নিডিয়া একটু এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করল, কী হয়েছে রিশান?
রিশান হাত তুলে কাঁপা গলায় বলল এই কি নারা?
নিডিয়া অবাক হয়ে বলল, কিন্তু তুমি কেমন করে বুঝতে পারলে?
আমি যখন সানির খোঁজে বের হয়েছিলাম তখন একে দেখেছি।
নিডিয়া চমকে উঠে বলল, কী বললে? একে দেখেছ?
হ্যাঁ। স্পষ্ট দেখেছি, দুবার
তোমার চোখের ভুল কিংবা দৃষ্টিবিভ্রম।
হতে পারে, কিন্তু দৃষ্টিবিভ্রম হয়ে এই মেয়েটিকে কেন দেখব?
জানি না। আমি জানি না। নিডিয়া মাথা নেড়ে বলল, চল এই ঘর থেকে বের হয়ে যাই। এই ঘরের ভিতরে আমার ভালো লাগে না।
চল যাই।
দুজনে কোনো কথা না বলে ঘর থেকে বের হয়ে হাঁটতে থাকে। সিঁড়ির কাছাকাছি এসে রিশান বলল, আমি যখন দ্বিতীয়বার এই মেয়েটিকে দেখেছি তখন তার ছবি তুলে রেখেছি।
কোথায় সেই ছবি?
নিশ্চয়ই আমার তথ্যকেন্দ্রে আছে
আমাকে দেখাও, আমি দেখতে চাই।
রিশান বুকের কাছাকাছি একটা সুইচ স্পর্শ করতে গিয়ে থেমে গিয়ে বলল, আমার একটু ভয় করছে। যদি দেখতে পাই কিছু নেই?
নিডিয়া একটা নিশ্বাস ফেলে বলল, ভয় পাওয়ার সময় পার হয়ে গেছে রিশান। তুমি ছবিটা বের কর
রিশান ছবিটা বের করল এবং রিশানের সাথে সাথে নিডিয়াও সবিস্ময়ে দেখল ছবিতে। সাদা একটি ছায়ামূর্তি স্থির চোখে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে। ছবিটি কিংবা ছায়ামূর্তিটি খুব স্পষ্ট নয়; কিন্তু সেটি যে নারার ছায়ামূর্তি সে ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। দুজন কয়েক মুহূর্ত কোনো কথা বলল না, রিশান অনুভব করল আতঙ্কের একটা বিচিত্র অনুভূতি তার মেরুদণ্ড দিয়ে বয়ে যাচ্ছে। নিডিয়া রিশানের দিকে তাকিয়ে বলল, আমার মনে হয় ব্যাপারটি সবাইকে জানানোর প্রয়োজন আছে।
হ্যাঁ, চল নিচে যাই।
নিচে বড় হলঘরটিতে চারটি রবোট পাশাপাশি বসেছিল। সানিকে নিয়ে পরীক্ষা শেষ হয়েছে, সে একটা গোল জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে। ষুন চিন্তিত মুখে হাতে একটা ছোট ক্রিস্টাল ডিস্ক নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। রিশান এবং নিডিয়াকে দেখে একটু এগিয়ে এসে বলল, আমি সানিকে খুব ভালো করে পরীক্ষা করে দেখেছি–অস্বাভাবিক কিছু পেলাম না। সে ঠিক অন্য সব মানুষের মতো
তাকে ইচ্ছে করলেই গ্রুনি আক্রমণ করতে পারে?
হ্যাঁ। কিন্তু কোন এক অজ্ঞাত কারণে তাকে এখন পর্যন্ত আক্রান্ত করছে না?
না। রিশান সানির দিকে খানিকক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলল, আমরা এখন পর্যন্ত যেসব ব্যাপার ঘটতে দেখেছি তার থেকে একটা জিনিস পরিষ্কারভাবে বোঝা যায়, গ্রুনি অত্যন্ত নিম্ন শ্রেণীর একটা জীবাণুবিশেষ; কিন্তু একটা খুব বুদ্ধিমান প্রাণী তাকে নিয়ন্ত্রণ করে। সানি যে এই জীবাণু দিয়ে আক্রান্ত হচ্ছে না তার কারণ সেই বিশেষ বুদ্ধিমান প্রাণী তাকে আক্রান্ত করতে চায় না।
ষুন ভুরু কুঁচকে বলল, আমি জানি না তুমি কেন এই কথা বলছ। অসংখ্যবার এই গ্রহকে তন্ন তন্ন করে খোজা হয়েছে, গ্রুনি ছাড়া আর কিছু পাওয়া যায় নি। এই গ্রহের একমাত্র জীবন্ত প্রাণী হচ্ছে গ্রুনি। গ্রুনি একটা জীবাণু ছাড়া কিছু নয়, তার বুদ্ধিমত্তা থাকার কোনো প্রশ্নই আসে না।
আমি সেটা নিয়ে এখন কিছু বলতে চাই না ষুন। কিন্তু আমি যখন সানিকে খুঁজতে গিয়েছিলাম তখন কী দেখেছি তুমি শুনলে অবাক হয়ে যাবে। আমি তার ছবি তুলে এনেছি, নিডিয়া সেই ছবি দেখেছে।
কিসের ছবি?
রিশান সানির দিকে তাকাল, সে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে। রিশান একটু ইতস্তত করে কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল, ঠিক তখন ঘরঘর করে কোয়ারেন্টাইন ঘরের দরজা খুলে লি–রয় বড় হলঘরটিতে ঢুকল। মহাকাশচারীর পোশাকের মাঝে তার চেহারাতে এক ধরনের বিচলিত ভাব।
রিশান লি–রয়ের দিকে ঘুরে তাকিয়ে বলল, কী খবর লি–রয়?
আমি স্কাউটশিপটা দেখতে গিয়েছিলাম। তোমরা বিশ্বাস করবে না সেখানে কী হয়েছে।
কী?
খুব যত্ন করে কেউ একজন নিয়ন্ত্রণ মডিউলের মূল ভরকেন্দ্রটি নষ্ট করেছে। মহাকাশযান থেকে আরেকটা না আনা পর্যন্ত স্কাউটশিপটা চালানোর কোনো উপায় নেই।
কেউ কিছুক্ষণ কোনো কথা বলল না। হঠাৎ সানি একটু এগিয়ে এসে বলল, তোমার কি মাথা ব্যথা করছে?
লি–রয় অবাক হয়ে সানির দিকে তাকিয়ে বলল, হ্যাঁ। তুমি কেমন করে বুঝতে পারলে।
সানি লি–রয়ের প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে পাল্টা প্রশ্ন করল, তোমার কি মাথার বাম পাশে বেশি ব্যথা করছে।
লি–রয় একটু অস্বস্তির সাথে ডান হাতটা উপরে তুলে বলল, হ্যাঁ মাথার বাম পাশে চিনচিন করে ব্যথা করছে?
ডান হাতটা কি তোমার অবশ লাগছে?
লি–রয় অবাক হয়ে নিজের ডান হাতের দিকে তাকিয়ে বলল, হ্যাঁ। সত্যিই ডান হাতটা কেমন জানি অবশ অবশ লাগছে। তুমি কেমন করে জান?
সানি কোনো কথা না বলে লি–রয়ের দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে রইল, তারপর ঘুরে রিশানের দিকে তাকিয়ে বলল, এই মানুষটিকে গ্রুনি আক্রমণ করেছে। একটু পরেই এই মানুষটি মারা যাবে। তাকে তোমরা শুইয়ে রাখ।
ঘরে কেউ কোনো কথা বলল না। সবাই স্থির দৃষ্টিতে সানির দিকে তাকিয়ে থাকে, রিশান খানিকক্ষণ চেষ্টা করে বলল, কিন্তু কিন্তু লি–রয় মহাকাশচারীর পোশাক পরে আছে, তার ভিতরে কোনো কিছু ঢুকতে পারবে না।
লি–রয় হাত তুলে বলল, আমার মনে হয় সানি ঠিকই বলেছে, বাইরে আমার পোশাকের মাঝে হঠাৎ একটা সূক্ষ্ম ফুটো হয়েছে, অত্যন্ত সূক্ষ্ম, আমার পোশাকের মূল মডিউল সেটা নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে আমাকে রক্ষা করেছে। কিন্তু আমি জানি বাইরে কিছুক্ষণের জন্যে আমার পোশাকটি নিশ্ছিদ্র ছিল না।