রিশান সুদর্শন এই মানুষটির দিকে তাকিয়ে থাকে, মানুষটিকে তার পছন্দ হয়েছে। মনে হয় চমৎকার নেতৃত্ব দিতে পারবে। লি–রয় আবার রিশানের দিকে ঘুরে তাকাল, মুখে একটা হাসি টেনে এনে বলল, তোমার সাথে এখনো আমার পরিচয় হয় নি। তবে তোমার গোপন ফাইলটি আমি দেখেছি, আগে দেখলে সম্ভবত তোমাকে আমি এই অভিযানে আমার সাথে নিতাম না।
বিটি অবাক হয়ে বলল, কেন কী হয়েছে রিশানে।
অসম্ভব কাটগোয়ার মানুষ। এর মাথায় কিছু একটা ঢুকে গেলে সেটা বের করা অসম্ভব ব্যাপার! বৃহস্পতির একটা অভিযানে দলপতিকে একটা ঘরে বন্ধ করে মহাকাশযানের নেতৃত্ব নিয়ে নিয়েছিল। মহাকাশযান আর তার বার জন ক্রুয়ের জীবন বেঁচে গিয়েছিল কিন্তু সেই দলপতি এখনো মহা খাপ্পা হয়ে আছে। এজন্যে কখনো কোনো লাল তারা পায় নি।
ষুন বিড়বিড় করে বলল, কিন্তু কিছুতেই একটা নিয়ম থাকতে হয়।
অবশ্যই। লি–রয় মাথা নেড়ে বলল, অবশ্যই সবকিছুতেই নিয়ম থাকতে হয়; কিন্তু সেই নিয়মটি কী কেউ জানে না। পৃথিবীতে সদর দফতরের আরামদায়ক চেয়ারে বসে যে। নিয়মটি খুব চমৎকার মনে হয়, একটা গ্রহের আকর্ষণে একটা গ্রহকণার দিকে ছুটে ধ্বংস হয়ে যাবার আগের মুহূর্তে সেই নিয়মের কোনো মূল্য নেই। তখন নিয়ম হচ্ছে বেঁচে থাকা। দলপতিকে ঘরে বন্ধ করে মহাকাশযানের নেতৃত্ব নেয়া তখন চমৎকার একটি নিয়ম
রিশান লি–রয়ের দিকে তাকিয়ে বলল, তোমাকে আমার পছন্দ হয়েছে লি–রয়!
অন্য কেউ বললে আমি খুশিই হতাম, কিন্তু তোমার মুখে শুনে একটু দুশ্চিন্তা অনুভব করছি। যাই হোক আমার একটু দেরি হল আসতে। সদর দফতর থেকে কোড নম্বরটি দিতে একটু দেরি হল। আমাদের এই অভিযানটি মূল কেন্দ্রে রেজিস্ট্রি হয়েছে। আনুষ্ঠানিক নাম, মনুষ্যের বসবাসযোগ্য গ্রহ–উপগ্রহ সম্পর্কিত জরিপ। অভিযানের আনুষ্ঠানিক কোড নম্বর নয়। নয় শূন্য তিন।
নয় নয় শূন্য তিন?
হ্যাঁ, এই মুহূর্তে এটা অর্থহীন চারটি সংখ্যা কিন্তু আমি একেবারে নিশ্চিতভাবে বলতে পারি কিছুদিনের মাঝেই আমাদের জীবনে এর থেকে অর্থবহ ব্যাপার আর কিছু থাকবে না।
ঠিকই বলেছ। হান মৃদু স্বরে বলে, আমার আগের অভিযানের কোড সংখ্যা ছিল আট আট তিন দুই। এত ভয়ঙ্কর একটা অভিযান ছিল যে আট সংখ্যাটিই এখন আমি সহ্য করতে পারি না।
লি–রয় হেসে বলল, আশা করছি আমাদের বেলায় সেরকম কিছু ঘটবে না। ফিরে আসার পর নয় শূন্য কিংবা তিন এই সংখ্যাগুলোর সাথে তোমাদের ভালবাসা হয়ে যাবে! যাই হোক কাজ শুরু করার আগে বল তোমাদের কোনো প্রশ্ন আছে কি না।
নিডিয়া টেবিলে একটু ঝুঁকে পড়ে বলল, রিশান একটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন করেছে। সেটা সম্পর্কে তোমার মতামত জানতে চাই।
লি–রয় রিশানের দিকে তাকিয়ে বলল, কী প্রশ্ন?
রিশান ইতস্তত করে বলল, ঠিক প্রশ্ন নয় একটা সন্দেহ। আমাদের এই দলটির সব কয়জন সদস্য অত্যন্ত কঠোর স্বভাবের, আমাকে এখানে টেনে আনার সেটাও একটা কারণ। মহাকাশ অভিযানে এ রকম একটি দল পাঠানোর পিছনে সত্যিকার উদ্দেশ্যটা কী? মনুষ্য বসবাসের উপযোগী গ্রহ–উপগ্রহ সম্পর্কিত জরিপ কথাটি এক ধরনের ভাওতাবাজি ছাড়া আর কিছু নয়। আমার ধারণা, আমাদের এমন একটি পরিস্থিতিতে ফেলে দেয়া হবে যেটি হবে ভয়ঙ্কর এবং নৃশংস। আমাদের সেই অবস্থা থেকে বের হয়ে আসা ছাড়া আর কিছুই করার থাকবে না–
লি–রয় তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে রিশানের দিকে তাকিয়ে রইল। কয়েক মুহূর্ত সে কোনো কথা বলল না, তারপর মৃদু গলায় বলল, তুমি মহাকাশ কেন্দ্রের নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছ রিশান। এটি খুব বড় অভিযোগ, কোনরকম প্রমাণ ছাড়া এ রকম অভিযোগ করা ঠিক না।
আমার কাছে একটা ছোট প্রমাণ আছে, লি–রয়
কী প্রমাণ?
এই ঘরটি একটি বিশাল ঘর। ছাদের দিকে তাকিয়ে দেখ সেটা এত উঁচুতে যে ভালো করে দেখা যায় না। বিশাল এই ঘরে বসলেই মনটা ভালো হয়ে যায়। আমাদেরকে এই ঘরে এনে বসানো হয়েছে।
সবাই অবাক হয়ে রিশানের দিকে তাকিয়ে রইল, সে ঠিক কী বলতে চাইছে কেউ বুঝতে পারছে না। রিশান ছাদের দিকে তাকিয়ে বলল, কিন্তু আমি বাজি ধরে বলতে পারি এটা ছোট একটা ঘুপচি ঘর, এই ছাদটা একটা কৌশলী দৃষ্টিভ্রম। আমি টেবিলের উপর দাঁড়িয়ে ছাদটা স্পর্শ করতে পারব–
তাতে কী প্রমাণ হয় রিশান?
তাতে প্রমাণ হয় আমাদেরকে প্রতিনিয়ত ছলনা করা হয়। আমাদেরকে অনুভূতি দেয়া হয় বিশাল একটা ঘরে বসে থাকার কিন্তু আসলে আমরা বসে থাকি ছোট একটা ঘুপচি ঘরে। আমাদের অনুভূতি দেয়া হয় মহান একটি অভিযানের আসলে আমরা যাই নীচ কোনো একটি সংঘর্ষে অংশ নিতে
দুটি এক ব্যাপার নয় রিশান।
আমার কাছে এক।
ষুন বাধা দিয়ে বলল, কিন্তু কিন্তু রিশানের কথা সত্যি কি না সেটা এখনো প্রমাণিত হয় নি। এই ঘরটি হয়তো আসলে বিশাল
হান উঠে দাঁড়িয়ে বলল, লি–রয় তুমি অনুমতি দিলে আমি টেবিলে উঠে দাঁড়িয়ে পরীক্ষা করে দেখতে পারি।
অনুমতি দিচ্ছি।
হান লাফিয়ে টেবিলের উপর দাঁড়িয়ে হাত উপরে তুলে ধরতেই সেটি একটি ঝকঝকে আয়নাকে স্পর্শ করল, অত্যন্ত সুচারুভাবে বসানো রয়েছে, দুই পাশে থেকে প্রতিফলিত হয়ে সেটি একটি অত বিশাল ঘরের অনুভূতি দিচ্ছে। হান বিড়বিড় করে বলল, দেখ কত বড় ধুরন্ধর!