তুমি আমাকে সাহায্য করবে না?
না। তোমাকে আমি একটা ঘরে বন্দি করে রেখেছিলাম। আবার তোমাকে আমার বন্দি করে রাখতে হবে রিশান। মহাকাশ অভিযানের বিধিমালায় খুব পরিষ্কার বলা আছে–
মহাকাশ অভিযানের বিধিমালায় কি বিদ্রোহ সম্পর্কে কিছু লেখা আছে?
বিদ্রোহ?
হ্যাঁ। যেখানে সাধারণ একজন সদস্য জোর করে দলের নেতৃত্ব নিয়ে নেয়?
ষুন ফ্যাকাশে মুখে বলল, হ্যাঁ রিশান। লেখা আছে। তার জন্যে খুব কঠোর শাস্তির কথা লেখা আছে–
রিশান জোর করে মুখে এক ধরনের হাসি টেনে এনে বলল, শাস্তি অনেক পরের ব্যাপার, সেটা নিয়ে এখন চিন্তা করে লাভ নেই। আমি অভিযান নয় নয় শূন্য তিনের নেতৃত্ব তোমার কাছ থেকে নিয়ে নিচ্ছি। এখন থেকে সবাই আমার আদেশে কাজ করবে।
কিন্তু আমি বেঁচে থাকতে সেটি সম্ভব নয়।
হ্যাঁ। রিশান পাথরের মতো মুখ করে বলল, তুমি ঠিকই বলেছ, তুমি বেঁচে থাকতে সেটি সম্ভব নয়।
ষুন হঠাৎ চমকে উঠে রিশানের দিকে তাকাল—-সরু চোখে বলল, তুমি কী বলতে চাইছ?।
রিশান তার এটমিক ব্লাস্টারটি উপরে তুলে সোজাসুজি ষুনের মাথার কাছে ধরে বলল, তুমি স্বেচ্ছায় আমাকে নেতৃত্বটি দিতে পার ষুন– মানুষের মস্তিষ্ক ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে দেখতে আমার একেবারে ভালো লাগে না।
ষুন তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে রিশানের দিকে তাকিয়ে রইল, সে এখনো বিশ্বাস করতে পারছে না। যে সত্যি সত্যি রিশান তার মাথায় একটা এটমিক ব্লাস্টার ধরে রেখেছে।
রিশান শীতল গলায় বলল, যোগাযোগ মডিউলে তোমার কোডটি বলে আমাকে নেতৃত্বটি দিয়ে দাও ষুন। তোমার মাথায় গুলি করলে নেতৃত্বটি এমনিতেই চলে আসবে– আমার ধৈর্য খুব কম, তুমি খুব ভালো করে জান।
ষুন বিড়বিড় করে নেতৃত্ব কোডটি উচ্চারণ করা মাত্র হঠাৎ করে তার যোগাযোগ মডিউলটিতে নীল আলো ঝলসে ওঠে। ষুনের কাছ থেকে মূল নেতৃত্ব রিশানের কাছে হস্তান্তরিত হয়ে গেছে। মহাকাশ অভিযানের দলপতির প্রয়োজনীয় তথ্যাদি মূল তথ্যকেন্দ্র থেকে আনা নেয়া শুরু হতে থাকে। রিশান এটমিক ব্লাস্টারটি নিচে নামিয়ে রেখে নিডিয়ার দিকে ঘুরে তাকাল, বলল, নিডিয়া
বল রিশান।
তুমি মূল তথ্যকেন্দ্রে খোঁজ নাও নিক্সিরল গ্যাসকে নিষ্ক্রিয় করতে হলে কী করতে হয়। যদি তার জন্যে বিশেষ কোনো রাসায়নিক থাকে সেটি খুঁজে বের কর–
আমি যতদূর জানি অক্সিজেন খুব সহজে এটাকে অক্সিডাইজ করে দেয়। আমি আরেকটু দেখতে পারি
বেশ তাহলে যতগুলো সম্ভব অক্সিজেন সিলিন্ডার তুমি একটা বাই ভার্বালে তোলার ব্যবস্থা কর।
করছি।
রিশান যোগাযোগ মডিউলে স্পর্শ করতেই ঘরের মাঝখানে মহাকাশযানের একটা অংশ স্পষ্ট হয়ে ওঠে। সেখানে হান এবং বিটিকে উদ্বিগ্ন মুখে বসে থাকতে দেখা যায়। রিশান মুখে জোর করে একটা হাসি টেনে এনে বলল, তোমাদের নূতন দলপতিকে অভিনন্দন জানানোর কোনো প্রয়োজন নেই
হান মাথা নেড়ে বলল, আমি তার কোনো চেষ্টা করছিলাম না রিশান।
বেশ– এখন আমি যেটা বলছি খুব ভালো করে শোন। মহাকাশযান থেকে তোমরা চেষ্টা কর আটত্রিশটা নিক্সিরলের ট্যাংককে খুঁজে বের করতে
সেটা খুব সহজ নয় রিশান। তুমি জান এই গ্রহের গ্যাস মোটামুটিভাবে অস্বচ্ছ।
তবুও তুমি চেষ্টা কর– অন্য কোনো কিছু যদি কাজ না করে চেষ্টা কর আলট্রাসনিক কিছু ব্যবহার করতে। পুরোপুরি নিখুঁতভাবে যদি না পার চেষ্টা কর মোটামুটিভাবে সেগুলোর অবস্থান বের করার জন্য–
চেষ্টা করব। তারপর কী করব?
চেষ্টা কর সেগুলো উড়িয়ে দিতে।
তুমি জান তবু সেগুলো থেকে নিক্সিরল বের হবে–
হ্যাঁ। কিন্তু তুমি যদি ছোটখাটো পারমাণবিক বিস্ফোরণ ঘটাও, প্রচণ্ড উত্তাপে নিক্সিরল তার মৌলগুলোতে ভাগ হয়ে যাবার কথা–
তোমার নিশ্চয়ই মাথা খারাপ হয়েছে রিশান, তুমি নিশ্চয়ই পুরো গ্ৰহটাকে পারমাণবিক বিস্ফোরণে উড়িয়ে দিতে চাও না?
না তা চাই না। কিন্তু যেটুকু সম্ভব নিক্সিরলকে নষ্ট করতে চাই। যেভাবে সম্ভব।
ঠিক আছে।
রিশান ঘুরে ষুনের দিকে তাকাল। বলল, ষুন—
বল।
তুমি আমাকে ছোট একটা ঘরে সবরকম যোগাযোগ থেকে বিচ্ছিন্ন করে আটকে রেখেছিলে–
ষুন একটু অস্বস্তি নিয়ে রিশানের দিকে তাকাল। রিশান শীতল গলায় বলল, একজন মানুষকে এর থেকে বড় কোনো যন্ত্রণা দেয়া যায় বলে আমার জানা নেই।
আমি–আমি দুঃখিত। কিন্তু আমার কোনো উপায় ছিল না।
সেটা সম্পর্কে আমি নিশ্চিত নই। কিন্তু আমি তোমাকে এই ব্যাপারটা দেখাতে চাই যতক্ষণ আমি ফিরে না আসছি আমার ইচ্ছে তুমি একটা ছোট বদ্ধঘরে সমস্ত যোগাযোগ থেকে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় বসে থাক।
তার কি কোনো প্রয়োজন আছে, রিশান?
না নেই। তবু আমার তাই ইচ্ছে। আমি এই অভিযানের দলপতি, রবোটগুলো আমার আদেশ চোখ বন্ধ করে পালন করবে। সানি একটা রবোটের সর্বনাশ করে ফেলেছে কিন্তু তোমাকে ধরে নেয়ার জন্যে আমার মনে হয় তিনটা রবোটই যথেষ্ট।
ষুন কোনো কথা না বলে স্থির চোখে রিশানের দিকে তাকিয়ে রইল।
১৩. বাই ভার্বালটি মাটির খুব কাছাকাছি
বাই ভার্বালটি মাটির খুব কাছাকাছি দিয়ে উড়ে যাচ্ছে। নিচে গাঢ় ধূসর রঙের পাথর, বাতাসের ঝাঁপটায় তার উপর দিয়ে বাদামি রঙের ধুলো উড়ছে। আকাশে অশরীরী এক ধরনের আলো চারদিকে এক অতিপ্রাকৃতিক পরিবেশের জন্ম দিয়েছে। বাই ভার্বালের ঘোট কন্ট্রোলঘরে নিয়ন্ত্রণ সুইচটি হালকা হাতে রিশান স্পর্শ করে আছে, তাকে শক্ত করে ধরে রেখেছে সানি।