আমি গলায় ভয় এবং আতংক ফুটিয়ে বললাম, বাইরের সাথে সমস্ত যোগাযোগ কেটে দাও।
দিচ্ছি।
আমাকে নিয়ন্ত্রণ করতে দাও।
দিচ্ছি–
আমি কন্ট্রোল প্যানেলের সামনে গিয়ে বসে বললাম, নিচু দিয়ে উড়তে শুরু কর। দ্বিতীয় স্তরে থামতে হবে।
কিন্তু–
কোন কথা বলার সময় নেই, তাড়াতাড়ি—
সাথে সাথে স্কাউটশিপের গর্জন করে উড়তে শুরু করে।
দ্বিতীয় স্তরে লেন বাচ্চাগুলিকে নিয়ে প্রস্তুত হয়েছিল। আমি এক মুহূর্তের জন্যে দরজা খুলতেই সে সবাইকে নিয়ে হুঁড়মুড় করে ঢুকে পড়ে। আমি গলা উচিয়ে বললাম, মূল প্রবেশপথ দিয়ে বের হয়ে যাও। তাড়াতাড়ি
কিন্তু–
এর মাঝে কোনো কিন্তু নেই। তোমাকে বুঝিয়ে বলার সময় নেই।
স্কাউটশিপের ভেতরে আর কোনো কথা শোনা গেল না। সেটা নিচু হয়ে ছুটতে শুরু করে এবং দেখতে দেখতে এর বেগ বেড়ে যেতে থাকে।
লেন নিচু গলায় বলল, আমরা এখন কোথায় যাব?
কাছাকাছি কোনো শীতল ঘরে। আমি কিছু নকল ট্রাকিওশান তৈরি করে রেখেছি, এখান থেকে বের হয়ে শরীরে লাগিয়ে নিতে হবে।
লেন কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল ঠিক তখন স্কাউটশিপটা ঝাকুনী দিয়ে থেমে যায় এবং ভেতরে আমরা সবাই হুঁড়মুড় করে পড়ে গেলাম। ছোট বাচ্চাগুলি ব্যাপারটা এক ধরনের খেলা মনে করে উচ্চৈঃস্বরে হাসতে শুরু করে।
আমি একটু শংকিত হয়ে বললাম, কী হয়েছে? থামছ কেন?
প্রতিরক্ষাকেন্দ্র তোমাদের পরিচয় জানতে চাইছে।
আমি কঠিন গলায় বললাম, তোমাকে আমি বলেছি আমাদের হাতে কোনো সময় নেই। তুমি বের হয়ে যাও।
প্রতিরক্ষাকেন্দ্র তাহলে আমাদের আক্রমণ করবে।
করলে করবে। আমি তোমাকে নির্দেশ দিচ্ছি তুমি এই মুহূর্তে বের হয়ে যাও।
এটি বেআইনি–
আমি তোমাকে এই বেআইনি কাজ করার নির্দেশ দিচ্ছি।
স্কাউটশিপের বিধ্বস্ত কন্ট্রোল প্যানেলে কিছু আলোর ঝলকানী দেখা গেল, তারপর যেরকম হঠাৎ করে এটি থেমেছিল ঠিক সেরকম করে হঠাৎ এটি ছুটতে শুরু করল।
স্কাউটশিপটি যখন তার গতিবেগ নিয়ন্ত্রণ করে মহাকাশযানের বিশাল করিডোর ধরে নির্দিষ্ট পথে ছুটতে শুরু করেছে তখন লেন একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলল, তোমার কি মনে হয় কিহা, আমরা কী পালিয়ে যেতে পারব?
নিশ্চয়ই পারব।
প্রতিরক্ষা ব্যুহ থেকে আমাদের পিছু নেবে না?
আমরা আমাদের ট্রাকিওশান ফেলে এসেছি, আমরা কে তারা এখনো জানে। তারা জানার আগেই আমরা শীতল ঘরে ঢুকে যাব।
আমরা কি পারব?
আমি উত্তর দেবার আগেই স্কাউটশিপের কন্ট্রোল প্যানেল থেকে উত্তর ভেসে এল, সেটি বলল, আমার ধারণা পারবেন না।
কেন?
এই মাত্র তিনটি বাই ভার্বাল স্কাউটশিপের কন্ট্রোল লক ইন করেছে। যে কোনো মুহূর্তে বিস্ফোরক দিয়ে এটিকে ধ্বংস করে দেবে।
আমি কন্ট্রোল প্যানেলের সামনে একটি চেয়ারে বসে নিজেকে চেয়ারের সাথে আষ্টেপৃষ্টে বেঁধে নিতে নিতে বললাম, লক ইন করার মাইক্রো-সেকেন্ডের মাঝে আঘাত করা যায়। এখনো যখন করে নি–তার মানে তারা আঘাত করবে না।
কেন করবে না?
সম্ভবত তারা আমাদের পরিচয় জেনে গেছে।
লেন ফ্যাকাসে মুখে বলল, সর্বনাশ! আমরা তাহলে কী করব?
দেখি কী করা যায়। আমি দ্রুত চিন্তা করতে করতে বললাম, তুমি বাচ্চাগুলিকে চেয়ারগুলির মাঝে শক্ত করে বেঁধে দাও, আমার মনে হয় স্কাউটশিপটা নিয়ে কিছু লাফঝাঁপ দিতে হবে।
কী রকম লাফঝাঁপ?
বড় ধরনের। আমি একটা পর্যবেক্ষণকেন্দ্র ভেঙে মহাকাশে বের হয়ে যাবার কথা ভাবছি।
লেন অবিশ্বাসের ভঙ্গিতে আমার দিকে তাকাল। সে আমার কথা বিশ্বাস করতে পারছে না। আমি দুর্বলভাবে হেসে বললাম, আমাদের স্কাউটশিপ মহাকাশে যেতে পারে, আমাদের পিছু নিয়েছে সাধারণ বাই ভার্বাল সেগুলি মহাকাশে যেতে পারবে না।
কিন্তু আমরা কেমন করে মহাকাশে যাব?
আমি এখনো জানি না।
পর্যবেক্ষন কেন্দ্রের জানালা সবসময় বন্ধ থাকে।
কিন্তু যদি প্রচণ্ড গতিতে সোজাসুজি পর্যবেক্ষণকেন্দ্রের দিকে ছুটে যেতে শুরু করি সম্ভবত একটা জানালা খুলে যাবে। আমরা সেই জানালা দিয়ে বের হয়ে যাব।
কেন জানালা খুলবে?
মহাকাশযানকে রক্ষা করার জন্যে। একটা স্কাউটশিপ প্রচণ্ড গতিতে যেতে পারে, এর গতিশক্তি মেগাজুল পর্যন্ত হতে পারে। মহাকাশযান তার দেয়ালে মেগাজুল শক্তিতে আঘাত করতে দেবে না। সেটি মহাকাশযানের জন্য বিপজ্জনক।
লেন কোনো কথা না বলে আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। খানিকক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, কিন্তু তোমার ধারণা যদি ভুল হয়?
আমি লেনের প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে কন্ট্রোল প্যানেলে ঝুঁকে পড়ে বললাম, স্কাউটশিপ, আমি চাই তুমি ধীরে ধীরে গতিবেগ বাড়িয়ে উপরে ওঠে এস।
মহাকাশযানের ভেতরে আমার গতিবেগ বাড়ানোর উপায় নেই। স্কাউটশিপটি এক মুহূর্ত অপেক্ষা করে বলল, এটি বিপজ্জনক।
ঠিক আছে, তুমি নিয়ন্ত্রণটি আমার হাতে দিয়ে দাও।
তোমার হাতে? তুমি স্কাউটশিপ কখনো নিয়ন্ত্রণ করেছ?
আমি সেটা নিয়ে আলোচনায় যেতে চাই না। আমি কোনো জটিল কাজ করতে যাচ্ছি না। সোজাসুজি মহাকাশযানের দেয়ালে আঘাত করতে যাচ্ছি–
স্কাউটশিপের মূল নিয়ন্ত্রণের জন্যে যে বোম রয়েছে সেটা স্পর্শ করতেই নিয়ন্ত্রণটুকু আমার হাতে চলে এল। আমি শক্তিকেন্দ্রে চাপ দিয়ে স্কাউটশিপের গতিবেগ বাড়াতে শুরু করি, আমার দুই পাশে দিয়ে মহাকাশযানের করিডোর পিছনে ছুটে যেতে শুরু করল। আমি গতিবেগ আরো বাড়ানোর চেষ্টা করতেই যোগাযোগ মডিউলে আমাদের পিছনে লেগে থাকা বাই ভার্বালের আরোহীর গলায় স্বর শুনতে পেলাম, চিৎকার করে কঠোর গলায় বলল, কিহা, আমি জানি তুমি স্কাউটশিপে আছ। এই মুহূর্তে নিচে নেমে আস, না হয় তোমাকে গুলি করব–