কী হল?
তোমার কি মনে হয় আমি যখন ভিতরে যাব, তখন
তখন কী?
তখন কি আমি ভয় পাব?
সানি কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, হ্যাঁ রিশান তুমি ভয় পাবে।
তুমি–তুমি ভয় পাও না?
পাই। কিন্তু আমি জানি আমার মা আছে সেখানে। তোমার তো মা নেই।
ও আচ্ছা।
রিশান নিচে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখল সানি ক্ষিপ্র ভঙ্গিতে ভারি অক্সিজেন সিলিন্ডারটি নিয়ে উপরে উঠে যাচ্ছে। একটু পরে তাকেও ওই বড় পাথরের আড়ালে অন্ধকার একটা গুহায় হামাগুড়ি দিয়ে ঢুকতে হবে। ভিতরে তার জন্যে কী অপেক্ষা করে আছে চিন্তা করে হঠাৎ কেন জানি তার পেটের মাঝে পাক দিয়ে ওঠে।
রিশান মাথা থেকে পুরো ব্যাপারটি প্রায় ঠেলে সরিয়ে দেয়, এখন তার অনেক কাজ বাকি। অক্সিজেনের সিলিন্ডার আর বিস্ফোরকগুলো চারদিকে ছড়িয়ে দেবার আগে মনে হয় একবার মহাকাশযানের সাথে কথা বলে নেয়া দরকার। নিডিয়াকেও মূল তথ্যকেন্দ্রে খোঁজ। নেয়ার কথা বলা হয়েছে, নূতন কিছু জানতে পেরেছে কি না সেটাও এখন জিজ্ঞেস করে নেয়ার সময় হয়েছে। রিশান একটা পাথরে হেলান দিয়ে বসে উপরে তাকাল, সানি অক্সিজেন সিলিন্ডারটি নিয়ে প্রায় উপরে উঠে গিয়েছে। সেদিকে অন্যমনস্কভাবে তাকিয়ে থাকতে। থাকতে সে তার যোগাযোগ মডিউলটি স্পর্শ করল। প্রায় সাথে সাথেই তাকে ঘিরে দুটি হলোগ্রাফিক দৃশ্য ফুটে ওঠে, একটিতে হান এবং বিটি, অন্যটিতে নিডিয়া।
রিশান হানের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, আমাদের হাতে আর কত সময় রয়েছে হান?
খুব বেশি নয়। সবচেয়ে প্রথম ট্যাংকটির বিস্ফোরণ হবে এখন থেকে এগার মিনিট পরে।
মাত্র এগার মিনিট?
হ্যাঁ।
তুমি কি কোনো ট্যাংকের অবস্থান বের করতে পেরেছ?
কয়েকটা পেরেছি। কিন্তু খারাপ ধরনের একটা ঝড় হচ্ছে নিচে, কাজটি খুব সহজ নয়।
ট্যাংকটির বিস্ফোরণ হবার কতক্ষণ পর নিক্সিরল এখানে পৌঁছাবে বলে মনে হয়?
সাত মিনিটের মাঝে লক্ষ শতাংশ হয়ে যাবে। বিপদসীমার অনেক উপরে।
রিশান ঘুরে নিডিয়ার দিকে তাকাল, নিডিয়া তুমি কিছু বলবে?
বলার বেশি কিছু নেই। আমি মূল তথ্যকেন্দ্রে খোঁজ নিয়েছি সেখানেও নূতন কোনো তথ্য নেই। শুধু একটা ব্যাপার তুমি বিবেচনা করে দেখতে পার।
কী?
নিক্সিরল উঁচু তাপমাত্রায় খুব সহজে অক্সিডাইজ হয়। কাজেই তুমি যদি ওই এলাকার তাপমাত্রা বাড়াতে পার হয়তো খানিকটা সময় বাঁচাতে পারবে।
আমি সেজন্যে বিস্ফোরক নিয়ে এসেছি–
কিন্তু সেটা খুব বেশি নয়। নিডিয়া মাথা নেড়ে বলল, তাপমাত্রা খুব বেশি বাড়বে না। তুমি এখন যেখানে আছ তার কাছাকাছি একটা আগ্নেয়গিরি রয়েছে।
আগ্নেয়গিরি?
হ্যাঁ, কোনোভাবে সেটাতে যদি অগ্ন্যুৎপাত করানো যেত, তাপমাত্রা দ্রুত বেড়ে যেত।
রিশান হানের দিকে তাকাল, হান
বল।
তুমি কি আগ্নেয়গিরিটা খুঁজে বের করতে পারবে?
বিটি একটা বড় স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে বলল, হ্যাঁ আমি মনিটরে মনে হয় দেখতে পাচ্ছি।
চমৎকার। একটা মাঝারি ধরনের নিউক্লিয়ার বিস্ফোরণে আগ্নেয়গিরির মাথাটা উড়িয়ে দাও, হয়তো অগ্ন্যুৎপাত শুরু হয়ে যাবে!
তুমি সত্যি বলছ, না ঠাট্টা করছ?
সত্যি বলছি।
তুমি জান এটা কতটুকু বিপজ্জনক?
না, জানি না। জানতে চাইও না। কিন্তু আমি এই সৃষ্টিজগতের মানুষ ছাড়া একমাত্র অন্য বুদ্ধিমান প্রাণীকে বাঁচানোর চেষ্টা করছি। বিপদকে এখন ভয় পাওয়ার সময় নেই।
তোমাদের সবার প্রাণের ওপর ঝুঁকি হবে। প্রচণ্ড রেডিয়েশন
কিছু করার নেই হান। তুমি দেরি কোরো না। এখানে পৌঁছাতে সময় লাগবে, শুরু করে দাও।
আমি করতে চাই না রিশান।
আমি দলপতি হিসেবে তোমাকে আদেশ দিচ্ছি হান।
.
কিছুক্ষণ পর রিশানকে দেখা গেল একটি ছোট জেট ইঞ্জিন ব্যবহার করে বিশাল প্রস্তর খণ্ডটির চারপাশে সময়নির্ভর অক্সিজেন সিলিন্ডার এবং বিস্ফোরক বসিয়ে দিচ্ছে। সেগুলো চার্জ করে সে আবার আগের জায়গায় ফিরে এল। তার মনিটরে এর মাঝে বাতাসের মাঝে অক্সিজেনের পরিমাণ বেড়ে যাবার ইঙ্গিত দেখা যাচ্ছে। সানি নিশ্চয়ই ভিতরে অক্সিজেন সিলিন্ডারটি খুলে দিয়েছে।
রিশান একটা নিশ্বাস ফেলে যোগাযোগ মডিউল স্পর্শ করে নিচু গলায় ডাকল, সানি।
এক মুহূর্ত পর সানির শিশুকণ্ঠের উত্তর শোনা গেল, আমাকে ডাকছ?
হ্যাঁ। তুমি কি–তুমি কি তোমার মায়ের সাথে কথা বলেছ?
সানি কোনো উত্তর না দিয়ে চুপ করে রইল।
কী হল সানি? কথা বলেছ?
আমি জানি না। এখানে এখানে—
এখানে কী?
আমার ভয় করছে রিশান। তুমি আসবে?
রিশানের হঠাৎ বুক কেঁপে ওঠে। সে কাঁপা গলুম বলল, আমি আসছি সানি। আমি এক্ষুনি আসছি।
ঠিক তখন দূরে একটা চাপা বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেল। নিক্সিরলের প্রথম ট্যাংকটি বিস্ফোরিত হয়েছে খুব কাছাকাছি কোথাও
১৪. খাড়া দেয়ালের মাঝে
খাড়া দেয়ালের মাঝে ছোট একটা ফুটো, ভিতরে খুব কষ্ট করে ঢুকতে হয়। রিশান প্রথমে ঢুকতে গিয়ে আবিষ্কার করল পিঠে ঝুলে থাকা যন্ত্রপাতি পাথরে আটকে যাচ্ছে। সে সেগুলো খুলে হাতে নিয়ে আস্তে আস্তে এগোতে থাকে। ভিতরে ঘুটঘুঁটে অন্ধকার। তার মাথায় লাগানো ছোট একটা আলো কাছাকাছি খানিকটা আলোকিত করে রেখেছে, সেটা দূরের সবকিছুকে আরো গাঢ় অন্ধকারে আড়াল করে রেখেছে। দূরে কী আছে রিশান দেখার চেষ্টা না করে হামাগুড়ি দিয়ে বুকের উপর ভরে করে সামনে এগিয়ে যেতে থাকে।