পাঠিয়েছি।
রিশান কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে তারা আরো কিছু বলবে ভেবে কিন্তু মানুষগুলো কিছু বলল না। রিশান আবার তীব্র গলায় বলল, এখানে সব মানুষ মারা গিয়েছে কিন্তু তোমরা কেন মারা যাও নি? বল
নিডিয়া রিশানের হাত স্পর্শ করে বলল, তুমি শুধু শুধু উত্তেজিত হচ্ছ রিশান, তারা মারা যায় নি সেটা তাদের অপরাধ হতে পারে না।
ষুন তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে বিশানের দিকে তাকিয়েছিল। এবারে ঘুরে লি–রয়ের দিকে তাকিয়ে বলল, লি–রয়, আমাদের কি বিশানের উত্তেজিত কথাবার্তা শোনার প্রয়োজন আছে? আমরা কি আমাদের কাজ শুরু করতে পারি? আরো দুটি স্কাউটশিপ, প্রয়োজনীয় রাসায়নিক দ্রব্যাদি, যন্ত্রপাতি নামাতে পারি?
পার। তুমি কাজ শুরু করে দাও ষুন।
ষুন যোগাযোগ মডিউলটা কাছে টেনে নিয়ে কথা বলতে শুরু করছিল, হঠাৎ রিশান চিৎকার করে বলল, দাঁড়াও।
কী হয়েছে?
ওই দেখ। রিশান আঙুল দিয়ে দেয়ালের দিকে দেখায়।
কী? লি–রয় অবাক হয়ে বলল, কী?
রিশান এগিয়ে গিয়ে নিচু হয়ে বসে দেয়ালের দিকে তাকায়। সেখানে কাঁচা হাতে লেখা, আমি রবোটকে ঘৃণা করি।
রিশান ঘুরে তাকাল মানুষ চার জনের দিকে, বিস্ফারিত চোখে খানিকক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলল, আমি জানি তোমরা চার জন কেন মারা যাও নি। তোমরা আসলে মানুষ নও।
মানুষ চার জন কোনো কথা বলল না। কেমন জানি বিষণ্ণ চোখে তাকিয়ে রইল
রিশান এটমিক ব্লাস্টারটি টেনে নিয়ে চিৎকার করে বলল, তোমরা রবোট।
মানুষ চার জন কোনো কথা বলল না
নিডিয়া আর্তচিৎকার করে বলল, হায় ঈশ্বর!
রিশান এটমিক ব্লাস্টারটা টেনে গুলি করার জন্যে লক ইন করে হুঙ্কার দিয়ে বলল, কথা বল আবর্জনার দল, না হয় গুলি করে তোমাদের ফাপা কপোট্রন গুঁড়ো করে দেব। তোমরা রবোট?
হ্যাঁ।
আগে বল নি কেন?
তোমরা জিজ্ঞেস কর নি।
রিশান অনেক কষ্টে নিজেকে শান্ত করে জিজ্ঞেস করল, দেয়ালে এই লেখাটা কার?
সানির।
সানি?
হ্যাঁ।
কে সে?
একটা ছেলে। দশ বছর বয়স।
কোথায় সে?
রবোট চারটি কোনো কথা বলল না
রিশান চিৎকার করে বলল, কথা বল
জানি না।
জান না?
না। বসতি থেকে বের হয়ে গেছে।
দশ বছরের একটা বাচ্চা ছেলে একা একা এই বসতি থেকে বের হয়ে গেছে?
রবোট চারটি কোনো কথা বলল না। রিশান এটমিক ব্লাস্টারটা ঝাঁকুনি দিয়ে বলল, আবর্জনার বাটি, নোংরা প্লাস্টিক, সত্যি কথা বল, না হয় এক সেকেন্ডে তোমাদের কপোট্রন আমি ধুলো করে উড়িয়ে দেব! তোমাদের মহাকাশযান কেমন করে নষ্ট হয়েছে?
রবোট চারটি কোনো কথা বলল না।
কথা বল।
গ্রুনিরা ইঞ্জিন ক্যাপের সেফটি বালব খুলে নিয়ে গেছে। কন্ট্রোল প্যানেলের মূল প্রসেসর নষ্ট করেছে। ভ্যাকুয়াম সিল কেটে দিয়েছে। জ্বালানি ট্যাংক ফুটো করে–
গ্রুনিরা নিম্নশ্রেণীর প্রাণী নয়। তারা বুদ্ধিমান প্রাণী?
রবোট চারটি কোনো কথা বলল না
রিশান চিৎকার করে বলল, কথা বল। গ্রুনিরা বুদ্ধিমান প্রাণী?
আমরা জানি না।
পৃথিবীর মহাকাশকেন্দ্র জানে?
রবোটদের এক জন মাথা নাড়ল। বলল, জানে।
রিশান এটমিক ব্লাস্টারটা হাতবদল করে লি–রয়ের দিকে তাকাল, এক মুহূর্ত চুপ করে থেকে বলল, পৃথিবীর মহাকাশকেন্দ্র একটি বুদ্ধিমান প্রজাতিকে ধ্বংস করার জন্যে আমাদেরকে পাঠিয়েছে।
লি–রয় কোনো কথা বলল না। রিশান আরো এক পা এগিয়ে গিয়ে বলল, অনুমতি দাও আমি এই জঞ্জালগুলোর কপোট্রন গুঁড়ো করে দিই।
তার অনেক সময় পাবে রিশান। লি–রয় একটা নিশ্বাস ফেলে বলল, এখন তোমরা তোমাদের পোশাক পরে নাও। আমরা খুব বিপদের মাঝে আছি, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমাদের মহাকাশযানে ফিরে যেতে হবে।
রিশান তার এটমিক ব্লাস্টারটি কাঁধে ঝুলিয়ে নিয়ে লি–রয়ের দিকে ঘুরে তাকাল। কয়েক মুহূর্ত চুপ করে থেকে বলল, তোমরা যাও লি–রয়। আমি পরে আসছি।
তুমি কী করবে?
ছেলেটাকে খুঁজে বের করব। এ রকম একটা গ্রহে দশ বছরের একটা বাচ্চা ছেলে একা একা ঘুরে বেড়াচ্ছে, তুমি চিন্তা করতে পার?
০৭. অবলাল সংবেদী চশমা
রিশান চোখে অবলাল সংবেদী চশমাটা লাগিয়ে সামনে তাকাল। যতদূর চোখ যায় শুকনো পাথর ছড়িয়ে আছে। ঝড়ো বাতাসে ধুলো উড়ছে, তার সাথে এক ধরনের চাপা গর্জন। অত্যন্ত প্রতিকূল আবহাওয়া, এই গ্রহটি মানুষের বসবাসের জন্যে উপযোগী নয়। এই বিশাল গ্রহে দশ বছরের একটি ছেলে কোথাও হারিয়ে গেছে, তাকে খুঁজে বের করা খুব সহজ ব্যাপার নয়।
রিশান এটমিক ব্লাস্টারটি হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। চারটি বিকন ছেড়ে দেয়া হয়েছে, সেগুলো এই এলাকাটি স্ক্যান করা শুরু করেছে, দশ বছরের বাচ্চাটির পোশাকে যে বিপারটি লাগানো আছে সেটা খুঁজে পাওয়া মাত্র সেখানে লক্ষ্যবদ্ধ হয়ে যাবে। তারপর বিকনের সঙ্কেত অনুসরণ করে বাচ্চাটিকে খুঁজে বের করতে হবে। বাচ্চাটি এই বসতি থেকে কতদূরে সরে গিয়েছে তার ওপর নির্ভর করছে তাকে খুঁজে বের করতে কত সময় লাগবে। গ্রহটির বায়ুমণ্ডল যদি এত অস্বচ্ছ এবং এত আয়োনিত না হত তাহলে মহাকাশযানের অনুসন্ধানী যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা যেত, কিন্তু এই গ্রহটিতে তার কোনো আশা নেই।
রিশান ঝড়ো হাওয়ার মাঝে দাঁড়িয়ে তার যোগাযোগ মডিউলটির দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। মানুষের বসতিতে অন্যেরা তার জন্যে অপেক্ষা করছে, বাচ্চাটিকে নিয়ে ফিরে গেলে সবাই মহাকাশযানে ফিরে যাবে। যদি সে বাচ্চাটাকে খুঁজে না পায়? যদি কোনো কারণে বাচ্চাটি তার বিপারটি বন্ধ করে দিয়ে থাকে? রিশান জোর করে চিন্তাটি মাথা থেকে সরিয়ে দিল।