অস্ত্র?
হ্যাঁ। অস্ত্র।
যে অস্ত্র দিয়ে মানুষকে হত্যা করা হয়?
হ্যাঁ। এই মহাকাশযানে অস্ত্র বলতে গেলে নেই। যখন এর পরিকল্পনা করা হয়েছিল তখন অস্ত্রের কোনো প্রয়োজন ছিল না। কিন্তু এখন এই মহাকাশযানে সবচেয়ে প্রয়োজনীয় জিনিস হচ্ছে অস্ত্র।
অস্ত্র? আমি হতচকিতের মতো বললাম, আমাকে অস্ত্র তৈরি করতে হবে? অন্ত্র? . হ্যাঁ। অস্ত্র তৈরি করার প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি নেই কাজেই এখানে যা আছে তাই ব্যবহার করতে হবে
অস্ত্র? আমি আবার বিড় বিড় করে বললাম, অস্ত্র? যে অস্ত্র দিয়ে মানুষকে হত্যা করা হয়?
রী কয়েক মুহূর্ত চুপ করে থেকে বলল, তুমি তোমার দায়িত্বটি খুব সহজ ভাবে নিতে পার নি কিহা।
আমি লেনের দিকে তাকালাম, লেন দুর্বলভাবে হাসার চেষ্টা করে বলল, মিয়ারাকে বুঝিয়ে বললে সে নিশ্চয়ই তোমাকে অন্য একটা দায়িত্ব দেবে। নিশ্চয়ই দেবে।
রী ভারি গলায় বলল, তার সম্ভাবনা বলতে গেলে শূন্য। মিয়ারাকে তোমরা এখনো ঠিক বুঝে উঠতে পার নি। সে অত্যন্ত দৃঢ় চরিত্রের মহিলা। তার মাঝে কোনো অকারণ ভাবালুতা নেই।
আমি চুপ করে রইলাম। রী হলোগ্রাফিক স্ক্রিনে কিছু যন্ত্রপাতির ছবি ফুটিয়ে তুলে বলল, আমাদের সরবরাহ ঘরে যে সমস্ত জিনিষ আছে সেগুলি এরকম। শক্তিশালী লেজার খুব বেশী নেই তবে ভাল বিস্ফোরক রয়েছে।
আমি চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ালাম। লেনও সাথে সাথে উঠে দাঁড়াল, রী জিজ্ঞেস করল, তোমরা কোথায় যাচ্ছ?
আমি কোনো উত্তর দিলাম না, অন্যমনস্কভাবে হেঁটে-হেঁটে ঘরের মাঝখানে এসে দাঁড়ালাম, লেন কাতর মুখে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, তুমি কোথায় যাচ্ছ কিহা?
আমি জানি না।
তুমি এখন কী করবে?
আমি সেটাও জানি না। আমি কয়েক মুহূর্ত চুপ করে থেকে বললাম, কিন্তু আমি তো মানুষকে হত্যা করার জন্যে অস্ত্র তৈরি করতে পারি না। কিছুতেই–
আমার কথা শেষ হবার আগেই আমার সামনে একটা আলোর বিচ্ছুরণ দেখা গেল এবং মুহূর্তে সেটা ত্রিমাত্রিক একটা হলোগ্রাফিক মানুষের রূপ নিয়ে নেয়। মানুষটি ঝড়ের বেগে আমার দিকে ছুটে আসে–আমি তাকে চিনতে পারলাম, মানুষটি মিয়ারা।
মিয়ারা সামনে দাঁড়িয়ে আমার দিকে তীব্র দৃষ্টিতে তাকাল। তার মুখের রং পাল্টে যেতে থাকে এবং তাকে অতি প্রাকৃতিক ভৌতিক একটা মূর্তির মতো দেখাতে থাকে। সে তীক্ষ্ণ গলায় বলল, তুমি আমার আদেশ অমান্য করার দুঃসাহস দেখিয়েছ?
আমি কোনো কথা না বলে মিয়ারার দিকে তাকিয়ে রইলাম। তার মুখের ভঙ্গি আস্তে আস্তে পাল্টে যেতে থাকে, বিচিত্র এক ধরনের বর্ণ সেখানে খেলা করছে। আমি শান্ত গলায় বললাম, তুমি কী প্রকৃত মিয়ারা নাকি তার একটি প্রতিচ্ছবি?
মিয়ারা স্থির দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে থেকে হিংস্র গলায় বলল, তাতে কিছু আসে যায় না। তুমি আমার প্রশ্নের উত্তর দাও।
আমার উত্তর দেবার কিছু নেই। আমি আদেশ দিতে বা শুনতে অভ্যস্ত নই।
তুমি জান তুমি কী করতে যাচ্ছ?
সম্ভবত জানি। অস্ত্র তৈরি কার কিছু মানুষকে হত্যা করা আর সেটা তৈরি না করার জন্যে নিজেকে হত্যা করতে দেয়ার মাঝে বিশেষ পার্থক্য নেই। দুটিই একই ধরনের নিবুদ্ধিতা। আমি এক মুহূর্ত চুপ করে থেকে বললাম, ইচ্ছে করলেই আমি অস্ত্র তৈরি করছি বলে তোমাকে ধোকা দিতে পারতাম। আমার বুদ্ধিমত্তা নিনীষ স্কেলে আট, তোমার মতো কয়েকজনকে ধোকা দেয়া আমার জন্যে কঠিন কিছু নয়। কিন্তু আমি দিই নি।
মিয়ারা আমার দিকে হতচকিত হয়ে তাকিয়ে রইল। কয়েক মুহূর্ত পর বলল, ঠিক আছে তোমাকে শেষ একটি সুযোগ দিচ্ছি। কয়েকঘণ্টার মাঝে আটজন মানুষকে শীতলঘর থেকে জাগানো হচ্ছে। এই মানুষগুলিকে জাগানো হচ্ছে মহাকাশযানের কেন্দ্রীয় তথ্যকেন্দ্রের সর্বোচ্চ ক্ষমতার বিশেষ আদেশে। এই মানুষগুলির বিশেষ কোনো গুরুত্ব আছে। আমি এই মানুষগুলিকে চাই।
মানুষগুলিকে চাও?
হ্যাঁ। আমি খবরটি পেয়েছি আমার বিশেষ ক্ষমতার জন্যে। সবাই খবরটি জানে না–যদি জানত তাহলে মহাকাশযানের প্রত্যেকটি দল তাদের সমস্ত শক্তি নিয়ে এই আটজন মানুষকে ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করত। তুমি যদি পরবর্তী কয়েক ঘন্টার মাঝে মানুষগুলিকে আমার এখানে এনে হাজির করে দিতে পার তোমাকে আমি বেঁচে থাকার আরেকটা সুযোগ দেব।
আমি কোনো কথা না বলে মিয়ারার দিকে তাকিয়ে রইলাম–নিজের ভিতরে হঠাৎ এক ধরনের বিতৃষ্ণা জমে উঠতে থাকে। মিয়ারা আমার দিকে কয়েকমুহূর্ত স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে যেভাবে হঠাৎ করে হাজির হয়েছিল ঠিক সেভাবে অদৃশ্য হয়ে গেল।
আমি হেঁটে হলোগ্রাফিক মনিটরটির কাছাকাছি এসে হাজির হতেই রী চাপা গলায় বলল, তুমি অত্যন্ত সৌভাগ্যবান একজন মানুষ। আমি এর আগে মহামান্যা মিয়ারাকে কাউকে ক্ষমা করতে দেখি নি।
আমি চেয়ারটায় বসতে বসতে বললাম, সে জন্যে তোমার মন খারাপ হয়ে গেছে বলে মনে হচ্ছে।
রী তার গলায় এক ধরনের আহত ভঙ্গি ফুটিয়ে তুলে বলল, তুমি এরকম কথা, কেন বলছ?
তোমার মহামান্যা মিয়ারাকে আমার খবরটি পৌঁছাতে তুমি পিকোসেকেন্ডও দেরি কর নি–তাই বলছি।
রী একটা নিঃশ্বাস ফেলার মতো শব্দ করে বলল, সেটাই আমার দায়িত্ব। আমাকে সেভাবে প্রোগ্রাম করা হয়েছে।
আমি তোমাকে নূতনভাবে প্রোগ্রাম করে দিই? এখন থেকে তুমি আমার জন্যে কাজ করবে?
রী কয়েক মুহূর্ত চুপ করে থেকে বলল, তুমি যদি আমাকে সেভাবে প্রোগ্রাম করতে পার অবশ্যিই আমি তোমার জন্যে কাজ করব!