ত্রিশা চমকে ঘুরে তাকাল, আমাকে দেখে এক মুহূর্ত দ্বিধা করে সে হঠাৎ আমার দিকে এগিয়ে আসে। আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে থেকে বলল, রিকি। তুমি?
হ্যাঁ, ত্রিশা আমি। তুমি ভালো আছ?
ত্রিশা মাথা নাড়ল, ভালো। খানিকক্ষণ চুপ করে থেকে হঠাৎ করে বলল, আমি কয়দিন থেকে তোমার কথা ভাবছিলাম।
সত্যি?
হ্যাঁ। খুব একটা অবাক ব্যাপার হয়েছিল দুদিন আগে।
কী অবাক ব্যাপার?
চার জন মানুষ এসেছিল আমার সাথে দেখা করতে। দুজন পুরুষ দুজন মহিলা। বয়স খুব বেশি নয়, সবাই প্রায় আমাদের বয়সী। কিন্তু তারা ছিল খুব গুরুত্বপূর্ণ মানুষ।
সত্যি?
হ্যাঁ। তুমি বিশ্বাস করবে না তাদের কী আশ্চর্য ক্ষমতা! যেটা করতে চায় সেটাই তারা করতে পারে। যেখানে ইচ্ছে যেতে পারে।
আমি আমার মুখে অবাক হবার একটা চিহ্ন ফোঁটাতে চেষ্টা করতে থাকি। ত্রিশা চোখ বড় বড় করে বলল, তারা আমাকে নিয়ে গিয়েছিল একটা রবোটের ফার্মে।
সত্যি?
হ্যাঁ। সারারাত কথা বলল আমার সাথে। তোমার কথা জিজ্ঞেস করল অনেকবার। যখন আমি চলে আসছিলাম তখন ফার্মের লোকজন এসে আমার অনেকগুলো ছবি তুলল, আমার শরীরের মাপ নিল। সবশেষে আমার মস্তিষ্ক স্ক্যান করল।
আমি আমার মুখে বিস্ময় ফোঁটানোর চেষ্টা করতে থাকি। ত্রিশা মাথা নেড়ে বলল, একটা ব্যাপার জান?
কী?
ওই চার জন মানুষের সাথে আর তোমার সাথে কী একটা মিল রয়েছে।
মিল?
হ্যাঁ, আমি ঠিক ধরতে পারছি না মিলটুকু কোথায় কিন্তু কিছু একটা মিল আছে। সেই থেকে আমার কেন জানি শুধু তোমার কথা মনে হচ্ছে!
ত্রিশা হঠাৎ ঘুরে আমার দিকে তাকাল, খানিকক্ষণ আমার চোখের দিকে তাকিয়ে থেকে বলল, তুমি ওই চার জন মানুষকে চেন রিকি?
আমি খানিকক্ষণ ত্রিশার চোখের দিকে তাকিয়ে থেকে বললাম, হ্যাঁ ত্রিশা। আমি তাদের চিনি।
তুমি–তুমি ঠিক ওদের মতো একজন?
হ্যাঁ ত্রিশা, আমি ঠিক তাদের মতো একজন।
ত্রিশা অনেকক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, তুমি আমাকে কখনো তোমার নিজের কথা বল নি, তাই না?
আমি বলি নি কারণ আমি জানতাম না ত্রিশা। আর জানলেও বিশ্বাস করতাম না।
ত্রিশা আমার হাত ধরে বলল, তুমি বলবে তোমার কথা?
তুমি শুনবে?
শুনব।
আমি ত্রিশাকে হাত দিয়ে আঁকড়ে ধরে বললাম, ঠিক আছে আমি বলব। তুমি বিশ্বাস করবে না তবু আমি বলব।
আমি সবসময় তোমার কথা বিশ্বাস করব রিকি।
ত্রিশা আমার দিকে তাকিয়ে খুব সাবধানে তার চোখের পানি মুছে নেয়।
.
দক্ষিণের পাহাড়ি অঞ্চলের একটি ছোট স্কুলে বাচ্চাদের পড়ানোর দায়িত্ব নিয়ে আমি আর ত্রিশা শহর ছেড়ে চলে এসেছি। ছোট কাঠের একটা বাসা আছে আমাদের। শীতের বিকেলে যখন তুষার পড়তে থাকে জানালার পাশে, আগুনের উষ্ণতায় বসে আমরা জানালার বাইরে তাকিয়ে থাকি। আমাদের ছোট ছেলেটি ঘরে হামাগুড়ি দিয়ে হাঁটতে থাকে– অসম্ভব দুরন্ত একটি শিশু হয়ে বড় হচ্ছে সে।
নুবা, য়োমি, ইগা আর হিশানের সাথে আমার ভালো যোগাযোগ নেই। শুধু বছরে একবার আমরা কোথাও এসে একত্র হই, নুবা তার ভালোমানুষ হাসিখুশি স্বামীটিকে নিয়ে আসে। হিশানের সাথে আসে তার কমবয়সী বান্ধবী। য়োমি এখনো একা, আমার কেন জানি মনে হয় সারাজীবন সে একাই থাকবে। ইগার সাথে একেকবারে একেকজন আসে, কমবয়সী অপূর্ব সুন্দরী কোনো মেয়ে! আমি ত্রিশাকে নিয়ে যাই।
ত্রিশাকে তারা সবাই খুব ভালো করে চেনে, মাঝে মাঝে মনে হয় বুঝি আমার থেকেও ভালো করে।