পাইলট কন্ট্রোল প্যানেলের দিকে তাকিয়ে ছিল বলে জানতে পারল না হেলিকপ্টারে সিটে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রাখা বিজ্ঞান কেন্দ্র এবং প্রতিরক্ষা দপ্তরের চার জন সর্বোচ্চ কর্মকর্তার মুখ হঠাৎ করে রক্তহীন ফ্যাকাসে হয়ে গেছে।
.
নীরা ত্রাতিনা স্টেইনলেস স্টিলের বায়ুশূন্য চেম্বারে ভাসমান ক্রোমিয়াম গোলকটির দিকে তাকিয়ে থেকে অতিবেগুনি রশ্মির একটি পালস পাঠাল। সিলিকন ডিটেক্টরটি পালসটিকে একটি বৈদ্যুতিক পালস্ হিসেবে তথ্য সংব্রক্ষণকারী কম্পিউটারে সংরক্ষণ করছে। সেদিকে তাকিয়ে থেকে নীরা ত্রাতিনা সন্তুষ্টির শব্দ করে বলল, চমৎকার! নিখুঁত ডিজাইন।
পাশে দাঁড়িয়ে টেকনিশিয়ান বলল, তোমার ডিজাইন সব সময় নিখুঁত।
উঁহু। তিরিশ সালে স্পেসশিপে একটা বায়ুনিরোধক যন্ত্র তৈরি করেছিলাম, ল্যান্ডিংয়ের সময় ভেঙেচুরে ভয়ংকর অবস্থা।
নীরা ত্রাতিনা ঘটনাটার একটা বর্ণনা দিতে যাচ্ছিল কিন্তু ঠিক তখনই তার টেলিফোন বেজে উঠল। টেলিফোনের স্ক্রিনে মানুষটির চেহারা অপরিচিত। শুধু যে অপরিচিত তা নয়, দেখে মনে হয় মানুষটি সামরিক বাহিনীর। একটু বিস্ময় নিয়ে সে বলল, নীরা ত্রাতিনা কথা বলছি।
প্রফেসর ত্রাতিনা। তোমাকে বিরক্ত করার জন্য দুঃখিত। তোমার সঙ্গে একটু কথা বলতে পারি? কথা দিচ্ছি এক মিনিট থেকে এক সেকেন্ড বেশি সময় নেব না।
ঠিক আছে। বলো।
তোমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে সন্ত্রাসীদের হাইজ্যাক করা একটা হেলিকপ্টার নেমেছে। আমাদের কমান্ডো দল ভেতরে ঢোকার জন্য রেডি। তাদের অর্ডার দেওয়ার আগে তোমার সঙ্গে কথা বলে নিতে চাইছি।
নীরা ত্রাতিনা অবাক হয়ে বলল, আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে সন্ত্রাসীরা কেন হেলিকপ্টার হাইজ্যাক করে নামাবে?
সেটা আমাদের জন্যও একটা রহস্য।
আর যদি নামিয়েই থাকে আইন রক্ষাকারী তাদের নিয়মমতো সিদ্ধান্ত নেবে। আমাকে কেন জিজ্ঞেস করছ?
সেনা কর্মকর্তা একটু ইতস্তত করে বলল, তার কারণ হেলিকপ্টারের হাইজ্যাকার বলেছে সে তোমার সঙ্গে দেখা করতে চায়!
আমার সঙ্গে? নীরা ত্রাতিনা অবাক হয়ে বলল, আমার সঙ্গে কেন?
সেটাও একটা রহস্য। যাই হোক, আমরা আইন রক্ষাকারী দপ্তর আগেও কখনো সন্ত্রাসী বা হাইজ্যাকারদের দাবিদাওয়া মানি নি, এখনো মানব না। আমরা এখনই আক্রমণ করতে যাচ্ছি।
ঠিক আছে কর।
ধন্যবাদ প্রফেসর।
ধন্যবাদ। নীরা ত্রাতিনা টেলিফোনটা বন্ধ করতে গিয়ে থেমে গেল। বলল, অফিসার।
বলো।
হাইজ্যাকারদের পরিচয় কী?
সেনা কর্মকর্তা একটু ইতস্তত করে বলল, সেটা আরেকটা রহস্য।
নীরা ভুরু কুঁচকে বলল, কী রকম রহস্য?
আমরা তার পরিচয় বের করতে পারি নি।
নীরা অবিশ্বাসের ভঙ্গিতে বলল, পরিচয় বের করতে পার নি? ডাটাবেসে তার সম্পর্কে কোনো তথ্য নেই?
ডাটাবেসে দেখতেই পাচ্ছি না। তার শরীরে ট্রাকিওশান সিগন্যাল নেই।
মানে?
মানে সেটাই। এই হাইজ্যাকারের কোনো পরিচয় পৃথিবীতে নেই।
সেটা কেমন করে হয়?
তা আমরা জানি না। কিন্তু তাই হয়েছে। তবে তুমি এটা নিয়ে চিন্তা করো না। আর দশ মিনিটের ভেতর আমরা এই রহস্যের সমাধান করে ফেলব। জীবিত কিংবা মৃত এই হাইজ্যাকারকে ধরে আনব।
হাইজ্যাকারের বয়স কত?
গলার স্বর শুনে মনে হচ্ছে পনের-ষোল বছরের বেশি নয়।
নীরা ত্রাতিনা অবাক হয়ে বলল, এত ছোট?
আরো বেশি হতে পারে। মেয়েদের গলার স্বর শুনে সব সময় বয়স অনুমান করা যায়।
নীরা চমকে উঠে বলল, মেয়ে?
ও আচ্ছা! তোমাকে বলা হয় নি? হ্যাঁ, হাইজ্যাকার একটা মেয়ে।
নীরা শীতল গলায় বলল, তোমার কমান্ডোদের অপেক্ষা করতে বলে। আমি আসছি।
সেনা কর্মকর্তা ব্যস্ত হয়ে বলল, তুমি এসে কী করবে? এটা আইন রক্ষাকারীদের ব্যাপার। আমাদের দায়িত্ব আমাদের পালন করতে দাও।
পনের-ষোল বছরের একটি মেয়ে সেনাদপ্তরের একটা হেলিকপ্টার হাইজ্যাক করে ফেলেছে, তার অর্থ, তোমরা নিশ্চয়ই তোমাদের দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন কর নি। যাই হোক, কেউ যেন হেলিকপ্টারে না ঢোকে। আমি আসছি।
সেনা কর্মকর্তা বিরস মুখে কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল, নীরা ত্রাতিনা তাকে সে সুযোগ দিল না। টেলিফোনের লাইন কেটে উঠে দাঁড়াল। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা টেকনিশিয়ানকে তার যন্ত্রটা দেখিয়ে বলল, তুমি এটাকে ক্যালিব্রেট কর। আমি আসছি।
কেন্দ্রীয় প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠে একটা বিশাল হেলিকপ্টার দাঁড়িয়ে আছে। হেলিকপ্টারটি ঘিরে নিরাপত্তা বাহিনীর অসংখ্য গাড়ি। নীরা ত্রাতিনা কাছাকাছি দাঁড়িয়ে থাকা অসহিষ্ণু কমান্ডো দলটিকে দেখতে পেল, সে অনুমতি দেয় নি বলে তারা ভেতরে ঢুকতে পারছে না।
খেলার মাঠটি সেনাবাহিনীর লোকেরা কর্ডন করে রেখেছে, কর্ডনের বাইরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা কৌতূহলী চোখে দাঁড়িয়ে আছে। নীরা ত্রাতিনা সেনাবাহিনীর একজন কর্মকর্তার কাছে নিজের পরিচয় দিতেই তাঁকে ভেতরে নিয়ে যাওয়া হল। হেলিকপ্টারের কাছাকাছি দ্বিতীয় একজন কর্মকর্তার দিকে তার দিকে এগিয়ে আসে। নীরা ত্রাতিনা মানুষটিকে চিনতে পারল। একটু আগে এই মানুষটি টেলিফোনে তার সঙ্গে কথা বলেছে। মানুষটি কাছে এসে নিচু গলায় বলল, প্রফেসর, আমি মনে করি তোমার কিছুতেই ভেতরে যাওয়া উচিত নয়। এটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ কাজ। তা ছাড়া—