নুবা মাথা নেড়ে বলল, না আমি জানি না। কিন্তু আমার ভাবতে ভালো লাগে ঈশ্বর বলে একজন খুব ভালবাসা নিয়ে পৃথিবীর মানুষকে রক্ষা করে যাবেন।
ব্যাপারটি তোমার ঈশ্বরের জন্যে আরো সহজ হত যদি তিনি শ্যালক্স গ্রুনের জন্ম না দিতেন!
হিশান হঠাৎ হা হা করে উচ্চৈঃস্বরে হেসে ওঠে! মুবা এক ধরনের আহত দৃষ্টি নিয়ে ইগা এবং হিশানের দিকে তাকিয়ে থাকে। আমি বললাম, তোমরা এখন একজন আরেকজনের পিছনে লেগে সময় নষ্ট কোরো না। আমাদের অনেক কাজ বাকি
ইগা মাথা নাড়ল, আসলে কাজ খুব বেশি বাকি নেই। সবচেয়ে বড় কাজটি ছিল সিদ্ধান্তটি নেয়া, সেটি যখন নেয়া হয়ে গেছে অন্য কাজগুলো সহজ।
কিন্তু সিদ্ধান্তটি কি নেয়া হয়েছে?
সবাই নুবার দিকে ঘুরে তাকাল। নুবা একটু অবাক হয়ে বলল, সবাই আমার দিকে তাকাচ্ছ কেন?
ইগা বলল, দুটি কারণে। প্রথম কারণ, তোমার ভিতরে একটি সহজাত নেতৃত্বের ক্ষমতা রয়েছে, আমরা সবাই সেই নেতৃত্ব মেনে নিয়েছি। দ্বিতীয় কারণ, তুমি ঈশ্বরকে বিশ্বাস কর। এই ধরনের গুরুতর সিদ্ধান্ত নিতে হলে মনে হয় ঈশ্বরের বিশ্বাস করা খারাপ নয়। খানিকটা দায়–দায়িত্ব তাকে দেয়া যায়–
বাজে কথা বোলো না।
ইগা হেসে বলল, আমি কথাটি হালকাভাবে বলেছি, কিন্তু কথাটি সত্যি।
নুবা ঘুরে আমাদের দিকে তাকাল এবং আমরা সবাই মাথা নাড়লাম। ধীরে ধীরে নুবার মুখে এক ধরনের কাঠিন্য এসে যায়। সে দীর্ঘ সময় জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকে তারপর আমাদের দিকে তাকিয়ে বলল, ঠিক আছে আমরা সিদ্ধান্ত নিচ্ছি শ্যালক্স গ্রুনকে সত্যিকারের ত্রিনিত্রি রাশিমালা দেয়া হবে না।
চমৎকার। হিশান উঠে গিয়ে নুবার কাঁধ স্পর্শ করে বলল, এখন আমাদের দায়িত্ব ভাগ করে দাও।
বেশ। নুবা এক মুহূর্ত চুপ করে থেকে বলল, শ্যালক্স গ্রুন ত্রিনিত্রি রাশিমালা হাতে পাওয়ার পর সেটি সত্যি কি না পরীক্ষা করে দেখবে। সে কীভাবে সেটি পরীক্ষা করবে সেটা আমাদের আগে থেকে জানতে হবে। সেটা বের করার দায়িত্ব দিচ্ছি রিকি এবং য়োমিকে। তোমাদের আপত্তি আছে?
আমি এবং য়োমি একজন আরেকজনের দিকে তাকালাম তারপর মাথা নাড়লাম, না আপত্তি নেই।
চমৎকার। যেহেতু আমরা সত্যিকারের ত্রিনিত্রি রাশিমালা দেব না, এবং শ্যালক্স গ্রুন সেটা জানে না–আমরা তার যন্ত্রপাতির মাঝে তার কম্পিউটারের তথ্য ডাটাবেসের মাঝে বড় পরিবর্তন করে দিতে পারব। সেটি কীভাবে করা হবে তার একটা ধারণা করার দায়িত্ব দিচ্ছি ইগা এবং হিশানকে।
ইগা এবং হিশান খানিকক্ষণ চুপ করে রইল। হিশান মাথা চুলকে বলল, আমি আসলে বিজ্ঞান ভালো জানি না।
জানার প্রয়োজনও নেই। সে ব্যাপারে তোমাদের সাহায্য করবে পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানীরা।
বেশ। হিশান মাথা নেড়ে জিজ্ঞেস করল, তুমি কী করবে?
শ্যালক্স গ্রুন যখন ত্রিনিত্রি রাশিমালা পরীক্ষা করে দেখবে সারা পৃথিবীতে তখন একটা প্রলয় কাণ্ড ঘটবে। আমি চেষ্টা করব সেটি যেন সত্যিকারের প্রলয় কাণ্ড না হয়। সেটি যেন দেখায় প্রলয় কাণ্ডের মতো–কিন্তু আসলে যেন প্রলয় কাণ্ড না হয়। ব্যাপারটিতে আমার তোমাদের সাহায্যের দরকার হবে কিন্তু সেটি নিশ্চয়ই কোনো সমস্যা নয়।
আমরা মাথা নাড়লাম, না কোনো সমস্যা নয়। চমৎকার, এবার তাহলে জেনারেল ইকোয়াকে ডাকা যাক।
নুবা তার লাল কার্ডটি স্পর্শ করতে যাচ্ছিল ঠিক তখন য়োমি বলল, তোমরা সবাই নিশ্চয়ই জান জেনারেল ইকোয়া একজন রবোট?
আমরা মাথা নাড়লাম, জানি।
য়োমি হঠাৎ ঘুরে আমার দিকে তাকাল, রিকি তুমি ঠিক কখন সেটা বুঝতে পেরেছ?
প্রথমদিন যখন দেখা হল, আমাদের লাল কার্ড দেয়া হয়েছে শুনে যখন খুব অবাক হয়ে আমাদের দিকে তাকাল। তার চোখের দিকে তাকাতেই মনে হল কী যেন নেই
তুমি যদি চোখের দিকে না তাকাতে তাহলে কি বলতে পারতে?
না, মনে হয় না। আজকাল এত চমৎকার মানুষের মতো রবোট তৈরি করে যে সেটা বলা খুব কঠিন।
আমি হঠাৎ ঘুরে য়োমির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, তুমি কেন এটা আমাকে জিজ্ঞেস করলে?
য়োমি চোখ সরিয়ে নিয়ে বলল, না, এমনি জানতে চেয়েছি।
য়োমির গলার স্বরে কিছু একটা ছিল, আমি হঠাও বুঝতে পারলাম সে আমার কাছে থেকে কিছু একটা লুকানোর চেষ্টা করছে। কী হতে পারে সেটি? কেন সে আমাকে জানতে দিতে চায় না?
০৭. একটা ছোট ঘরে
একটা ছোট ঘরে আমি আর য়োমি মুখোমুখি বসে আছি। আমাদের সামনে একটা টেবিল, টেবিলে একটি ইলেকট্রনিক নোট প্যাড–সেটি এখনো পুরোপুরি ফাঁকা, তাতে কিছু লেখা হয় নি। য়োমি টেবিলে ঝুঁকে পড়ে আমার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল, রিকি, তুমি আবার গোড়া থেকে বল ঠিক কী হয়েছিল শ্যালক্স গ্রুনের সাথে।
য়োমি, আমি এই নিয়ে তিনবার বলেছি।
হা। কিন্তু প্রত্যেকবার একটু নূতন জিনিস বলেছ! আমার সবকিছু জানতে হবে। মানুষটা কীভাবে চিন্তা করে আমার বুঝতে হবে।
আমি তোমাকে বলেছি মানুষটি কীভাবে চিন্তা করে।
কিন্তু সেটা তোমার মতো করে বলেছ–সেটা যথেষ্ট নয়। মনে রেখো মানুষটা অসম্ভব প্রতিহিংসাপরায়ণ–তুমি সেটা জান না!
তুমি জান?
তোমার থেকে বেশি জানি। বল আবার।
আমি একটা নিশ্বাস ফেলে আবার বলতে শুরু করি, য়োমি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে, তাকে দেখে মনে হয় একটি হিংস্র শ্বাপদ, শিকারের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্যে সমস্ত স্নায়ু টান টান করে দাঁড়িয়ে আছে।