অনেক দূর থেকে সে হইচই চেঁচামেচি এবং চিৎকার শুনতে পায়, কাছে গিয়ে তার চক্ষুস্থির হয়ে যায়। দেয়ালে পিঠ দিয়ে সানি ড়িয়ে আছে, তার হাতে রিশানের এটমিক ব্লাস্টারটি। ঘরে ষুন এবং নিডিয়া পাথরেঞ্জর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছে। কাছাকাছি একটি রবোটের ধ্বংসাবশেষ, হাঁটুর উপর থেকে পুরো অংশটি এটমিক ব্লাস্টারের বিস্ফোরণে পুরোপুরি বাষ্পীভূত হয়ে গেছে। ঘরে দেয়ালে একটা বড় গর্ত এবং সমস্ত ঘরে এক ধরনের ধোঁয়া। সানি এটমিক ব্লাস্টারটি আরেকটু উপরে তুলে বলল, আমার কাছে যদি কেউ আসে আমি ঠিক এইভাবে শেষ করে দেব। খবরদার কেউ আছে আসবে না।
রিশান দরজার কাছাকাছি থেমে গিয়ে বলল, আমি তোমাকে সাহায্য করতে এসেছি সানি। তুমি আমাকে বিশ্বাস করতে পার।
আমি কাউকে বিশ্বাস করি না
এটমিক ব্লাস্টারটি অসম্ভব শক্তিশালী সানি, যদি কোনোভাবে আবাসস্থলের মূল দেয়ালে ফুটো হয়ে যায়, পুরো আবাসস্থল ধ্বংস হয়ে যাবে।
ধ্বংস হলে হবে, কিছু আসে যায় না আমার
রিশান এক পা এগিয়ে এসে বলল, সানি সত্যি তুমি আমাকে বিশ্বাস কর না? বেঁচে থাকতে হলে কাউকে–না–কাউকে বিশ্বাস করতে হয়।
আমি কাউকে বিশ্বাস করি না
কর। তুমি তোমার মাকে বিশ্বাস কর। কর না?
সানি চমকে উঠে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে রিশানের দিকে তাকাল, কিন্তু কিছু বলল না। রিশান আরো এক পা এগিয়ে গিয়ে বলল, কর না?
তুমি আমার মায়ের কথা জান?
জানি।
সানি হঠাৎ করে এটমিক ব্লাস্টারটা বিপজ্জনকভাবে ঝাঁকুনি দিয়ে চিৎকার করে বলল, তাহলে সবাইকে মেরে ফেলছ কেন?
আমি মারছি না সানি। বিশ্বাস কর আমি বাঁচাতে চাইছি। তুমি আমাকে এটমিক ব্লাস্টারটি দাও, হয়তো কিছু একটা করা যাবে
না।
দাও সানি। তুমি আমাকে বিশ্বাস কর– মানুষ হলে কাউকে–না–কাউকে বিশ্বাস করতে হয়। আমাকে তোমার বিশ্বাস করতেই হবে।
তুমি আমার মাকে বাঁচাবে?
আমি জানি না সম্ভব হবে কি না; কিন্তু আমি চেষ্টা করব। আমাদের হাতে সময় খুব কম সানি। তুমি আমাকে এটমিক ব্লাস্টারটা দাও।
সানি কিছুক্ষণ রিশানের দিকে তাকিয়ে থেকে তার দিকে এটমিক ব্লাস্টারটা এগিয়ে দেয়।
রিশান এগিয়ে গিয়ে সানির হাত থেকে সেটা নেয়া মাত্র ষুন রিশানের দিকে ঘুরে বলল, তুমি কেমন করে বের হয়ে এসেছ?
সেটা নিয়ে এখন কথা বলার প্রয়োজন বা সময় কোনোটাই নেই ষুন। তোমাকে সবার আগে নিক্সিরল গ্যাসের ট্যাংকগুলো বিকল করতে হবে।
ষুন খানিকক্ষণ কোনো কথা না বলে তার দিকে তাকিয়ে থাকে, তারপর শীতল গলায় বলে, আমি এই অভিযানের দলপতি, এখানে আমি আদেশ দেব–
রিশান অধৈর্য হয়ে বলল, দলপতিগিরি দেখানোর অনেক সময় পাবে ষুন, এখন কাজের কথায় আস–এই মুহূর্তে আমাদের নিক্সিরল গ্যাস থামাতে হবে, যেভাবে হোক। এই পৃথিবীর সব বুদ্ধিমান প্রাণী ধ্বংস হয়ে যাবে না হয়। তারা গ্রুন দিয়ে তৈরী–এই গ্রহের যারা মারা গেছে তাদের সবার মস্তিষ্কের কপি তৈরি করেছে, সানির মা আছে সেখানে, আমি নিশ্চিত লি–রয়ও এখন আছে!
কী বলছ তুমি?
আমি সত্যি বলছি। সানিকে জিজ্ঞেস করে দেখ।
ষুন ঘুরে সানির দিকে তাকাল, সানি মাথা নাড়ল সাথে সাথে। ষুন খানিকক্ষণ হতবুদ্ধির মতো দাঁড়িয়ে থেকে বলল, তার মানে এখানে বুদ্ধিমান প্রাণী আসলে এখানকার মৃত মানুষেরা?
অনেকটা তাই—
তাহলে তারা আমাদের সাথে যোগাযোগ করে না কেন?
আমরা কি তার সুযোগ দিয়েছি? কিন্তু এখন কথা বাড়িয়ে লাভ নেই ষুন, নিক্সিরল গ্যাসকে যেভাবে হোক বন্ধ করতে হবে ষুন। যেভাবে হোক–
ষুন কোনো কথা না বলে চুপ করে রইল। রিশান অধৈর্য হয়ে বলল, কথা বলছ না কেন ষুন?
ষুন ইতস্তত করে বলল, আমি দুঃখিত রিশান, নিক্সিরল গ্যাসের ট্যাংকগুলো চার্জ করা হয়ে গেছে।
তার অর্থ কী?
তার অর্থ সেগুলোর নিয়ন্ত্রণের জন্যে যে ইউনিটগুলো ছিল সেগুলো কাজ করতে শুরু করেছে। এখন থেকে কিছুক্ষণের মাঝে সেগুলো বিস্ফোরিত হয়ে সারা গ্রহে নিক্সিরল ছড়িয়ে দেবে।
এটা বন্ধ করার কোনো উপায় নেই?
না।
রিশান হতবুদ্ধির মতো খানিকক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে সানির দিকে ঘুরে তাকাল, তার সারা মুখ রক্তশূন্য ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। সে বিড়বিড় করে বলল, তোমরা আমার মাকে আবার মেরে ফেলবে?
রিশান কোনো কথা বলল না
সানি হঠাৎ ছুটে ঘর থেকে বের হয়ে গেল। রিশান পিছনে পিছনে ছুটে গিয়ে তাকে কোনোমতে ধরে ফেলে জিজ্ঞেস করল, কোথায় যাও সানি।
একটা ঝটকা মেরে হাত ছুটিয়ে নিয়ে সানি চিৎকার করে বলল, ছাড় আমাকে
কিন্তু, তুমি কোথায় যাও
মায়ের কাছে।
মায়ের কাছে?
হ্যাঁ।
তুমি জান তারা কোথায়?
জানি
আমিও যাব তোমার সাথে।
কেন?
হয়তো সেখানে কিছু একটা করা যাবে, হয়তো কোনোভাবে তাদের বাঁচানো যাবে।
সত্যি? সানি বড় বড় চোখ করে বলল, সত্যি?
রিশান সানির ঘাড়ে হাত দিয়ে বলল আমি জানি না সেটা সত্যি কি না, কিন্তু চেষ্টা তো করতে হবে। যাও তুমি পোশাক পরে আস, আমাদের হাতে কোনো সময় নেই।
সানি ছুটতে ছুটতে ঘর থেকে বের হয়ে গেল। রিশান ঘরের ভিতরে ঢুকে ষুনের কাছাকাছি এগিয়ে গিয়ে বলল, ষুন, আমি আর সানি বাইরে যাচ্ছি, শেষ চেষ্টা করে দেখতে চাই
কিন্তু
কিন্তু কী?
ষুন একটা নিশ্বাস ফেলে বলল, আমি পুরো ব্যাপারটা আবার ভেবে দেখেছি। আমরা এখন যেটা জেনেছি, পৃথিবীর মানুষেরা সেটা নিশ্চয়ই জানে। তারপরও তারা যদি চায় আমরা এই গ্ৰহটাকে জীবাণুমুক্ত করি তার নিশ্চয়ই কোনো একটা কারণ আছে–