজটুকু শেষ করার পর সেটা কোথাও প্রকাশ হয় নি।
সেটা কী ধরনের কাজ?
রিয়াজ হাসান জিনিসটা কীভাবে বোঝাবে সেটা নিয়ে দুই এক মুহূর্ত চিন্তা করে বলল, আমরা যেহেতু মানুষ তাই যখন যোগাযোগের কথা বলি সবসময় একজন মানুষ অন্য মানুষের সাথে কীভাবে যোগাযোগ করবে সেইভাবে চিন্তা করি। কিন্তু যদি একটা মহাজাগতিক প্রাণীর সাথে যোগাযোগ করতে হয় তা হলে মানুষের মতো চিন্তা করলে হবে না। যে কোনো বুদ্ধিমত্তার কাছে গ্রহণযোগ্য একটা উপায়ে যোগাযোগ করতে হবে। আমার এলগরিদমটা তাই.–মানুষের থেকে অনেকগুণ বেশি বুদ্ধিমত্তার সাথে যোগাযোগ করার একটা উপায়।
ও! ফ্রেড লিস্টার সেটা চাইছে?
হ্যাঁ। আমি ফ্রেন্ড লিস্টারকে চিনি, তাই তাকে দিতে রাজি হই নি।
তার মানে আমার সন্দেহ সত্যি। আসলেই এখানে কোনো মহাজাগতিক প্রাণী এসে নেমেছে?
আমার তাই ধারণা।
নিশীতা তখনো পুরো ব্যাপারটি পুরোপুরি আত্মস্থ করতে পারে নি। নিজেকে সামলে নিয়ে কিছু একটা জিজ্ঞেস করতে যাচ্ছিল, রিয়াজ হাসান তাকে বাধা দিয়ে বলল, কী বিচিত্র ব্যাপার তুমি একেবারে
আমি একেবারে?
রিয়াজ হঠাৎ অপ্রস্তুত হয়ে বলল, ছিঃ ছিঃ, কী লজ্জা আপনি এত বড় একজন সাংবাদিক অথচ আপনাকে এতক্ষণ থেকে তুমি করে বলছি!
নিশীতা মাথা নাড়ল, বলল, সেটা নিয়ে মাথা ঘামাবেন না। কী বলছিলেন বলেন।
আমি বলছিলাম কী, আপনি মানে তুমি ঠিক সময়ে হাজির হয়েছ, তুমি যদি ঠিক এই সময়ে না আসতে–
আসব না কেন, খবর পাওয়ার পর আমি দেরি করি নি।
খবর? রিয়াজ অবাক হয়ে বলল, কিসের খবর?
ঐ যে টেলিফোনে খবর পাঠালেন।
খবর পাঠিয়েছি? আমি?
তা হলে কে? আমাকে টেলিফোনে আসতে বলল—
কে বলেছে?
নিশীতা ভুরু কুঁচকে রিয়াজের দিকে তাকাল, আপনি কাউকে দিয়ে খবর পাঠান নি?
না।
আশ্চর্য! আমার মনে হল মানুষটাকে আমি চিনি, গলার স্বর আগে কোথাও শুনেছি। নিশীতা হঠাৎ চমকে উঠে বলল, এপসিলন!
কী হয়েছে এপসিলনের?
এপসিলন আমাকে ফোন করেছিল! এখন মনে পড়েছে–সেটা ছিল এপসিলনের গলার স্বর। প্রশ্ন করে কথা বলছিল।
রিয়াজ খানিকক্ষণ অবাক হয়ে নিশীতার দিকে তাকিয়ে রইল–তার দৃষ্টি দেখে মনে হল নিশীতার নিশ্চয়ই মাথা খারাপ হয়ে গেছে। নিশীতা একটু অপ্রস্তুত হয়ে রিয়াজের দিকে তাকিয়ে বলল, কী হল? আপনি এভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন কেন?
রিয়াজ হাসি গোপন করার চেষ্টা করতে করতে বলল, তোমার কল্পনাশক্তি দেখে আমি মুগ্ধ হয়েছি।
আপনি আমার কথা বিশ্বাস করলেন না? এপসিলনকে জিজ্ঞেস করে দেখুন।
দেখ নিশীতা, তার কোনো প্রয়োজন নেই। এপসিলনের পুরো কোডটা আমি লিখেছি। এটা একটা ছেলেমানুষি প্রোগ্রাম। তোমাকে টেলিফোন করার ক্ষমতা এর নেই।
কিন্তু এপসিলন আমার টেলিফোন নম্বরটি জানত কি না?
রিয়াজ মাথা নেড়ে বলল, তুমি এমনভাবে কথা বলছ যেন এপসিলন একটি সত্যিকার মানুষ, তার বুদ্ধিমত্তা আছে।
নিশীতা অধৈর্য হয়ে বলল, আপনি আমার প্রশ্নের উত্তর দেন নি–এপসিলন কি আমার টেলিফোন নম্বর জানে?
আমি তোমার টেলিফোন নম্বরটি ওর ডাটাবেসে রেখেছিলাম– প্রয়োজনীয় নাম ঠিকানা রেখে দিই। তার অর্থ এই নয় যে, সে সেটি জানে।
নিশীতা চোখ বড় বড় করে বলল, আমার সেলফোনে টেলিফোন করার মতো হার্ডওয়্যারের সাথে এপসিলনকে লাগিয়ে রেখেছেন কি না?
রিয়াজকে হঠাৎ কেমন যেন হতচকিত দেখাল, খানিকক্ষণ অবাক হয়ে নিশীতার দিকে তাকিয়ে থেকে বলল, মজার ব্যাপার জান–সেদিন তুমি চলে যাবার পর আমি সত্যি সত্যি একটা এ্যান্টেনার সাথে ট্রান্সমিটারটা জুড়ে দিয়েছিলাম। মহাজাগতিক প্রাণীর সাথে যোগাযোগ করার জন্য আমার এলগরিদম ব্যবহার করে একটা সিগনাল পাঠাচ্ছিল–খুব দুর্বল সিগনাল, ঢাকা শহরের ভিতরে যেতে পারে। সেই সিগনালটি ব্যবহার করে তোমার সেলফোনে যোগাযোগ করা সম্ভব।