তুমি কি তার সাথে দেখা করতে চাও?
আমি সবসময় তার সাথে দেখা করতে চাই।
তাহলে দেখা করছ না কেন?
এখন তার ঠিক সময় নয়, য়োমি।
কেন এ কথা বলছ? আমাদের একটা দায়িত্ব দেয়া হয়েছে আমরা সেটা করছি। আমার মনে হয় এটা চমৎকার সময়। চল ত্রিশার সাথে দেখা করি।
আমি একটু অবাক হয়ে য়োমির দিকে তাকালাম, কী বলছ তুমি? তুমি ত্রিশার সাথে দেখা করবে?
য়োমি একটু হেসে বলল, হ্যাঁ, এক ধরনের কৌতূহল বলতে পার। চল যাই।
সত্যি সত্যি আমি আর য়োমি কিছুক্ষণের মাঝে শহরের একটা দরিদ্র এলাকায় মাটির নিচে গভীর সুড়ঙ্গের মাঝে একটি প্রোগ্রামিং ফার্মে এসে হাজির হলাম। এক সময় মানুষের ধারণা ছিল বিজ্ঞান আর প্রযুক্তির উন্নতি হবার পর মানুষ বুঝি অর্থহীন গাধা কাজ থেকে মুক্তি পাবে। সেই কাজ করা হবে যন্ত্র দিয়ে কিন্তু সেটি সত্যি বলে প্রমাণিত হয় নি। এখনো মানুষকে অর্থহীন কাজ করে যেতে হয়। কে জানে এখন যে কাজকে অর্থহীন কাজ বলে বিবেচনা করা হয় এক সময় হয়তো সেই কাজটিকেই খুব বুদ্ধিমত্তার কাজ বলে বিবেচনা করা হত।
আমি আর য়োমি যখন পৌঁছেছি তখন একটি দলের কাজ শেষ হয়েছে, তারা ক্লান্ত পায়ে ছোট ঘোট গেট দিয়ে বের হয়ে আসছে। য়োমি আমার পাশে দাঁড়িয়ে বলল, ত্রিশাকে কি দেখছ?
এখনো দেখি নি।
আমি আর য়োমি দাঁড়িয়ে থেকে যখন প্রায় হাল ছেড়ে দিচ্ছিলাম তখন ত্রিশা বের হয়ে এল। মাথায় একটা লাল স্কার্ফ শক্ত করে বেঁধে রেখেছে, শরীরের কাপড় ধুলায় ধূসর। চোখের কোনায় ক্লান্তি। হাতে একটি ছোট ব্যাগ নিয়ে সে ক্লান্ত পায়ে বের হয়ে এসে উপরের। দিকে তাকাল। আমি তার মুখের দিকে তাকালাম, মুখে কী গভীর বিষাদের ছাপ।
য়োমি আমার হাত স্পর্শ করে বলল, যাও রিকি। কথা বল।
না, আমি যেতে চাই না।
কেন নয়? যাও।
ঠিক তখন ত্রিশা ঘুরে আমার দিকে তাকাল এবং হঠাৎ করে তার মুখ রক্তশূন্য হয়ে যায়।
আমি ত্রিশার দিকে এগিয়ে গেলাম। ত্রিশা মাথার স্কার্ফটি খুলে সেটা দিয়ে মিছেই তার মুখের ধুলা ঝাড়ার চেষ্টা করতে করতে বলল, তুমি?
হ্যাঁ।
কেন এসেছ তুমি?
আমি জানি না ত্রিশা।
ত্রিশা কোনো কথা না বলে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে, আমিও দাঁড়িয়ে থাকি। এভাবে বেশ কিছুক্ষণ কেটে যায়, আমি কী বলব বুঝতে পারি না। ত্রিশা হঠাৎ মুখ তুলে বলল, তুমি আর এসো না।
ঠিক আছে। আর আসব না।
এখন যাও।
হ্যাঁ যাব। তুমি ভালো আছ ত্রিশা?
হ্যাঁ ভালো আছি
আমরা আরো খানিকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকি। ত্রিশা হাতের স্কার্ফটি তার ব্যাগের মাঝে ঢোকাতে ঢোকাতে বলল, কিটি ভালো আছে?
কিটি? যা নিশ্চয়ই ভালো আছে। তার সাথে আমার অনেকদিন দেখা হয় নি।
দেখা হয় নি কেন?
আমি–আমি–আমি আসলে কয়দিন বাসায় যাই নি।
ত্রিশা অবাক হয়ে আমার দিকে তাকাল কিন্তু কিছু বলল না। আমরা আবার খানিকক্ষণ
দাঁড়িয়ে রইলাম। ত্রিশা একটা নিশ্বাস ফেলে বলল, আমি এখন যাই। খাবারের দোকান বন্ধ হয়ে যাবে একটু পরে।
ত্রিশা–
কী?
আমি তোমার সাথে আসি?
ত্রিশা হঠাৎ ঘুরে আমার দিকে তাকাল তারপর মাথা নেড়ে বলল, না। প্লিজ না।
আমি একটা নিশ্বাস ফেলে বললাম, ঠিক আছে ত্রিশা।
.
আমি আর য়োমি কোনো কথা না বলে পাশাপাশি হেঁটে যেতে থাকি। য়োমির মুখ কেমন যেন বিষণ্ণ। কিছু একটা চিন্তা করছে খুব গভীরভাবে। আমি চেষ্টা করলে বুঝতে পারি মানুষ কী ভাবছে, কিন্তু এখন চেষ্টা করতে ইচ্ছে করছে না।
যে বাই ভার্বালটি করে আমরা এখানে এসেছি সেটা বড় রাস্তার কাছাকাছি দাঁড়িয়ে ছিল। আমাকে আর য়োমিকে ফিরে আসতে দেখে দুজন মানুষ দরজা খুলে দাঁড়িয়ে রইল।
আমি য়োমিকে বললাম, তুমি যাও। আমি খানিকক্ষণ একা হেঁটে আসি।
কোথায় যাবে?
আমার আগের বাসায়।
কেন?
আমার রবোটটির সাথে অনেকদিন দেখা হয় নি। একটু কথা বলে আসি।
.
কিটি আমাকে দেখে উল্লসিত বা বিস্মিত হল না–তার সে ক্ষমতাও নেই। ঘুরঘুর করে আমার চারপাশে ঘুরে বলল, তোমার চিঠিপত্র, টেলি জার্নাল নিয়ে আসব?
দরকার নেই কিটি।
তোমার খাবার কি গরম করব?
তারও কোনো প্রয়োজন নেই।
তোমার কাপড় জামা পরিষ্কার করে দেব?
কোনো প্রয়োজন নেই।
তুমি কি মানসিক ভারসাম্যহীন?
না, আমার মানসিক ভারসাম্যতা ঠিকই আছে। তুমি ব্যস্ত হয়ো না।
কিটি ঘুরঘুর করে পাশের ঘরে গিয়ে আবার ফিরে এসে বলল, তোমাকে কয়েকজন মানুষ খোঁজ করেছিল। আমি তাদেরকে বলেছি ইয়োরন রিসি তোমাকে কোনো সমস্যা সমাধান করতে ডেকে পাঠিয়েছেন।
তারা তোমার কথা বিশ্বাস করেছে?
নিশ্চয়ই বিশ্বাস করেছে। আমি কখনো ভুল তথ্য দিই না।
ও।
ইয়োরন রিসি তোমাকে কী সমস্যা সমাধান করতে দিয়েছেন?
খুব একটা জটিল সমস্যা। একজন অত্যন্ত খারাপ মানুষ
মানুষ কেমন করে খারাপ হয়?
আমি একটু থতমত খেয়ে থেমে গেলাম, প্রশ্নটির উত্তর আমার জানা নেই।
গভীর রাতে আমি আমাদের ছোট কাঠের বাসায় ফিরে এসে দেখি নুবা জানালায় চুপচাপ পা তুলে বসে আছে। আমাকে দেখে একটু হেসে বলল, তোমার রবোট কেমন আছে?
ভালো। য়োমি কি ফিরে এসেছে?
হ্যাঁ। নুবা জানালা দিয়ে বাইরে তাকাল, ফিরে এসেছে।
য়োমির ধারণা শ্যালক্স গ্রুন খুব একটা নিষ্ঠুর পরীক্ষা করবে–এখনো জানে না ঠিক কী হতে পারে
হ্যাঁ, আমাকে বলেছে।
আমি নুবার দিকে তাকালাম, সে আমার কাছে কিছু একটা গোপন করার চেষ্টা করছে। কী হতে পারে সেটা?