আমার হঠাৎ ত্রিশার কথা মনে পড়ল। আমি লাল কার্ডের অধিকারী হব জানলে ত্রিশা কি আমাকে ছেড়ে চলে যেত? আমার ঠিক ইচ্ছে ছিল না কিন্তু হঠাৎ আমার বুক থেকে একটা। দীর্ঘশ্বাস বের হয়ে এল।
সবাই ঘুরে আমার দিকে তাকাল কিন্তু কেউ কোনো কথা বলল না।
আমি দীর্ঘশ্বাসটি কেন ফেলেছি তারা নিশ্চয়ই বুঝে ফেলেছে কিন্তু কেউ সেটা প্রকাশ করল না। য়োমি লাল কার্ডটির দিকে তাকিয়ে বলল, সবার আগে আমাদের তথ্য সগ্রহ করতে হবে। যতটুকু সম্ভব। শ্যালক্স গ্রুন সম্পর্কে আমাদের সবকিছু জানতে হবে।
হিশান ভুরু কুঁচকে বলল, কিন্তু সেটা কি সম্ভব? একজন মানুষ সম্পর্কে কি কখনো সবকিছু জানা যায়?
নূবা মাথা নেড়ে বলল, তা যায় না, কিন্তু চেষ্টা করতে তো ক্ষতি নেই। মানুষটাকে খানিকটা বুঝতে হবে। কী ধরনের মানুষ, বুদ্ধিমত্তা কতটুকু, কী রকম চরিত্র, দুর্বলতাটুকু কোথায়–
ইগা মাথা নেড়ে বলল, উহু, মানুষকে কখনো বোঝা যায় না। যারা আমাকে চেনে তাদের সবার ধারণা আমি অত্যন্ত সৎ নীতিবান মানুষ। কিন্তু আমি মোটেই সৎ এবং নীতিবান নই। তোমরা তো নিজেরাই শুনলে আমার মাদকদ্রব্যের গোপন কারখানা আছে।
য়োমি সরু চোখে বলল, কিন্তু সেটা তো গোপন নেই। মহামান্য রিসি নিজে বলেছেন সেটা অনেকেই জানে।
তা ঠিক, ইগা মাথা নেড়ে বলল, কিন্তু আমার চরিত্রে আরো অনেক কিছু আছে যেটা কেউ জানে না। যেটা আমি চাই না কেউ জানুক।
হিশান মাথাটা একটু এগিয়ে এনে বলল, কিন্তু আমাদের তো কোনো একটা জায়গা থেকে শুরু করতে হবে। শ্যালক্স গ্রুন সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে আমরা কাজ শুরু করতে পারি। আমার মনে হয় আমরা অন্য যেকোনো মানুষ থেকে তথ্যগুলো ভালোভাবে বিশ্লেষণ করতে পারব।
য়োমি কোনো কথা না বলে সম্মতির ভঙ্গিতে মাথা নাড়ল। নুবা বলল, তথ্য সংগ্রহ করা বিশ্লেষণ করায় তো কোনো ক্ষতি নেই।
ইগা ভুরু কুঁচকে বলল, ক্ষতি আছে।
কী ক্ষতি?
এক টুকরা ভুল তথ্য তোমাদের সবাইকে বিভ্রান্ত করে দিতে পারে। বিশেষ করে শ্যালক্স গ্রুনের মতো ধূর্ত মানুষ–
য়োমি সরু চোখে বলল, তাহলে তুমি আমাদের কী করতে বল?
ইগা কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলল, আমি জানি না।
নুবা হেসে বলল, জানি না বললে তো হবে না। কিছু একটা বলতে হবে।
ইগা আমার দিকে ইঙ্গিত করে বলল, শুধু আমাকে বলছ কেন? রিকি এখন পর্যন্ত একটা কথাও বলে নি—
সবাই তখন আমার দিকে তাকাল। নুবা মাথা নেড়ে বলল, হ্যাঁ, সত্যিই তুমি কিছু বল নি। কিছু একটা বল।
আমি একটু অপ্রস্তুত হয়ে বললাম, আসলে এ ধরনের ব্যাপারে আমি কখনো কোনোভাবে অংশ নিই নি। কীভাবে শুরু করতে হয় আমার কোনো ধারণা নেই। আমি মোটামুটি ঘরে বসে বসে দিন কাটিয়েছি।
আমার কথা শুনে হঠাৎ সবাই তীক্ষ্ণ চোখে আমার দিকে তাকাল। নুবার চোখ হঠাৎ জ্বলজ্বল করে ওঠে। আমার দিকে মাথা ঝুঁকিয়ে বলল, সত্যি তুমি কখনো কোনো প্রজেক্টে অংশ নাও নি?
না।
নুবা ঘুরে অন্যদের দিকে তাকায় এবং হঠাৎ করে সবাই কমবেশি উত্তেজিত হয়ে ওঠে। ইগা টেবিলে একটা থাবা দিয়ে বলল, চমৎকার!
আমি বললাম, কী চমৎকার?
তোমার কোন পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই সেটা।
ইগা কী বলতে চাইছে আমি সেটা হঠাৎ আঁচ করতে পারি। ইয়োরন রিসি আমাকে যে এই দলটিতে এনেছেন সেটাই কি তার কারণ?
হিশান তার বাড়ির মাঝে আঙুল ঢুকিয়ে বলল, হ্যাঁ, তাহলে তোমার মুখেই শুনি। তোমার যেহেতু কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই তুমি এই সমস্যাটিকে একেবারে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে দেখবে। তুমি বল আমরা কীভাবে শুরু করব।
আমি?
হ্যাঁ, তুমি।
আমার মনে হয় আমাদের শ্যালক্স গ্রুনের সাথে দেখা করা উচিত।
হঠাৎ করে সবাই স্থির হয়ে গেল, মনে হল ঘরে যদি একটা সুচও পড়ে সেটা শোনা যাবে। আমি সবার দিকে একবার তাকিয়ে বললাম, আমাকে যদি সত্যি জিজ্ঞেস কর তাহলে আমি সেটাই বলব। তার সম্পর্কে কোনোরকম খোঁজখবর না নিয়ে, কোনোরকম তথ্য বিশ্লেষণ না করে তার সাথে দেখা করা। সম্পূর্ণ একজন অপরিচিত মানুষের সাথে যেভাবে দেখা করা হয়–সেভাবে।
ইগা খুব ধীরে ধীরে সম্মতিসূচকভাবে মাথা নাড়তে থাকে, অন্য কেউ কোনো কথা বলে। য়োমি হঠাৎ টেবিলে হাত রেখে বলল, কেন?
তার সম্পর্কে জানার জন্যে।
তুমি কেন মনে কর তার সাথে দেখা করলে তুমি তার সম্পর্কে জানতে পারবে?
কারণ সে একজন মানুষ। অসম্ভব ধূর্ত মানুষ। ডাটাবেসে তার সম্পর্কে যেসব তথ্য থাকবে সেটা কখনোই সম্পূর্ণ তথ্য হবে না। একজন মানুষ অত্যন্ত জটিল ব্যাপার, কখনো তথ্য দিয়ে তাকে বোঝানো যায় না। তাকে বুঝতে হলে সম্ভবত অন্য আরেকজন মানুষ দরকার।
নুবা স্থির দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়েছিল, আমি কথা শেষ করতেই বলল, আমার মনে হয় রিকি ঠিকই বলেছে।
ইগাও মাথা নাড়ল, যা আমাদের একজন যদি তার সাথে দেখা করে কথা বলে ফিরে আসতে পারি, সম্ভবত মানুষটা সম্পর্কে খুব ভালো একটা ধারণা হবে। রিকি ঠিকই বলেছে। য়োমি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে ইগার দিকে তাকিয়ে বলল, তুমি নিশ্চিত?
ইগা কিছু বলার আগেই আমি বললাম, আমি নিশ্চিত।
য়োমি মাথা নেড়ে বলল, আমি বিশ্বাস করি না।
কী বিশ্বাস কর না?
যে একজন মানুষের সাথে কথা বলে তার সম্পর্কে কিছু জানা যায়।
একজন সাধারণ মানুষ যদি কথা বলে সে হয়তো কিছু জানবে না। কিন্তু ব্যাপারটা অস্বীকার করে তো লাভ নেই–আমরা কেউই সাধারণ মানুষ নই।