আমি মাথা নাড়লাম, হ্যাঁ। কিন্তু পরিশ্রমটির প্রয়োজন ছিল। ত্রিনিত্রি রাশিমালা কী এখন আমি জানি।
হ্যাঁ। কিন্তু তুমি যে রাশিমালাটি নিয়ে যাবে সেটি সত্যিকারের নয়। সেটি প্রায় তৈরি হয়ে গেছে, এই মুহূর্তে তোমাদের অন্য চার জন সেটি পরীক্ষা করে দেখছে।
কখন সেটি সম্পূর্ণ হবে?
আমার মনে হয় আর কিছুক্ষণের মাঝেই।
আমি কখন সেটি নিয়ে যাব?
তোমার যখন ইচ্ছা। আমার মনে হয় এখন তোমার খানিকক্ষণ বিশ্রাম নেয়া দরকার। তুমি কোথায় বিশ্রাম নিতে চাও?
আমি কি আমার নিজের বাসায় নিতে পারি?
ইয়োরন রিসি মৃদু হেসে বললেন, কিটির কাছে?
হ্যাঁ, মহামান্য ইয়োরন রিসি। আমার স্নায়ু খুব উত্তেজিত হয়ে আছে। কিটির সাথে কথা বললে আমার স্নায়ু সবসময়ই শীতল হয়ে আসে।
তুমি তাহলে যাও। যখন সময় হবে আমরা তোমাকে নিয়ে আসব।
আমি উঠে দাঁড়ালাম, ইয়োরন রিসি এগিয়ে এসে আমাকে গভীর ভালবাসায় আলিঙ্গন করলেন।
.
আমাকে দেখে কিটি কোনো ধরনের উত্তেজনা প্রকাশ করল না। কয়েকবার আমার চারপাশে ঘুরে বলল, তোমার কাপড় জামা পান্টানোর সময় হয়েছে। আমি কি নূতন কাপড় নিয়ে আসব?
তার কোনো প্রয়োজন নেই।
তোমার খাবার কি গরম করব?
আমি খেয়ে এসেছি কিটি।
তোমার টেলি জার্নাল চিঠিপত্র—
এখন দেখতে ইচ্ছে করছে না।
কিটি এক মুহূর্ত দ্বিধা করে বলল, তুমি কি মানসিক ভারসাম্যহীন?
আমি হেসে বললাম, বলতে পার আমি এখন এক ধরনের মানসিক ভারসাম্যহীন! আমার ওপর খুব বড় একটা দায়িত্ব দেয়া হয়েছে, সেই বড় দায়িত্বটি এত বড় যে তার তুলনায় অন্য সবকিছু এখন গুরুত্বহীন মনে হয়। সবকিছু হাস্যকর ছেলেমানুষি এবং অর্থহীন মনে হয়।
কিটি কী বুঝল আমি জানি না কিন্তু এক ধরনের গাম্ভীর্য নিয়ে মাথা ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে বলল, আমি তোমার জন্যে দুঃখিত রিকি। আমি কি কোনোভাবে তোমাকে সাহায্য করতে পারি?
তুমি কীভাবে আমাকে সাহায্য করতে চাও?
প্রয়োজন হলে আমি তোমার জন্যে সেই বড় দায়িত্বটি করতে পারি।
আমি হেসে ফেললাম, না, কিটি তুমি সেটা করতে পারবে না।
কেন নয়?
কারণ আমাকে একজন মানুষের সামনে একটি খুব বড় মিথ্যা কথা বলতে হবে। সে যদি বুঝতে পারে আমি মিথ্যা কথা বলছি তাহলে খুব ভয়ঙ্কর একটি ব্যাপার হবে।
মিথ্যা মানে কী?
আমি হেসে বললাম, তুমি সেটা জানতে চেয়ো না কিটি! আমি যদি বলি তবুও তুমি বুঝবে না। কোনো পশুপাখি মিথ্যাচার করে না, কোনো যন্ত্রও মিথ্যাচার করে না। মিথ্যাচার করে শুধু মানুষ–কখনো ইচ্ছে করে, আর কখনো করে যখন তার আর কোনো উপায় থাকে না। আমার আর কোনো উপায় নেই কিটি।
আমি তোমার জন্যে দুঃখিত রিকি। আমি স্পষ্ট অনুভব করছি আমার কপোট্রনের চতুর্থ অংশের তৃতীয় পিনটিতে ভোল্টেজের পরিবর্তন ঘটছে। এটি নিশ্চিত দুঃখের অনুভূতি।
আমি এক ধরনের স্নেহের চোখে এই পরিপূর্ণ নির্বোধ রবোটটির দিকে তাকিয়ে থাকি। আমি বুঝতে পারছি আমার স্নায়ু শীতল হয়ে আসছেকিছুক্ষণের মাঝেই আমি গভীর ঘুমে অচেতন হয়ে যেতে পারব।
০৯. শ্যালক্স গ্রুনের কদাকার সময়
আমরা পাঁচ জন শ্যালক্স গ্রুনের কদাকার সময়–পরিভ্রমণ যানটির সামনে দাঁড়িয়ে আছি। সন্ধ্যা নেমে এসেছে, এই পুরো এলাকাটিতে কৃত্রিম আলোর কোনো ব্যবস্থা নেই, আবছা অন্ধকারে সময়–পরিভ্রমণ যানটিকে দেখাচ্ছে একটা অশুভ প্রেতপুরীর মতো।
য়োমি নিচু গলায় বলল, কী বীভৎস একটা জিনিস। রিকি আমি চিন্তাও করতে পারি না তুমি কেমন করে এর ভিতরে যাবে।
আমি য়োমির দিকে তাকিয়ে বললাম, আমিও পারি না।
থাক, এখন সেসব কথা তুলে লাভ নেই। নুবা আমার দিকে ঘুরে তাকিয়ে বলল, তোমার কাছে ত্রিনিত্রি রাশিমালার ক্রিস্টাল ডিস্কটা আছে?
আমি পকেটে হাত দিয়ে বললাম, হ্যাঁ, আছে।
তাহলে তুমি যাও শ্যালক্স গ্রুনের কাছে।
আমি একটা নিশ্বাস ফেলে এগিয়ে যেতে গিয়ে থেমে গেলাম। ঘুরে তাকিয়ে বললাম, যদি আমাদের পরিকল্পনা কাজ না করে তাহলে কী হবে?
নুবা নিচু স্বরে বলল, এখন সেটা নিয়ে ভেবে লাভ নেই।
কিন্তু যদি কিছু একটা ভুল হয়ে যায়?
হিশান এগিয়ে এসে আমার কাধ স্পর্শ করে বলল, ওই যে উপরে তাকিয়ে দেখ।
আমি উপরে তাকালাম, আকাশে রুপালি একটা গোলক স্থির হয়ে আছে। আমি একটু অবাক হয়ে হিশানের দিকে তাকালাম, কী ওটা?
থার্মোনিউক্লিয়ার বোমা। যেটুকু আছে সেটা দিয়ে অর্ধেক পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবার কথা।
এটা কেন এখানে?
যে তাপমাত্রায় লিটুমিনা–৭২ ভাইরাসকে ধ্বংস করা যায় সেই তাপমাত্রা সৃষ্টি করার এটা হচ্ছে একমাত্র উপায়। ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আগে সেগুলোকে ধ্বংস করা যাবে কি না সেটা কেউ এখনো জানে না, কিন্তু চেষ্টা করে দেখা হবে।
যদি না যায়?
পৃথিবীর গোপন ভন্টে অসংখ্য শিশুকে শীতলঘরে রাখা আছে। মহাকাশে অসংখ্য মানুষকে, বিজ্ঞানীকে ইঞ্জিনিয়ার শিল্পী সাহিত্যিককে পাঠানো হয়েছে। যদি পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যায় তারা বেঁচে থাকবে। আবার নূতন করে সভ্যতার সৃষ্টি হবে।
আমি স্থির চোখে হিশানের দিকে তাকিয়ে বললাম, হিশান, সত্যি কি আবার নূতন করে সভ্যতার সৃষ্টি করতে হবে?
না রিকি। নিজের ওপর বিশ্বাস রেখো। তুমি যাও।
ইগা ফিসফিস করে বলল, তোমার যাত্রা শুভ হোক রিকি।
আমি পায়ে পায়ে কদাকার যানটির দিকে এগিয়ে যেতে থাকি। কাছাকাছি আসতেই একটি গোল দরজা খুলে গেল, শ্যালক্স গ্রুন আমার জন্যে অপেক্ষা করে আছে।