সত্যি?
হ্যাঁ। আমি এর মাঝে অনেক কিছু শিখিয়েছি। দেখবে?
দেখাও।
লেন তার হাত উঁচু করে বলল, এইটা কী?
বাচ্চাগুলি উচ্চৈঃস্বরে চিৎকার করে বলল, হাত! হাত!
লেন নিজের চুল স্পর্শ করে বলল, এইটা কী?
চুল! চুল!
লেন নিজের নাক স্পর্শ করে বলল, এইটা কী?
নাক! নাক!
আমরা সবাই মিলে কোথায় যাব?
পৃ! পৃ!
পূ? আমি একটু অবাক হয়ে লেনের দিকে তাকালাম। লেন হেসে ফেলে বলল, একটা শব্দ কঠিন হয়ে গেল সেটাকে কেটে ছেটে সহজ করে ফেলে!
পৃথিবীকে করেছে পৃ। কী বুদ্ধি দেখেছ?
তাই তো দেখছি।
আরো অনেক মজার ব্যাপার আছে–নিজেরা নিজেরা একটা ভাষা তৈরি করে ফেলেছে। কিচির মিচির করে নিজেদের ভিতর কী বলে আমি কিছুই বুঝি না।
মজার ব্যাপার তো।
হ্যাঁ–ছোট বাচ্চার মাঝে এত মজার ব্যাপার লুকানো আছে তুমি দেখলে অবাক হয়ে যাবে। একটু আগে কী হয়েছে শোন
লেন একটু আগে খাবার সময় বাচ্চাগুলি তাদের পানীয় নিয়ে কী দুষ্টুমি করেছে সেটা খুব উৎসাহ নিয়ে বলতে শুরু করে। আমি নিজের বিস্ময়টুকু গোপন করে মুখে একাগ্রতার একটা ভাব ফুটিয়ে তুলি। আমি নিজের চোখে না দেখলে কখনোই বিশ্বাস করতে পারতাম না লেনের মতো একটি মেয়ে ছোট শিশুদের নিয়ে এ ধরনের উচ্ছাস দেখাতে পারে।
আমি একটা নিঃশ্বাস ফেললাম, বাচ্চাগুলিকে বাঁচাতে হবে, যেভাবেই হোক।
চতুর্থ স্তরে নানা ধরনের স্কাউটশিপ রাখা আছে আমি সেগুলি দেখে একটাকে বেছে রাখলাম। এটা তৈরি হয়েছিল মহাকাশযানের বিভিন্ন অংশ পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্যে, বায়ুশূন্য মহাকাশে যেতে পারে বলে এটি বায়ু নিরোধক, ছোটখাট গোলাগুলি সহজে সহ্য করতে পারবে। নিয়ন্ত্রণটুকু পুরোপুরি যান্ত্রিক আমাকে সেটা নিয়ে মাথা ঘামাতে হবে না। আমি স্কাউটশিপের কোড নাম্বারটি নিয়ে তথ্যকেন্দ্রে যোগাযোগ। করলাম। বিশেষ অনুমতি ছাড়া এটি ব্যবহার করার উপায় নেই। আমি পর্যবেক্ষণ করার জন্যে কয়েক মিনিট ব্যবহার করার একটা সাময়িক অনুমতি যোগাড় করে রাখলাম। মিয়ারায় আস্তানা থেকে কয়েক মিনিটের মাঝে কেউ বের হতে পারবে না কাজেই এটা নিরাপত্তার জন্যে কোনো রকম হুমকি নয়।
বাচ্চাগুলিকে নিয়ে পালানোর পরিকল্পনার পরের অংশটুকু জটিল, যার জন্যে আমাদের শরীর থেকে ট্রাকিওশান গুলি আলাদা করতে হবে। একজন মানুষের যাবতীয় তথ্য এই ট্রাকিওশানের মাঝে থাকে–এটি শরীর থেকে বের করা মাত্রই আমরা এই মহাকাশযানের অপ্রয়োজনীয় জঞ্জালে পরিণত হব। কিন্তু সেটা নিয়ে এখন আর চিন্তা করার সময় নেই। ট্রাকিওশানগুলি বের করতে আমাদের কষ্ট হল, চামড়ার নিচে লুকানো থাকে, সেটা কেটে বের করা খুব সহজ ব্যাপার নয়। ছোট পাতলা একটা চাকতির মতো শক্তিশালী ট্রান্সমিটারগুলি আপাততঃ শরীরের উপরে লাগিয়ে রাখা হল, শেষ মুহূর্তে সেগুলি অন্য কোথাও লাগিয়ে দিয়ে মূল তথ্যকেন্দ্রকে বিভ্রান্ত করা হবে।
নির্দিষ্ট সময়ে আমি স্কাউটশিপের কাছাকাছি পৌঁছে গেলাম, তিনি সারাক্ষণই আমার সাথে খানিকটা দূরত্ব বজায় রেখে আমার পিছু পিছু এসেছে। স্কাউটশিপের কাছাকাছি এসে আমি আমার ট্রাকিওশানটি চলমান একটি রবোটের দিকে ছুড়ে দিলাম–পুরো জিনিসটা করতে হল তথ্যকেন্দ্রের চোখকে আড়াল করে, সেটা অত্যন্ত দুরূহ কাজ। ত্রিনি সাথে সাথে সেই রবোটটির পিছু পিছু হটতে শুরু করেযখন সে বুঝতে পারবে আমি পালিয়ে গেছি তার প্রতিক্রিয়া কী হবে জানার আমার একটু সূক্ষ্ম কৌতূহল হল!
স্কাউটশিপের দরজায় টোকা দিতেই সেটা ঘর ঘর শব্দ করে খুলে গেল। আমি মাথা নিচু করে ভিতরে ঢুকে গেলাম, বাইরে থেকে বোঝা যায় না কিন্তু ভিতরে বেশ প্রশস্ত। আমি কন্ট্রোল প্যানেলে হাত দিতেই সেটি মিষ্টি সুরে কথা বলে উঠল, মহামান্য কিহা, আপনি কয়েক মিনিটের এটা পর্যবেক্ষণ করতে এসেছেনআপনাকে কী আমি কোনোভাবে সাহায্য করতে পারি?
অবশ্যি পার। এই স্কাউটশিপের নিয়ন্ত্রণের জন্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশটুকু কী?
কন্ট্রোল প্যানেলের ওপরের ভাগে ভারসাম্য রক্ষার মডিউলটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তার নিচে রয়েছে স্কাউটশিপের নিয়ন্ত্রণকারী যন্ত্রপাতি।
চমৎকার–আমি পকেট থেকে ছোট একটা বিস্ফোরকের টিউব বের করে আনলাম। আমাকে নূতন ধরনের অস্ত্র আবিষ্কার করার দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল বলে এ ধরনের জিনিস পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার জন্যে সরবরাহ কেন্দ্র থেকে দিতে আপত্তি করে নি।
মহাকাশযানের কন্ট্রোল প্যানেল অবশ্যি তীক্ষ্ণ স্বরে বিপদ সংকেত বাজাতে বাজাতে আপত্তি জানাতে শুরু করে। কণ্ঠস্বরটি উঁচু গলায় বলল, স্কাউটশিপের মাঝে বিস্ফোরক অত্যন্ত বিপজ্জনক–
সেজন্যেই এনেছি।
তুমি কী করবে বিস্ফোরক দিয়ে?
ভারসাম্য রক্ষার মডিউল এবং স্কাউটশিপের নিয়ন্ত্রণের যন্ত্রপাতি উড়িয়ে দেব।
অত্যন্ত বিপজ্জনক একটি কাজ করতে যাচ্ছ।
হ্যাঁ। আমার ভাসা ভাসা মনে আছে যদি স্কাউটশিপে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে তাহলে ভেতরের আরোহীদের জীবন রক্ষার একটি শেষ চেষ্টা করা হয়। তখন স্কাউটশিপের নিয়ন্ত্রণ আরোহীদের হাতে দেয়া হয়। আমার স্কাউটশীপের নিয়ন্ত্রণটুকু দরকার–
কিন্তু তার যথাযথ নিয়ম রয়েছে। তুমি যেটা করতে যাচ্ছ সেটা বিপজ্জনক এবং বেআইনি।
সম্ভবত। আমি কথা না বাড়িয়ে বিস্ফোরকের টিউবটি কন্ট্রোল প্যানেলে বসিয়ে একটু দূরে সরে গেলাম। তিন সেকেন্ডের মাঝে প্রচণ্ড শব্দে একটা বিস্ফোরণে কন্ট্রোল প্যানেলের বড় একটা অংশ উড়ে গেল এবং সাথে সাথে তীব্র স্বরে ভেতরে বিপদ সংকেত বাজতে থাকে, উজ্জল লাল আলো জ্বলতে এবং নিভতে শুরু করে। আমি স্কাউটশিপের ভেতরে এবারে ভিন্ন একটি কণ্ঠস্বর শুনতে পেলাম, সেটি তীক্ষ্ণ গলায় বলল, মহা বিপদ সংকেত। আরোহীদের নিরাপত্তার জন্যে বলছি, স্কাউটশিপের প্রাথমিক নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। আমি দ্বিতীয় ধাপের নিয়ন্ত্রণ–