রিশান জিজ্ঞেস করল, কী?
বুদ্ধিমান প্রাণীটির বুদ্ধিমত্তা ধীরে ধীরে বেড়েছে। প্রথমে সে ছোটখাটো কৌশল করেছে, যতই দিন যাচ্ছে তার কৌশল বেড়েছে। দেখে মনে হয় প্রায় মানুষের মতো–যেন আস্তে আস্তে শিখছে।
নিডিয়া বলল, এই গ্রহে দ্বিতীয় আরেকটা ব্যাপার রয়েছে। কোনো বিচিত্র গ্রহে যখন মহাকাশচারীরা নিঃসঙ্গ জীবন যাপন করে সবসময় তারা কিছু কিছু বিচিত্র অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়। অবাস্তব জিনিসপত্র দেখে–অপ্রাকৃতিক অভিজ্ঞতা হয়–এর সবই এক ধরনের বিভ্রম। কিন্তু এই গ্রহে যারা ছিল তাদের অপ্রাকৃতিক অভিজ্ঞতা তুলনামূলকভাবে বেশি। সত্যি কথা সেই অপ্রাকৃতিক ঘটনাগুলো পড়লে মনে হয় সত্যি সত্যি বুঝি সেগুলো ঘটেছে।
রিশান স্থির চোখে বলল, কী রকম ঘটনা?
নিডিয়া ইতস্তত করে বলল, আমি এখন ঠিক সেগুলো বর্ণনা করতে চাই না, মনের মাঝে এক ধরনের চাপের সৃষ্টি করতে পারে।
তবুও শুনি।
যেমন একজন বিজ্ঞানীর অভিজ্ঞতা লেখা আছে, সে এই গ্রহে একা একা হাঁটছিল। হঠাৎ–নিডিয়া কথা বলতে গিয়ে থেমে যায়।
হঠাৎ কী?
হঠাৎ সে ঘুটঘুটে অন্ধকারে আবছা আবছা দেখতে পায় তার দিকে কী যেন এগিয়ে আসছে, কাছাকাছি এলে দেখতে পেল একটা হাত
হাত?
হ্যাঁ, কনুই পর্যন্ত একটা হাত–তাকে নাকি জাপটে ধরার চেষ্টা করছিল, সেই বিজ্ঞানী ভয়ঙ্কর ভয় পেয়ে ছুটে কোনোভাবে পালিয়ে এসেছে। কয়েকদিন পর সে মারা গেল। নিডিয়া নিশ্বাস ফেলে বলল, খুব মন খারাপ করা গল্প।
হা। রিশান মাথা নেড়ে বলল, ঠিকই বলেছ
খানিকক্ষণ সবাই চুপ করে থাকে। নিডিয়া আবার কী একটা বলার চেষ্টা করছিল, ঠিক তখন ষুন বলল, এতক্ষণ নিডিয়া যেটা বলেছে তার সাথে পৃথিবীর নির্দেশের কিন্তু কোনো মতবিরোধ নেই।
বিশান সোজা হয়ে বলল, কী বলতে চাইছ তুমি?
আমি বলছি যে পৃথিবী থেকে আমাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে গ্রহটিকে জীবাণুমুক্ত করতে। এই জীবাণু বুদ্ধিমান প্রাণী নয়, কাজেই একে ধ্বংস করতে আমাদের কোনো দ্বিধা থাকা উচিত নয়
রিশান বাধা দিয়ে বলল, কিন্তু যে–কোনো জীবিত প্রাণী অন্য জীবিত প্রাণীর ওপর নির্ভর করে। পৃথিবীতে গাছপালার কোনো বুদ্ধি নেই, এখন আমরা যদি সব গাছ ধ্বংস করে দিই তাহলে পৃথিবীতে কি অন্যান্য বুদ্ধিমান প্রাণী বেঁচে থাকতে পারবে?
ষুন একটু রেগে উঠে বলল, গাছ আর জীবাণু এক ব্যাপার নয়। তাছাড়া এই ব্যাপারে আমাদের মাথা ঘামানোর কোনো প্রয়োজন নেই। এখানকার সমস্ত তথ্য পৃথিবীতে পাঠানো হয়েছে। পৃথিবীর সমস্ত প্রযুক্তি ব্যবহার করে একটা সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আমাদের সেই সিদ্ধান্ত মানতে হবে। যদি আমাদের ভালো নাও লাগে মানতে হবে। তারা হয়তো কিছু একটা জানে যেটা আমরা জানি না।
সেটা কী?
ষুন মাথা নাড়ল, আমি জানি না। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি তাদের সিদ্ধান্ত মানুষের মঙ্গলের জন্যে আমাদের সেটা মানতেই হবে। এই গ্রহ ছেড়ে যাবার আগে আমাদের গ্রুনি জীবাণুকে ধ্বংস করে যেতে হবে।
রিশান লি–রয়ের দিকে তাকিয়ে বলল, তুমি কী বল লি–রয়?
লি–রয় একটু ইতস্তত করে বলল, ফুন সত্যি কথাই বলেছে রিশান। ব্যাপারটা আমরা আরো ঠাণ্ডা মাথায় ভেবে দেখব, কিন্তু মনে হয় ফিরে যাবার আগে আমাদের গ্রুনি জীবাণুকে ধ্বংস করে যেতে হবে। তুমি যদি কোনোভাবে প্রমাণ করতে পার এখানকার অদৃশ্য ভূতুড়ে বুদ্ধিমান প্রাণী কোনোভাবে গুনির ওপর নির্ভর করে বেঁচে আছে তাহলে অবিশ্যি ভিন্ন কথা।
মহাকাশযান থেকে বিটি বাধা দিয়ে বলল, আমার মনে হয় এটা নিয়ে এখন তর্ক বিতর্ক করে লাভ নেই। সবাই নিরাপদে মহাকাশযানে ফিরে আস, তারপর দেখা যাবে। তাছাড়া রিশানকে খুব ক্লান্ত দেখাচ্ছে, তার মনে হয় বিশ্রাম নেয়া দরকার।
হ্যাঁ, ঠিকই বলেছ। লি–রয় গলা উঁচিয়ে বলল, সবাই এখন বিশ্রাম নাও। ঝড়টা কমে আসা মাত্র মহাকাশযানে ফিরে আসতে হবে। শুভরাত্রি।
টুক করে একটা শব্দ হয়ে হলোগ্রাফিক দৃশ্য দুটি অদৃশ্য হয়ে গেল। রিশান একটা নিশ্বাস ফেলে সানির দিকে তাকাল। সানি জ্বলজ্বলে চোখে রিশানের দিকে তাকিয়ে আছে। রিশান নরম গলায় বলল, ঘুমাও সানি, একটু বিশ্রাম নাও।
সানি খানিকক্ষণ তীব্র চোখে রিশানের দিকে তাকিয়ে থেকে বলল, তোমরা এই গ্রহের কিছু জান না।
রিশান অবাক হয়ে বলল, কী জানি না?
কিছু জান না
কেন এই কথা বলছ?
সানি কোনো কথা না বলে মুখ ঘুরিয়ে নিল। রিশান খানিকক্ষণ অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে থেকে আবার জিজ্ঞেস করল, সানি, তুমি কেন এই কথা বলছ?
সানি কোনো কথা বলল না। রিশান আবার জিজ্ঞেস করল, তুমি আমাকে বলতে চাও?
সানি মাথা নাড়ল। রিশান একটা নিশ্বাস ফেলে বলল, ঠিক আছে তাহলে এখন তুমি ঘুমাও
রিশান সানির পাশে শুয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করতে থাকে।
মহাকাশচারীর পোশাকে ঘুমানো খুব সহজ নয়, শুয়ে থেকে খানিকটা বিশ্রাম নেয়া হয়, তার বেশি কিছু নয়। দীর্ঘ সময় শুয়ে থেকে যখন রিশানের চোখে ঘুম নেমে আসে, হঠাৎ সে অবাক হয়ে দেখতে পায় গুহার মাঝামাঝি একটা নারীমূর্তি স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে– তার দিকে তাকিয়ে আছে স্থির দৃষ্টিতে।
আতঙ্কে চিৎকার করতে গিয়ে অনেক কষ্টে সে নিজেকে সামলে নিল, সে কি সত্যি দেখছে নাকি এটি তার দৃষ্টিবিভ্রম? চোখ বন্ধ করার আগে সে বুকের কাছে তার স্বয়ংক্রিয় ছবি তোলার যন্ত্রটি স্পর্শ করে, তারপর শক্ত করে দুই চোখ বন্ধ করে ফেলল।