বিজ্ঞান কেন্দ্রে আমরা লক্ষ করেছি তিন শ নয় নম্বর ক্লোনের জন্য তোমার খানিকটা মমতার জন্ম হয়েছিল। আমরা সেটাকে অস্বাভাবিক মনে করি না। বাড়ির পোষা কুকুরের জন্য যদি মমতা জন্ম নিতে পারে, তা হলে একটি ক্লোনের জন্য মমতার জন্ম হবে না কেন? তবে আমরা নিশ্চিত, তুমি আমাদের সকল মানুষের অস্তিত্বের প্রয়োজনে একটি ক্লোনকে ব্যবহার করার বিষয়টিকে নিশ্চয়ই খোলামন দিয়ে গ্রহণ করবে।
আমরা কিছুদিন আগে জানতে পেরেছি আমাদের ওপর ব্যবহার করার জন্য অবমানবরা একটি মানববিধ্বংসী অস্ত্র তৈরি করতে শুরু করেছে। তাদের যে কোনো মূল্যে নিবৃত্ত করতে হবে। সেজন্য তারা আঘাত করার আগেই আমরা তাদের আঘাত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমাদের ল্যাবরেটরিতে আমরা একটি ভাইরাস তৈরি করেছি, যেটি তাদের পুরোপুরি ধ্বংস করে দেবে। এই ভাইরাসটির বিশেষত্ব এই যে, সেটি আমাদের আক্রান্ত করতে পারবে না। এই ভাইরাস শুধু অবমানবদের আক্রান্ত করবে। এই ভাইরাসের সংক্রমণের পর অবমানবরা অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণে ব্যাকটেরিয়ার মতো অত্যন্ত দ্রুত মৃত্যুবরণ করবে। ভাইরাসটি দিয়ে সঠিকভাবে তাদের আক্রমণ করতে পারলে আগামী আটচল্লিশ ঘণ্টার ভেতরে অবমানব প্রজাতির পৃথিবী থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার কথা। আমরা অবমানবদের নিশ্চিহ্ন করে পৃথিবীকে একটি নিরাপদ বাসস্থান হিসেবে রেখে যেতে চাই।
পৃথিবীকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য নিরাপদ বাসস্থান হিসেবে রাখার জন্য আমরা ক্লোন তিন শ নয়কে ব্যবহার করছি। আমরা তার শরীরের ভেতরে ভাইরাস জন্মানোর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। তার শরীরটিকে ব্যবহার করে কোটি কোটি ভাইরাসের জন্ম দেওয়া হয়েছে। আজ দুপুরে শরীরের কোষ ভেঙে সেগুলো তার রক্তস্রোতে মিশে গেছে। সেই সময়টিতে খিচুনি দিয়ে তার সমস্ত শরীরে প্রচণ্ড তাপমাত্রার জন্ম হয়েছিল। ক্লোন তিন শ নয় সেই মুহূর্ত থেকে অবমানবদের জন্য একটি ভয়াবহ মারণাস্ত্র ছাড়া আর কিছু নয়।
কিছুক্ষণ আগে সৃষ্টিজগতের সবচেয়ে প্রলয়ঙ্করী মারণাস্ত্রটি অতিমানবদের ওপর নিক্ষেপ করা হয়েছে। পদ্ধতিটি খুব সহজ-গ্লাইডারের ককপিটে ধারালো অস্ত্র দিয়ে তার শরীরের গুরুত্বপূর্ণ ধমনিগুলো কেটে দেওয়া। তার শরীরের রক্ত গ্লাইডারের বিশেষ টিউব দিয়ে নিচের বায়ুমণ্ডলে মিশে গেছে। উষ্ণ বায়ুপ্রবাহে সেটি অবমানবদের এলাকায় পৌঁছে যাবে। আটচল্লিশ ঘণ্টার ভেতরে প্রকৃতির সবচেয়ে ভয়ংকর এবং বিপজ্জনক পরীক্ষা অবমানব প্রজন্ম নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।
রিশি, আমি নিশ্চিত তুমি বিষয়টির গুরুত্ব বুঝতে পেরেছ। তোমার প্রতি আমাদের জরুরি নির্দেশ, তুমি ক্লোন তিন শ নয়ের মৃতদেহ নিয়ে গ্লাইডারটিকে নির্দিষ্ট স্থানে অবতরণ করাও। গ্লাইডারে রাখা বিকনটি চালু করা হলে তোমাকে উদ্ধার করা হবে।
আমরা আশা করছি ক্লোন তিন শ নয়ের মৃত্যুর বিষয়টিকে তুমি সহজভাবে নেবে। ভাইরাসে ভরা তার রক্ত অবমানবদের এলাকায় ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য এ ছাড়া অন্য কোনো সহজ উপায় ছিল না। শুধু মানবদেহেই এই ভাইরাসটি সজীব থাকে এবং বংশবৃদ্ধি করে। তাকে এই প্রক্রিয়ায় হত্যা করা না হলেও আগামী দুই সপ্তাহে তার মৃত্যু ঘটত। এই ভাইরাস আমাদের আক্রান্ত করে না, কিন্তু ক্লোন তিন শ নয়ের দেহের প্রয়োজনীয় প্রত্যেকটি অঙ্গ ভাইরাসের জন্মের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে। যে তিন শ নয় নম্বর ক্লোনটি আগামী দু সপ্তাহের মধ্যে মৃত্যুবরণ করত, সেটি এখন মৃত্যুবরণ করেছে। এটাই পার্থক্য।
বিদায় রিশি। তোমাকে উদ্ধার করার জন্য আমরা তোমার সিগন্যালের জন্য অপেক্ষা করব।
খুট করে ভিডিও মনিটরটি বন্ধ হয়ে গেল। নায়ীরা তখনো নিস্পলক দৃষ্টিতে মনিটরটির দিকে তাকিয়ে থাকে। তাকে দেখে মনে হয়, তার আশপাশে কী ঘটছে সে কিছুই বুঝতে পারছে না।
খুব ধীরে ধীরে নায়ীরা পুরো ব্যাপারটি বুঝতে পারে। ভয়ংকর অবমানবদের ভাইরাস দিয়ে হত্যা করার জন্য তাকে পাঠানো হয়েছে, তার রক্তের মধ্যে রয়েছে সেই ভাইরাস। ঘটনাক্রমে সেই ভাইরাস এখনো মুক্ত হয় নি। রিশির প্রাণের বিনিময়ে অবমানবেরা বেঁচে গেছে, কিন্তু সেটি নিশ্চয়ই সাময়িক। বিজ্ঞান কেন্দ্র যখন জানতে পারবে তারা আবার চেষ্টা করবে, সফল না হলে আবার। আজ হোক কাল হোক পৃথিবী থেকে অবমানবদের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে। পৃথিবী হবে একটি নিরাপদ স্থান।
সেটি এখনো নিরাপদ হয় নি, তা হলে কি তার নিজের প্রাণ দিয়ে পৃথিবীকে নিরাপদ করা উচিত? ধারালো একটা চাকু দিয়ে তার হাতের ধমনি কেটে দেওয়া উচিত, যেন তার শরীরের ভেতরে বাস করা কোটি কোটি ভাইরাস কিলবিল করে চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে? নায়ীরা তার হাতের দিকে তাকাল, না, সে নিজের হাতের ধমনি কাটতে পারবে না। দু সপ্তাহ পর সে এমনিতেই মারা যাবে জেনেও সে এখন নিজেকে হত্যা করতে পারবে না। যত ভয়ংকরই হোক, মানবপ্রজাতির একটি অপভ্রংশকে সে এভাবে নিঃশেষ করতে পারবে না। সে খুব সাধারণ একটি মেয়ে। একটি প্রজাতিকে পৃথিবী থেকে পুরোপুরি অপসারণ করার মতো এত বড় একটি সিদ্ধান্ত সে নিতে পারবে না। কিছুতেই সে এই সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না।
নায়ীরা একটা নিশ্বাস ফেলে ঠিক করল, সে বেঁচে থাকবে। মৃত্যুর আগের মুহূর্তে রিশি তাকে বলেছে, তাকে বেঁচে থাকতে হবে। তার জ্যাকেটের পকেটে কিছু একটা আছে, সেটা তাকে দেখতে হবে। সেটা না দেখে সে মারা যাবে না। কিছুতেই মারা যাবে না।