তোমাদের পাঠানো চার মাত্রার বিপদ সঙ্কেত পেয়েছি। আমাদের তথ্যকেন্দ্রে তোমাদের সব খবর রয়েছে।
ও।
হ্যাঁ, আমরা তোমাদের উদ্ধার করে পৃথিবীতে পাঠানোর ব্যবস্থা করব।
মানুষগুলো কোনো উচ্ছ্বাস না দেখিয়ে ক্লান্ত চোখে তাকিয়ে রইল। লি–রয় আবার কথোপকথন শুরু করার চেষ্টা করল, তোমাদের অনেক বড় বিপদ বলে জানিয়েছ। বিপদটা কী ধরনের বলবে?
গ্রুনি।
গ্রুনি?
হ্যাঁ। রুনি একজন একজন করে আমাদের সবাইকে মেরে ফেলেছে।
গ্রুনিটা কে?
রিশান লি–রয়ের দিকে তাকিয়ে বলল, এই গ্রহের যে এককোষী প্রাণের বিকাশ হয়েছে– একটা জীবাণু ছাড়া আর কিছু নয়, সেটাকে এখানকার মানুষেরা গ্রনি বলে ডাকে।
মানুষগুলো সম্মতিসূচকভাবে মাথা নাড়ল।
তোমরা এখানে সব মিলিয়ে কতজন মানুষ ছিলে?
প্রথমে এসেছিল চার জন, চল্লিশ বছর আগে। দশ বছর পরে এসেছিল আরো চার জন। তারপরের বার তিন জন। শেষ বার এসেছে পাঁচ জন।
তার মাঝে মারা গেছে কয়জন?
সবাই।
সবাই তো হতে পারে না, তোমরা তো বেঁচে আছ।
হ্যাঁ আমরা ছাড়া। চার জন মানুষ মাথা নেড়ে বলল, আমরা চার জন ছাড়া।
আর কেউ বেঁচে নেই?
মানুষগুলো কোনো উত্তর দিল না। অন্যমনস্কভাবে নিচের দিকে তাকিয়ে রইল।
লি–রয় আবার জিজ্ঞেস করল, আর কেউ বেঁচে নেই?
অপরিষ্কার কাপড় পরা নির্জীব ধরনের মানুষটি চোখ তুলে বলল, না।
নিডিয়া একটু এগিয়ে লি–রয়ের হাত স্পর্শ করে বলে, আমার মনে হয় এদের ধাতস্থ হওয়ার জন্যে খানিকটা সময় দেয়া দরকার। আমরা একটু পর তাদের সাথে কথা বলি।
রিশান মাথা নাড়ল। বলল, হ্যাঁ, সেটাই ভালো। ততক্ষণ আমরা জায়গাটা পরীক্ষা করে দেখি।
০৬. রিশান নিডিয়াকে নিয়ে
রিশান নিডিয়াকে নিয়ে যখন মানুষের এই বসতিটি পরীক্ষা করে দেখছিল তখন লি–রয় আর ফুন বসতির মূল তথ্যকেন্দ্রে এই গ্রহ সম্পর্কে কী কী তথ্য রয়েছে সেগুলোতে চোখ বুলাতে শুরু করল। তথ্যগুলো সুবিন্যস্ত নয়, এই বসতির মানুষেরা সত্যিকার মানুষের জীবন যাপন করে নি–গ্রহান্তরে মানুষের বসতিতে যে ধরনের নিয়মকানুন মানার কথা সে ধরনের নিয়ম। এখানে মানা হয় নি। কাজেই গ্রহ এবং প্রহের নিম্নস্তরের প্রাণ গ্রুনি সম্পর্কে তথ্যগুলো ছিল ছড়ানো ছিটানো। তথ্যগুলো সগ্রহের ব্যাপারে চার জন মানুষ খুব বেশি সাহায্য করতে পারল না। দীর্ঘদিন থেকে এক ধরনের আতঙ্কিত জীবন যাপন করে তারা খানিকটা অপ্রকৃতিস্থ হয়ে গেছে।
রিশান এবং নিডিয়াও বসতিটি পরীক্ষা করতে গিয়ে আবিষ্কার করল এটি দীর্ঘদিন থেকে মনুষ্য বাসের অনুপযোগী। মানুষের বেঁচে থাকার জন্যে দৈনন্দিন যেসব বিষয়ের প্রয়োজন এখানে সেগুলোও নেই। সমস্ত বসতিটি অগোছালো এবং নোরা। রসদপত্র ছড়ানো ছিটানো নিরাপত্তার ব্যাপারগুলো অনিয়মিত। বসতিটিতে ঘোলাটে এক ধরনের আলো এবং সেই আলোতে সবকিছুকে কেমন জানি ভূতুড়ে দেখায়। তাপমাত্রা নিয়মিত নয় এবং থেকে–থেকেই তারা শীতে কেঁপে কেঁপে উঠছে। পুরো বসতিটিতে এক ধরনের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, যে, কোনো স্বাভাবিক মানুষ এখানে থাকলে কিছুদিনের মাঝে অপ্রকৃতিস্থ হয়ে যাবার কথা। রিশান এবং নিডিয়া মানুষের বসতিটি পরীক্ষা করতে করতে তৃতীয় স্তরে প্রবেশ করল, এখানে বড় বড় শীতলঘরে নানা ধরনের রসদ মজুদ থাকার কথা। রসদগুলো পরীক্ষা। করতে করতে তারা একটি ঘরে হাজির হল। ভন্টের গোপন সংখ্যা প্রবেশ করাতেই দরজাটি ঘরঘর শব্দে খুলে যায় এবং সাথে সাথে দুজনে আতঙ্কে চিৎকার করে ওঠে। ঘরের দেয়ালে সারি সারি মানুষের মৃতদেহ। মৃতদেহগুলো সংরক্ষণের জন্যে কোনো এক বিচিত্র কারণে দেয়ালের সাথে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে এবং সেগুলো এক ধরনের শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। পুরো ব্যাপারটিতে এক ধরনের বিচিত্র অস্বাভাবিকতা যেটি সহ্য করার মতো নয়। নিডিয়া রিশানের হাত জাপটে ধরে বলল, দরজাটা বন্ধ করে দাও।
দিচ্ছি, এক সেকেন্ড। আমাকে একটি জিনিস দেখে নিতে দাও।
কী দেখবে?
মানুষগুলোকে
তোমার পর্যবেক্ষণ যন্ত্রে ছবি উঠে গেছে, তুমি সেখানে দেখতে পারবে। চল যাই।
হ্যাঁ যাচ্ছি।
রিশান যাবার আগে আবার তাকাল, একসাথে সে আগে কখনো এতগুলো মৃতদেহ দেখেছে কি না মনে করতে পারে না। আর মৃতদেহগুলো রেখেছে কী বিচিত্রভাবে, দেখে মনে হয় হঠাৎ সবাই হেঁটে বের হয়ে আসবে। কিছু পুরুষ এবং কিছু মেয়ে, সেই কোন সুদূর পৃথিবী থেকে এসে এই কদর্য গ্রহটিতে জীবন দিয়েছে।
নিডিয়া তখনো রিশানের হাত ধরে রেখেছিল, কাঁপা গলায় বলল, আমার ভালো লাগছে না, চল ফিরে যাই।
ফিরে যাবে? বেশ। তুমি যাও আমি বাকিটুকু দেখে আসি।
না। নিডিয়া মাথা নেড়ে বলল, আমার একা যেতে ভয় করছে। তুমিও আস।
রিশান অবাক হয়ে নিডিয়ার দিকে তাকাল, ভয় করছে? কিসের ভয়?
জানি না। আমি একেবারেই প্রস্তুত ছিলাম না, হঠাৎ করে এতগুলো মৃতদেহ দেখে কেমন জানি সমস্ত শরীর কাঁটা দিয়ে উঠেছে। নিডিয়া আবার শিউরে ওঠে।
রিশান আর নিডিয়া ফিরে এসে দেখে তথ্যকেন্দ্রের বড় মনিটরের সামনে লি–রয় আর ষুন বসে আছে এহের চার জন অপ্রকৃতিস্থ মানুষ জবুথবু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে কাছে। লি রয় মানুষগুলোকে জিজ্ঞেস করল, তথ্যকেন্দ্রের অনেক তথ্য দেখি নষ্ট করা হয়েছে। কেন নষ্ট করলে?