উপস্থিত সবাই মাথা নাড়ল, না, চাই না।
তা হলে আমাকে সবাই সাহায্য কর। এস, সবাই মিলে একটা পরিকল্পনা করি।
নায়ীরাকে ঘিরে সবাই কাছাকাছি এগিয়ে এল।
৬. মানুষের জন্য মানুষের ভালবাসার
দীর্ঘ সময় কথা বলে তারা সবাই মিলে একটা পরিকল্পনা করল। পরিকল্পনা শেষে বিকনের সুইচটি অন করে নায়ীরা সেটি তিহানের হাতে দিয়ে বলল, এটা এখন তোমার কাছে রাখ।
তিহান সেটা হাতে নিয়ে বলল, ঠিক আছে।
বিজ্ঞান কেন্দ্রের মানুষগুলো এই বিকনের সিগন্যাল অনুসরণ করে আসবে। কাজেই তোমার ওপর এখন অনেক দায়িত্ব।
তিহান বলল, আমি আমার দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করব, তুমি নিশ্চিন্ত থাক।
নায়ীরা বলল, আমার হিসাবে দুই ঘণ্টার ভেতর উদ্ধারকারী দল চলে আসবে।
আমরা সবাই প্রস্তুত।
উদ্ধারকারী দল আশা করবে একটি মৃত্যু উপত্যকা। তারা ধরে নেবে তোমরা সবাই মারা গেছ।
তুমি চিন্তা করো না, নায়ীরা। তারা যা আশা করছে ঠিক সেটাই দেখতে পাবে। আমরা সব জায়গায় খবর পাঠিয়ে দিয়েছি। আজ কেউ ঘর থেকে বের হবে না। এখানে কোথাও কোনো প্রাণের চিহ্ন দেখতে পাবে না। যারা বের হবে তারা মৃত সেজে পথেঘাটে পড়ে থাকবে।
চমৎকার! যাদের মৃতের ভূমিকায় অভিনয় করার কথা তারা সবাই কি বের হয়েছে?
হ্যাঁ, বের হয়েছে। মাঠে-ঘাটে, ঘরে-বাইরে তারা আগামী কয়েক ঘণ্টা মৃত মানুষের মতো পড়ে থাকবে। হেলিকপ্টার থেকে দেখে পৃথিবীর মানুষেরা এতটুকু সন্দেহ করবে না।
চমৎকার! মনে থাকে যেন, এটা আমাদের শেষ সুযোগ।
আমরা এ সুযোগ নষ্ট করব না।
নায়ীরা একটা মাটির ঘরের ভেতর আশ্রয় নিয়েছে। হেলিকপ্টার দখল করার সময় একটা সংঘর্ষ হতে পারে, গোলাগুলি হতে পারে, সে তার মধ্যে থাকতে চায় না। কোনোভাবে তার শরীরের এতটুকু কেটে গেলে সর্বনাশ হয়ে যাবে। এখানে যত বড় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হোক না কেন, তার শরীর থেকে কোনো রক্ত বের হতে পারবে না। এক ফোঁটাও না।
নায়ীরা ছোট ঘরটির ভেতর অস্থির হয়ে অপেক্ষা করতে করতে যখন ধৈর্যের শেষ সীমায় পৌঁছে গেল, ঠিক তখন অনেক দূরে একটা হেলিকপ্টারের শব্দ শুনতে পেল। বিকনের সিগন্যাল অনুসরণ করে এটা এগিয়ে আসছে। নায়ীরা মাটির ঘরের ছোট জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে হেলিকপ্টারটা দেখতে পায়, খামের ওপর দুবার ঘুরে সেটা কাছাকাছি একটা মাঠে নেমে এল। ইঞ্জিনটা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর দরজা খুলে ডজনখানেক মানুষ নেমে আসে। মানুষগুলোর হাতে স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র। তারা হেলিকপ্টারটি ঘিরে দাঁড়িয়ে এদিক-সেদিক তাকায়। চারপাশে অসংখ্য মৃতদেহ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে, অবমানবের মৃতদেহ, ঠিক যেরকম হওয়ার কথা।
সশস্ত্র চার জন মানুষ তাদের যোগাযোগ মডিউল হাতে নিয়ে বিকনটির অবস্থান নির্দিষ্ট করে নেয়। দলপতি মাইক্রোফোনে কথা বলে সাবধানে অগ্রসর হতে থাকে। সশস্ত্র মানুষগুলো একটা বড় পাথরের আড়ালে হেঁটে যেতে থাকে। তারা তখনো জানে না যে সেখানে তাদের জন্য তিহান আট জন সুঠাম তরুণকে নিয়ে অপেক্ষা করছে। নায়ীরা নিঃশব্দে তাদের লক্ষ করে, এখনো সবকিছু তাদের পরিকল্পনামতো ঘটছে। আর কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই চূড়ান্ত আক্রমণটি ঘটে যাওয়ার কথা।
বড় একটা পাথরের আড়ালে ছোট একটা মাটির ঘরের সামনে গিয়ে সশস্ত্র মানুষগুলো থমকে দাঁড়াল, এই মাটির ঘরের ভেতর থেকে বিকনের সিগন্যাল আসছে। সশস্ত্র মানুষদের একজন হাতে অস্ত্র নিয়ে ডাকল, রিশি, তুমি বের হতে পার। তোমার কোনো ভয় নেই, আমরা তোমাকে উদ্ধার করতে এসেছি।
ঠিক সেই মুহূর্তে আট জন সুঠাম তরুণ সশস্ত্র মানুষগুলোর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। কী হচ্ছে বোঝার আগেই তারা নিচে পড়ে গেছে এবং বিদ্যুগ্মতিতে তাদের অস্ত্রগুলো কেড়ে নেওয়া হয়েছে।
একই সময় দ্বিতীয় দলটি হেলিকপ্টারের কাছাকাছি দাঁড়িয়ে থাকা অন্যদের আক্রমণ করেছে। কিছু বোঝার আগেই তারাও বন্দি হয়ে গেল। হেলিকপ্টারের ভেতরে যারা ছিল তারা গোলাগুলি করার চেষ্টা করল, কিন্তু কোনো লাভ হল না। এই গ্রামের কিছু তরুণ স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র হাতে গুলি করতে করতে হেলিকপ্টারটি দখল করে নিয়েছে। নায়ীরাকে সেই খবরটি দেওয়ার জন্য কিছুক্ষণের মাঝেই তিহান নিজে এসে উপস্থিত হল। নায়ীরা নিশ্বাস বন্ধ করে জিজ্ঞেস করল, হেলিকপ্টারটি দখল হয়েছে?
হ্যাঁ, নায়ীরা, দখল হয়েছে।
গোলাগুলির শব্দ শুনলাম, কারো গায়ে কি গুলি লেগেছে?
আমাদের কারো গায়ে গুলি লাগে নি। তাদের দুজন গুলি খেয়েছে।
তাদের কী অবস্থা?
অবস্থা খারাপ নয়। চামড়া স্পর্শ করে গেছে। একেবারেই গুরুতর কিছু নয়।
সবাইকে বেঁধেছ?
হ্যাঁ। সবাইকে বেঁধেছি।
চমৎকার! যারা হেলিকপ্টারে তাদের কী করেছ?
তাদেরকেও শক্ত করে বাঁধা হয়েছে। আমার ধারণা, তাদের মধ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ মানুষও আছে।
চমৎকার! হেলিকপ্টারে যত বেশি গুরুত্বপূর্ণ মানুষ থাকবে আমাদের জন্য তত ভালো।
তুমি এখন হেলিকপ্টারটিতে যেতে চাও?
হ্যাঁ, যেতে চাই। কিন্তু আমি খালি হাতে যেতে চাই না। আমাকে একটা ছোট অস্ত্র দাও। কেমন করে সেটা ব্যবহার করতে হয় সেটাও শিখিয়ে দিতে হবে।
তিহান একটু হাসল। বলল, অস্ত্র কেমন করে ব্যবহার করতে হয় আমরাও খুব ভালো জানতাম না। একটু আগে চেষ্টা চরিত্র করে শিখে নিয়েছি। এস তোমাকেও শিখিয়ে দেব।