.
নায়ীরা হেলিকপ্টারে ঢুকে দেখল ভেতরে চার জন মানুষকে তাদের সিটের সঙ্গে শক্ত করে বেঁধে রাখা হয়েছে। চার জনই খুব গুরুত্বপূর্ণ মানুষ। বিজ্ঞান কেন্দ্রের প্রধান রুবা, সামরিক বাহিনীর কমান্ডার গ্রুশান, নিরাপত্তা বাহিনীর মহাপরিচালক জিনা এবং চিকিৎসা কেন্দ্রের ড. ইলাক। পাইলটকে বাঁধা হয় নি, কিন্তু তার মাথায় একজন তরুণ একটা স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র ধরে রেখেছে। নায়ীরাকে হেলিকপ্টারে উঠতে দেখে বেঁধে রাখা চার জন মানুষ ভূত দেখার মতো চমকে উঠল। রুবা বলল, তু-তুমি?
নায়ীরা হাসার চেষ্টা করে বলল, হ্যাঁ। আমি। বিজ্ঞান কেন্দ্রের প্রধান রুবা, আমি।
তুমি কেমন করে?
সেটা নিয়ে আলাপ করার অনেক সময় পাওয়া যাবে। নায়ীরা পাইলটের দিকে তাকিয়ে বলল, আমি এই হেলিকপ্টারটি নিয়ে টেলিস শহরে যেতে চাই। তোমার কোনো আপত্তি আছে?
পাইলট মাথা নাড়ল। বলল, না! নেই।
চমৎকার! তোমাকে শুধু একটা জিনিস মনে করিয়ে দিতে চাই, আমি দু সপ্তাহের ভেতর মারা যাচ্ছি। যে দু সপ্তাহের ভেতর মারা যাবে সে দু সপ্তাহ আগেও মরতে খুব একটা ভয় পায় না, তাকে কোনো রকম ভয়ভীতি দেখানো যায় না। তাই আমি আশা করব তুমি অন্য কিছু করার চেষ্টা করবে না।
পাইলট মাথা নাড়ল। বলল, করব না।
তুমি যদি তোমার কথা রাখ, তা হলে তুমি তোমার সন্তানদের কাছে বলতে পারবে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় অবিচারটি দূর করতে তুমি সাহায্য করেছ।
আমি বুঝতে পারছি।
সেইসঙ্গে এ কথাও বলতে পারবে যে, পৃথিবীর জঘন্যতম চার জন অপরাধীকে তুমি আইনের হাতে তুলে দিয়েছিলে।
ড. ইলাক দাঁতে দাঁত ঘষে বলল, তুমি বোকার স্বর্গে বাস করছ। টেহলিস শহরের একটি মানুষও তোমার কথা বিশ্বাস করা দূরে থাকুক, তোমার কথা শুনতেও রাজি হবে না। হেলিকপ্টারটি মাটিতে নামার তিন মিনিটের মধ্যে কমান্ডো বাহিনী তোমাকে ধরে নিয়ে যাবে। পৃথিবীর কোনো মানুষ তোমাকে খুঁজে পাবে না মেয়ে।
আমার নাম নায়ীরা।
ক্লোনদের কোনো নাম হয় না।
নায়ীরা একটু এগিয়ে তার রিভলবারটি ড. ইলাকের মাথায় ধরল। সেফটি ক্যাচ টেনে বলল, আমার নাম নায়ীরা।
ড. ইলাক হঠাৎ দরদর করে ঘামতে থাকে। নায়ীরা হিংস্র গলায় বলল, আমি ট্রিগার টেনে তোমার মতো নরকের কীটকে হত্যা করে এই মুহূর্তে পৃথিবীটাকে আগের চাইতে একটু ভালো একটা গ্রহে পাল্টে দিতে পারি। আমি কখনো একটি পোকাও মারি নি। কিন্তু তোমাকে হত্যা করতে আমার বিন্দুমাত্র দ্বিধা হবে না। তুমি দেখতে চাও?
ড. ইলাক ফ্যাকাসে মুখে বলল না, আমি দেখতে চাই না। তারপর একটা নিশ্বাস ফেলে বলল, আমি দেখতে চাই না, নায়ীরা।
নায়ীরা রিভলবারটি সরিয়ে এনে বলল, এটি বিচিত্র কিছু নয় যে পৃথিবীর সব অপরাধীই আসলে কাপুরুষ। সে হেলিকপ্টারের ভেতর অস্ত্র হাতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা তরুণদের বলল, তোমরা এখন নেমে যাও। আমি এখন রওনা দিতে চাই।
তিহান এগিয়ে এসে বলল, আমি কি তোমার সঙ্গে আসব?
না, তিহান। আমি একা যেতে চাই।
যদি তোমার কোনো বিপদ হয়?
সেজন্যই আমি একা যেতে চাই।
ঠিক আছে। বিদায় নায়ীরা।
বিদায়।
অস্ত্র হাতে তরুণগুলো নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হেলিকপ্টারের ইঞ্জিনটি গর্জন করে ওঠে। গ্রামটির ওপরে একবার পাক খেয়ে কিছুক্ষণের মধ্যে সেটা দক্ষিণ দিকে টেহলিস শহরের দিকে ছুটে যেতে থাকে। নদীতীরের একটি গ্রামে হাতবাধা মোল জন সেনাসদস্য এক ধরনের বিস্ময় নিয়ে তাদেরকে ঘিরে দাঁড়িয়ে থাকা কৌতূহলী শিশু-কিশোর, তরুণ তরুণীদের দিকে তাকিয়ে থাকে। তারা শুনে এসেছে অবমানবরা বিকলাঙ্গ এবং হিংস্র। খুনি এবং রক্তপিপাসু। বিকৃত এবং ভয়ংকর। কিন্তু সেটি সত্য নয়, তারা একেবারেই সাধারণ। তারা সহজ এবং সরল। তারা সুদর্শন এবং সুঠাম। তারা বুদ্ধিমান এবং কৌতূহলী। একজন বৃদ্ধা তাদের পানীয় দিয়ে গেছে, তাদের ক্ষতস্থান ব্যান্ডেজ করে দিয়েছে। তাদের সাময়িক অসুবিধার জন্য ক্ষমা চেয়ে গেছে। কোথাও কিছু একটা গোলমাল আছে, সেটি কী সেনাসদস্যরা তা বুঝতে পারছে না।
.
হেলিকপ্টারের ভেতর পাইলট নায়ীরাকে জিজ্ঞেস করল, টেহলিস শহরে তুমি কোথায় যেতে চাও?
কেন্দ্রীয় প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে।
পাইলট অবাক হয়ে বলল, কেন্দ্রীয় প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে?
হ্যাঁ, তুমি কি সেখানে একটি খবর পাঠাতে পারবে?
পারব। প্রতিরক্ষা দপ্তরের কমপক্ষে এক ডজন রাডার এই মুহূর্তে আমাদের হেলিকপ্টারটিকে লক্ষ করছে। আমাদের প্রত্যেকটি কথা শুনছে।
চমৎকার! তুমি তাদের বলো আমি কেন্দ্রীয় প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে মহাকাশবিজ্ঞান বিভাগের বিজ্ঞানী নীরা ত্রাতিনার সঙ্গে দেখা করতে চাই।
হেলিকপ্টারের পেছনে বসে থাকা চার জন ইলেকট্রিক শক খাওয়ার মতো চমকে উঠল। পাইলট ইতস্তত করে বলল, তুমি যদি কিছু মনে না কর নায়ীরা, আমাকে বলবে, কেন তুমি একজন মহাকাশবিজ্ঞানীর সঙ্গে দেখা করতে চাও?
আমি মহাকাশবিজ্ঞানী নীরা ত্রাতিনার সঙ্গে দেখা করতে চাই না। আমি আসলে মানুষ নীরা ত্রাতিনার সঙ্গে দেখা করতে চাই। তার কারণ আমাকে এই মানুষটি থেকে ক্লোন করা হয়েছে। আমার ধারণা, আমি কী বলতে চাই সেটি তার থেকে ভালো করে কেউ বুঝবে না। কারণ আমি আর সে আসলে একই মানুষ।