ইগা মাথা নেড়ে বলল, বেচারাদের কোনো উপায় নেই। সংবিধানে লেখা আছে যার কাছে লাল কার্ড রয়েছে তাকে যে–কোনো মূল্যে রক্ষা করতে হবে।
নুবা তার পকেট থেকে লাল কার্ডটি বের করে সেটাকে এক নজর দেখে বলল, এটা নিয়ে তো দেখি মহা যন্ত্রণা হল।
তা বলতে পার। আমি হেসে বললাম, কাল তোমরা যখন আমাকে ছুটি দিলে আমি হাঁটতে বের হয়েছিলাম, সাথে সাথে একটা বিশাল বাই ভার্বাল হাজির! যার বাসায় গিয়েছি চোখের পলকে তার বাসার সব সমস্যার সমাধান হয়ে গেল! সেই বাসার মানুষটি বিয়ে করবে সে জন্যে উপহার
সত্যি?
হ্যাঁ সত্যি।
কীভাবে হয়েছে শুনি?
আমি খুলে বলতে গিয়ে থেমে গেলাম। বললাম, একটা জিনিস লক্ষ করছ? আমরা ইচ্ছে করে অপ্রয়োজনীয় বিষয় নিয়ে কথা বছি আমাদের যে ব্যাপারটা নিয়ে কথা বলা দরকার সেটা এড়িয়ে যাচ্ছি?
নুবা একটা নিশ্বাস ফেলে বলল, সত্যি। তুমি ঠিকই বলেছ রিকি। ব্যাপারটা এমন মন খারাপ করা যে সেটা নিয়ে কথা বলতে ইচ্ছে হয় না।
কিন্তু বলতে হবে।
হ্যাঁ। বলতে হবে।
ইগা য়োমির দিকে তাকিয়ে বলল, য়োমি তুমি আমাদের সবাইকে পুরো ব্যাপারটার একটা সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দাও।
আমি? য়োমি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে ইগার দিকে তাকিয়ে বলল, আমি কেন?
দুটি কারণে। প্রথমত, আমি দেখেছি একটি মেয়ে সাধারণত খুব গুছিয়ে কথা বলতে পারে। দ্বিতীয়ত, তুমি শ্যালক্স গ্রুনকে ভালোভাবে বিশ্লেষণ করতে পারবে।
য়োমি তীব্র স্বরে কী একটা বলতে যাচ্ছিল, নুবা তাকে থামিয়ে দিয়ে বলল, ঠিক আছে আমি বলছি। যদি কিছু ভুল বলি তোমরা শুধরে দিও।
আমি নুবার দিকে খানিকটা হিংসার দৃষ্টিতে তাকালাম। কী সাদাসিধে দেখতে অথচ কী চমৎকার সহজ একটা নেতৃত্ব দেবার ক্ষমতা! ইয়েরিন রিসি নিশ্চয়ই অনেক ভেবেচিন্তে এই দলটিকে দাঁড় করিয়েছেন।
নুবা জানালা থেকে নেমে এসে একটা দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়াল। কয়েক মুহূর্ত নিচের দিকে তাকিয়ে থেকে মাথা তুলে বলল, প্রথমে সবার পক্ষ থেকে রিকিকে ধন্যবাদ নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শ্যালক্স গ্রুনের সাথে দেখা করার জন্যে। রিকি আমাদের খুব মূল্যবান দুটি তথ্য এনে দিয়েছে। দুটি তথ্যই খুব মন খারাপ করা তথ্য, কিন্তু মূল্যবান তাতে সন্দেহ নেই। সত্যি কথা বলতে কী, এই দুটি তথ্য জানার পর আমাদের আর খুঁটিনাটি কিছু জানার নেই।
প্রথম তথ্যটি হচ্ছে শ্যালক্স গ্রুন ধোঁকা দেয়ার চেষ্টা করছে না। সে সত্যিই পুরো পৃথিবী ধ্বংস করতে চায়। কখন করবে সেই সময়টি সে এখনো ঠিক করে নি, কিন্তু সে তার চেষ্টা করবে। রিকির ধারণা ভয়ঙ্কর ভাইরাসের এম্পূলটি সে তার নিজের শরীরের ভিতরে রেখেছে। যতক্ষণ সে বেঁচে থাকবে এম্পূলটি অক্ষত থাকবে। কোনোভাবে তার মৃত্যু হলে সাথে সাথে এম্পুলটি ফেটে লিটুমিনা–৭২ ভাইরাস বের হয়ে পুরো পৃথিবী ধ্বংস করে দেবে।
রিকির ধারণা সত্যি। শ্যালক্স গ্রুনকে স্পর্শ করে তার ত্বকের যে নমুনা সে নিয়ে এসেছে সেটি পরীক্ষা করে বায়োবিজ্ঞানীরা একমত হয়েছেন। সত্যিই তার শরীরে একটি সিলাকিত কার্বনের এম্পুল রয়েছে। রিপোর্টটি ঘরে কোথাও আছে কৌতূহল হলে দেখতে পার।
হিশান আমার দিকে তাকিয়ে বলল, এটি একটি অসম্ভব দুঃসাহসিক কাজ করেছ।
ইগা মাথা নেড়ে বলল, হ্যাঁ। আমাদের প্রযুক্তি খুব উন্নত নয়। যদি আরো কয়েক শ বছর পরে হত, শ্যালক্স গ্রুনের ত্বকের কোষ ব্যবহার করে আরেকটি শ্যালক্স গ্রুন তৈরি করে তাকে ব্যবহার করা যেত–
নুবা হেসে ফেলে বলল, রক্ষা কর! একটি শ্যালক্স গ্রুন নিয়েই আমরা হিমশিম খেয়ে যাচ্ছি, দুটি হলে কী হবে চিন্তা করতে পার?
তা ঠিক।
যাই হোক, যা বলছিলাম, রিকির নিয়ে আসা দ্বিতীয় তথ্যটি বলা যেতে পারে খানিকটা আশাপ্রদ। শ্যালক্স গ্রুন পৃথিবীর কাছে ত্রিনিত্রি রাশিমালা দাবি করেছে। যার অর্থ সে এই মুহূর্তে পৃথিবীকে ধ্বংস করবে না। ত্রিনিত্রি রাশিমালা ব্যবহার করে সে আরো এক শ বছর ভবিষ্যতে পাড়ি দেবে। আমরা যদি তাকে ত্রিনিত্রি রাশিমালা দিই পৃথিবী আরো এক শ বছর সময় পাবে।
হিশান একটা নিশ্বাস ফেলে বলল, কিন্তু সেই এক শ বছর হবে অর্থহীন। শ্যালক্স গ্রুনের কাছে যদি ত্রিনিত্রি রাশিমালা থাকে সে আজ থেকে এক শ বছর পরে এসে পৃথিবীর পুরো প্রযুক্তি নিজের হাতে নিয়ে নেবে। পুরোটা ব্যবহার করবে নিজের স্বার্থে।
হ্যাঁ। নুবা একটা নিশ্বাস ফেলে চুপ করে যায়।
আমরাও চুপ করে বসে রইলাম। আমি জানি আমরা সবাই একটি কথা ভাবছি কিন্তু কেউই মুখ ফুটে কথাটি বলতে পারছি না। য়োমি শেষ পর্যন্ত আর চুপ করে থাকতে পারল না, অধৈর্য হয়ে বলে ফেলল, সবাই চুপ করে আছ কেন? বলে ফেল কেউ একজন।
ঠিক আছে আমি বলছি। আমি উঠে দাঁড়িয়ে জানালা দিয়ে বাইরে তাকালাম, বাতাসের বেগ মনে হয় আরো একটু বেড়েছে। বাইরে গাছের ডালগুলো এখন দাপাদাপি করছে।
ঘরের ভিতরে দৃষ্টি ফিরিয়ে এনে আমি সবার মুখের দিকে তাকিয়ে বললাম, আমরা। শ্যালক্স গ্রুনকে ত্রিনিত্রি রাশিমালা দেব। সেটি হবে আসলটির কাছাকাছি কিন্তু আসলটি নয়।
আমি দেখলাম সবাই কেমন যেন শিউরে উঠল। নুবা চাপা গলায় বলল, হায় ঈশ্বর! তুমি পৃথিবীর মানুষকে রক্ষা কর।
ইগা মাথা ঘুরিয়ে নুবার দিকে তাকিয়ে বলল, তুমি নিশ্চয়ই জান ঈশ্বর বলে কিছু নেই।