বাইরে ঝড়ের বেগ খুব বেড়েছে এবং মাঝে মাঝেই ছোটখাটো বিস্ফোরণের শব্দ হচ্ছে, তার মাঝে সবাই কোনোভাবে কথাবার্তা চালিয়ে যাচ্ছে। লি–রয় বলল, রিশান তুমি সত্যিই কোনোরকম সাহায্য চাও না? ইচ্ছে করলে আমরা মহাকাশযান থেকে একটা বিশেষ স্কাউটশিপের ব্যবস্থা করতে পারি–
কোনো প্রয়োজন নেই। রিশান মাথা নেড়ে বলল, আমার এখানকার গাইড সানি বলেছে এই ঝড় এক সময়ে থেমে যাবে তখন হেঁটে চলে যেতে পারব। তাছাড়া এখন বৃষ্টির মতো এসিড পড়ছে, কোনো স্কাউটশিপ পাঠানো মনে হয় বুদ্ধিমানের কাজ হবে না।
মহাকাশযান থেকে বিটি বলল, কখন যে তোমরা ভালোয় ভালোয় ফিরে আসবে এবং কখন যে আমরা এই পোড় গ্রহ থেকে বের হতে পারব কে জানে!
লি–রয় হেসে বলল, অধৈর্য হোয়ো না বিটি! প্রথমে আমরা এই গ্রহটাকে যেটুকু বিপজ্জনক ভেবেছিলাম এখন আর সেরকম বিপজ্জনক মনে হচ্ছে না।
কারণটা কী?
গত কয়েক ঘণ্টা নিডিয়া এই গ্রহের প্রাণী সম্পর্কে সত্যিকারের খানিকটা গবেষণা করেছে। সেটা করার পর মনে হচ্ছে অবস্থা খুব খারাপ নয়। লি–রয় নিডিয়ার দিকে তাকিয়ে বলল, নিডিয়া তুমি বলবে?
বলছি। নিডিয়া হাতের ছোট ক্রিস্টাল ডিস্কটাতে চোখ বুলিয়ে বলল, মানুষ এই গ্রহের হিসেবে প্রায় চল্লিশ বছর আগে এই গ্রহে বসতি করেছে। গ্রহটি বসতি স্থাপনের উপযোগী নয় তবু মানুষ এখানে বসতি করেছিল। কারণ এই গ্রহে এক ধরনের প্রাণের বিকাশ হয়েছিল। পৃথিবীর তুলনায় এই প্রাণ অত্যন্ত তুচ্ছ–এককোষী নিম্নস্তরের প্রাণ, বড়জোর এক ধরনের জীবাণুর মতো, কিন্তু একটি প্রাণ তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন এই নিম্নস্তরের প্রাণ নিয়ে গবেষণা করেছে, তার সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করেছে এবং এক সময়ে আবিষ্কার করেছে এটি সম্পর্কে আর জানার কিছু বাকি নেই। তখন তারা পৃথিবীতে ফিরে যাবার প্রস্তুতি নিল, কিন্তু তাদের খুব দুর্ভাগ্য–ঠিক তখন তাদের একটা দুর্ঘটনা ঘটে, একজন বিজ্ঞানী এই এককোষী জীবাণুতে আক্রান্ত হয়ে কিছু করার আগেই মারা গেল।
এই গ্রহের এই মন খারাপ করা পরিবেশে সেটা তাদের জন্যে খুব বড় এটা আঘাতের মতো ছিল এবং কয়েকজন বিজ্ঞানী দাবি করেছে তারা মাঝে মাঝে তাদের মৃত সহকর্মীকে ঘুরে বেড়াতে দেখেছে
রিশান বাধা দিয়ে বলল, কী বললে তুমি? তাদের মৃত সহকর্মীকে দেখেছে?
হ্যাঁ, কিন্তু সেটা মানসিক চাপ থেকে সৃষ্টি এক ধরনের দৃষ্টিবিভ্রম, নানা ধরনের অভিযানে এ রকম ব্যাপার ঘটেছে বলে শোনা গেছে। যাই হোক, বিজ্ঞানীরা যখন পৃথিবীতে ফিরে আসার প্রস্তুতি নিচ্ছিল তখন
রিশান আবার বাধা দিয়ে বলল, কী রকম ছিল তাদের সহকর্মী? স্পষ্ট না অস্পষ্ট?
নিডিয়া একটু অবাক হয়ে রিশানের দিকে তাকিয়ে বলল, সেটা পরিষ্কারভাবে লিপিবদ্ধ নেই–যেটুকু আছে তাতে মনে হয় অস্পষ্ট ছায়ার মতো–
কতক্ষণ দেখেছে তারা?
খুব অল্প সময়। নিডিয়া ঘুরে রিশানের দিকে তাকিয়ে বলল, তুমি এই ব্যাপারটি নিয়ে এত মাথা ঘামাচ্ছ কেন?
না, এমনি। বলে যাও যা বলছিলে।
হ্যাঁ, বিজ্ঞানীরা যখন ফিরে আসার প্রস্তুতি নিচ্ছিল তখন তারা আবিষ্কার করে তাদের মহাকাশযানটি কারা যেন নষ্ট করে গেছে। সেটি এমনভাবে নষ্ট করা হয়েছে যেটি শুধুমাত্র আরেকজন মানুষ করতে পারে প্রথমে বিজ্ঞানীরা ভেবেছিল তাদের মাঝে কেউ একজন করেছে কিন্তু সেটি কিছুতেই বিশ্বাসযোগ্য একটা ব্যাপার নয়।
বিজ্ঞানীরা সেটা নিয়ে অনেক মাথা ঘামিয়েছে, শেষ পর্যন্ত তারা বিশ্বাস করতে বাধ্য হয়েছে যে এই গ্রহে নিশ্চয়ই কোনো বুদ্ধিমান প্রাণী আছে। সেই প্রাণীকে তারা খুঁজে বের
করার অনেক চেষ্টা করেছে কিন্তু কিছুতেই খুঁজে পায় নি। এদিকে একজন একজন করে সবাই সেই জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে।
রিশান বাধা দিয়ে বলল, না সবাই না। সানি বেঁচে আছে।
হ্যাঁ, সানি ছাড়া সবাই মারা গেছে। সানির ভিতরে নিশ্চয়ই সেই জীবাণুর প্রতিষেধক কিছু একটা রয়ে গেছে যেটা আর কারো নেই। বিজ্ঞানীরা সেটা জানত না–আমরা জানি।
লি–রয় বলল, এর মাঝে কিছু দুর্বোধ্য ব্যাপার রয়েছে। যেমন–এটা মোটামুটি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে এখানে কোনো এক ধরনের বুদ্ধিমান প্রাণী রয়েছে কিন্তু কিছুতেই সেই প্রাণীকে খুঁজে পাওয়া যায় নি। এই প্রাণী মানুষের মহাকাশযানকে নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে কিন্তু কখনো সোজাসুজি কোনো মানুষের ক্ষতি করে নি। এই গ্রহের মানুষেরা মারা গেছে এই জীবাণু দ্বারা–যেটার নাম নি। কাজেই বলা যায় আমাদের সেই বুদ্ধিমান প্রাণী থেকে নিজেদের রক্ষা করার কোনো প্রয়োজন নেই, আমাদের নিজেদের রক্ষা করতে হবে গ্রুনি থেকে। এই জীবাণু থেকে!
নিডিয়া বলল, সেটা খুব সহজ। আমরা যতক্ষণ এই গ্রহে থাকব, মহাকাশচারীর পোশাক পরে থাকতে হবে। এর ভিতরের পরিবেশ পুরোপুরি পরিশুদ্ধ। বাইরে থেকে কোনো জীবাণু এর ভিতরে আসতে পারবে না।
মহাকাশযান থেকে বিটি বলল, শুনে খুশি হলাম কিন্তু তবুও তোমাদের বেশিক্ষণ এই গ্রহে থাকার কোনো প্রয়োজন নেই। ঝড়টা কমে যাওয়ামাত্র এখানে চলে আস।
হ্যাঁ চলে আসব।
লি–রয় বলল, এই গ্রহের বুদ্ধিমান প্রাণীগুলোর কাজকর্মগুলো যদি খুব ভালোভাবে লক্ষ করা যায় তাহলে একটা বিচিত্র জিনিস চোখে পড়ে।