সত্যি?
হ্যাঁ। আমাদের কাছে ইরিত্রা লেজার আছে, সেটা দিয়ে তুমি ইচ্ছে করলে তোমার গ্রহের বায়ুমণ্ডলটিতে একটা আলোর খেলা শুরু করে দিতে পার। আমাদের মূল তথ্যকেন্দ্রে অসংখ্য তথ্য আছে, চোখ বুলিয়ে দেখতে পার! কৃত্রিম অনুভূতি–ঘরে কৃত্রিম অনুভূতি অনুভব করতে পার! আরো এতসব জিনিস আছে যে বলে শেষ করতে পারব না। চল আমার সাথে
সানির মুখে হাসি ফুটে ওঠে। সে বিটির হাত ধরে বলল, চল।
রিশান এবং হান বিটির হাত ধরে সানির ঘর থেকে বের হয়ে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করে, তাদের পিছনে দরজাটি ঘরঘর করে বন্ধ হয়ে যাবার সাথে সাথে দুজনেরই মুখ শক্ত হয়ে যায়। হান কঠোর মুখে রিশানের দিকে তাকিয়ে বলল, এখন কী করবে তুমি?
কী করব?
হ্যাঁ। তুমি নিজে নিজে খুব বড় বড় সিদ্ধান্ত নিয়েছ রিশান। তার বেশিরভাগই নীতিমালার বাইরে। শুধু নীতিমালার বাইরে নয়, নীতিমালার বিরুদ্ধে।
বিশান একটা নিশ্বাস ফেলল। তারপর বলল, আমার কিছু করার ছিল না। একটা বুদ্ধিমান প্রাণীকে আমি ধ্বংস হতে দিতে পারি না।
সেটা নিয়ে দীর্ঘদিন আলোচনা করা যাবে রিশান, এখন সেটা থাক। এখন বল তুমি কী করতে চাও।
আমি পৃথিবীতে ফিরে যেতে চাই।
পৃথিবীতে ফিরে গেলে মহাকাশ কাউন্সিলে তোমার বিচার হবে রিশান। সে বিচারের রায় কী হবে আমি তোমাকে এখনই বলে দিতে পারি, শুনতে চাও?
না। আমি নিজেও জানি সেই রায়। কিন্তু আমি পৃথিবীতেই ফিরে যেতে চাই।
হান রিশানের চোখের দিকে তাকিয়ে বলল, তুমি জান রিশান আমাদের এই মুহূর্তে পৃথিবীতে ফিরে যাবার প্রয়োজন নেই। আসল উদ্দেশ্য যাই থাকুক না কেন, আমাদের পাঠানো হয়েছে পৃথিবীর মানুষের বাসোপযোগী একটা গ্রহ খুঁজে বের করার জন্যে। আমরা সে জন্যে আরো এক–দুই শতাব্দী ঘুরে বেড়াতে পারি। তারপর যখন পৃথিবীতে ফিরে যাব, পৃথিবীর সবকিছু পাল্টে যাবে, হয়তো তোমাকে মহাকাশ কাউন্সিলের সামনে দাঁড়াতে হবে না, হয়তো
না। রিশান মাথা নাড়ল, আমি পৃথিবীতেই ফিরে যেতে চাই। পৃথিবী পাল্টে যাবার আগে আমি যেতে চাই।
কেন?
রিশান একটু ইতস্তত করে বলল, সানিকে আমি আমার পরিচিত পৃথিবীতে নিতে চাই হান। যে পৃথিবীতে গাছ আছে, নদী আছে, নীল আকাশে মেঘ আছে, মানুষের ভিতরে ভালবাসা আছে। দুশ বছর পর পৃথিবীতে কী হবে আমি জানি না আমি আমি সেই ঝুঁকি নিতে পারি না।
হান রিশানের কাছে এসে তার কাঁধে হাত রেখে বলল, আমি বুঝতে পারছি রিশান। আমরা পৃথিবীতেই ফিরে যাব!
রিশান নিচু গলায় বলল, বেঁচে থাকাটাই বড় কথা নয়। কিন্তু যতদিন বেঁচে থাকব সেই বেঁচে থাকাটার যেন একটা অর্থ থাকে।
হান হেসে বলল, অর্থ থাকবে রিশান। নিশ্চয়ই অর্থ থাকবে।
পৃথিবীতে ফিরে যাবার আগে প্রস্তুতি নিতে কয়েকদিন কেটে গেল। এই সময়টাতে সানি নিডিয়ার সাথে ইরিত্রা লেজার দিয়ে গ্রহটির বায়ুমণ্ডলে আলোর খেলা করে কাটাল। ঘুমোতে যাবার আগে বিটির সাথে কৃত্রিম মহাকাশ নিয়ন্ত্রণকক্ষে ভেসে বেড়ানোটি মোটামুটিভাবে একটি নিয়মিত খেলা হয়ে দাঁড়াল। হান তাকে নিয়ে বসত কুরু ইঞ্জিনের সামনে। পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী ইঞ্জিনটি সম্পূর্ণ বিনা কারণে তার সমস্ত শক্তি ব্যয় করে গর্জন করানোর ঘোরতর বেআইনি কাজটি সবাই উপভোগ করতে শুরু করল শুধুমাত্র সানির বিস্ময়াভিভূত মুখটি দেখে! রিশান তাকে নিয়ে বসত তথ্যকেন্দ্রে, মানুষের বিশাল জ্ঞানভাণ্ডার তার সামনে সমস্ত সৌন্দর্য নিয়ে বিকশিত করে দিয়ে সে সানির চোখের দিকে তাকিয়ে থাকত। স্বল্পভাষী ষুনকেও সবাই আবিষ্কার করল কৃত্রিম অনুভূতি–ঘরে, দীর্ঘ সময় সানিকে নিয়ে সে সেখানে বসে তার সাথে মানুষের বিচিত্র অনুভূতিকে নিয়ে খেলা করত।
যেদিন দীর্ঘ যাত্রার জন্যে সবাইকে শীতলঘরে গিয়ে ঘুমোতে হল, কোনো একটি বিচিত্র কারণে সবার ভিতরে এক ধরনের বিষণ্ণতা নেমে এল। ঠিক কী কারণ কারো জানা নেই কিন্তু সবার মনে হতে লাগল চমৎকার একটি স্বপ্ন শেষ হয়ে আসছে।
১৭. একটি কালো টেবিলের সামনে
একটি কালো টেবিলের সামনে বসে আছে একজন বয়স্ক মানুষ। মানুষটির হাতে পাঁচটি উজ্জ্বল লাল তারা। রিশান এত উচ্চপদস্থ মানুষকে আগে কখনো সামনাসামনি দেখেছে কি না মনে করতে পারল না। মানুষটির দুপাশে বসেছে আরো দুজন, একজন পুরুষ অন্যজন মহিলা। তাদের হাতে চারটি করে লাল তারা। বয়স্ক মানুষটির মুখে কেমন জানি এক ধরনের যন্ত্রণার চিহ্ন, অন্য দুজন সম্পূর্ণ ভাবলেশহীন। হাতে লাল তারাগুলো না থাকলে এই মানুষগুলোকে নিশ্চিতভাবে রবোট হিসেবে চালিয়ে দেয়া যেত।
রিশান টেবিলের সামনে সোজা হয়ে দাঁড়াল। বয়স্ক মানুষটির মুখে যন্ত্রণার চিহ্নটি হঠাৎ আরো স্পষ্ট হয়ে ওঠে, সে খানিকক্ষণ রিশানের দিকে তাকিয়ে থেকে বলল, বস রিশান।
রিশান শক্ত লোহার চেয়ারটিতে সোজা হয়ে বসল। বৃদ্ধ মানুষটি এক ধরনের দুঃখী গলায় বলল, আমার নাম কিহি। আমি মহাকাশ কাউন্সিলের সভাপতি।
রিশান ভদ্রভাবে বলল, তোমার সাথে পরিচিত হতে পেরে আনন্দিত হলাম।
বৃদ্ধ মানুষটি খানিকক্ষণ রিশানের দিকে তাকিয়ে থেকে বলল, তোমাকে এখানে ডেকে আনার কোনো প্রয়োজন ছিল না, কিন্তু আমার খুব কৌতূহল হয়েছে তোমাকে নিজের চোখে দেখার।