কিন্তু সেটি পৃথিবীকে রক্ষা করা হল না। মাত্র এক শ বছর সময় নেয়া হল।
হ্যাঁ। কিন্তু তুমি যখন পৃথিবীতে নেমে আসবে পৃথিবীর বিজ্ঞান তখন আরো এক শ বছর এগিয়ে যাবে। আমরা তাদের অমূল্য কিছু তথ্য দেব যেটা ব্যবহার করে তোমাকে ধ্বংস করা হবে।
সেই অমূল্য তথ্য তুমি পেয়ে গেছ?
এখনো পাই নি। কিন্তু আমি জানি সেই তথ্য আছে।
কেমন করে জান?
কারণ তুমি এই ঘর ঘুটঘুটে অন্ধকার করে রেখেছ। আমি তোমাকে দেখতে পাচ্ছি না। তুমি কিন্তু আমাকে স্পষ্ট দেখছ। এটা এক ধরনের সতর্কতা। এই সতর্কতার প্রয়োজন হয় যখন কোনো দুর্বলতা থাকে। তোমার কোনো একটা দুর্বলতা আছে। সেটি কী আমি জানি না।
শ্যালক্স গ্রুন কোনো কথা না বলে চুপ করে রইল। আমি বললাম, দ্বিতীয় আরেকটি ব্যাপার হতে পারে।
কী?
তোমার কোনো ধরনের শারীরিক বিকৃতি রয়েছে। লিটুমিনা–৭২ এর ছোট এম্পুলটি কোনোভাবে তোমার শরীরে বসানো আছে। তোমার রক্ত খেয়ে সেই ভাইরাস বেঁচে আছে। সেটা তোমার শরীরে বসাতে গিয়ে তোমার ভয়াবহ শারীরিক বিকৃতি হয়েছে। তুমি কুদর্শন এবং বিসদৃশ। তাই তুমি কাউকে তোমার চেহারা দেখাতে চাও না।
আর কিছু বলবে?
হ্যাঁ। তৃতীয় আরেকটি সম্ভাবনা আছে। খুব ক্ষুদ্র সম্ভাবনা। মানুষের ওপর তুমি পুরোপুরি বিশ্বাস হারিয়েছ। অন্য আরেকজন মানুষ তোমার কাছে একটি জঞ্জালের মতো। তাকে তুমি মানুষের সম্মান দিতে রাজি নও। তাকে তুমি দীর্ঘ সময় অন্ধকারে অসহায়ভাবে দাঁড় করিয়ে রাখ। সম্পূর্ণ অকারণে। তুমি হয়তো লক্ষও কর নি যে আমি একজন মানুষ সম্পূর্ণ অন্ধকারে একটা দেয়াল ধরে কোনোভাবে দাঁড়িয়ে আছি।
এই তিনটি সম্ভাবনার মাঝে কোনটি সত্যি?
আমি এখনো জানি না।
টুক করে একটা শব্দ হল এবং হঠাৎ করে খুব ঋরে ধীরে ঘরে একটা আলো জ্বলে উঠতে শুরু করে। ছোট একটা ঘর, দেয়ালে প্রাচীন যন্ত্রপাতি, কুদর্শন ডায়াল। ছাদ থেকে বিচিত্র কিছু টিউব ঝুলে আছে। সামনে একটা চেয়ার, সেই চেয়ারে গা ডুবিয়ে বসে আছে একটি মানুষ। অত্যন্ত সুদর্শন একজন মানুষ। মাথা ভরা এলোমেলো চুল, মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি। মানুষটির চোখ দুটি আশ্চর্য নীলসেই নীল চোখে সে স্থির দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। দৃষ্টিতে এক ধরনের শীতলতা যেটি আমি আগে কখনো কোনো মানুষের চোখে দেখি নি। আমার সমস্ত শরীর কেমন যেন কাঁটা দিয়ে ওঠে। প্রাচীন লোকগাথায় যেসব ভয়াবহ প্রেত অশরীরী দানবের কথা বলা হয়েছে সেগুলো হয়তো কাল্পনিক নয়, সেগুলো হয়তো এই রকম মানুষের কথা।
আমি জিভ দিয়ে শুকনো ঠোঁট দুটি ভিজিয়ে বললাম, তুমি কুদর্শন নও। তুমি অসম্ভব রূপবান।
শ্যালক্স গ্রুন কোনো কথা না বলে আমার দিকে তাকিয়ে রইল, আমি কেন জানি সেই চোখের দিকে তাকিয়ে থাকতে পারলাম না, আমাকে চোখ সরিয়ে নিতে হল। আমি আবার ঘরটির দিকে তাকালাম, এই প্রাচীন যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে মানুষটি ভবিষ্যতে চলে এসেছে? এই মানুষটি লিটুমিনা–৭২ ভাইরাস তৈরি করেছে–পৃথিবীর সব বিজ্ঞানী এক শ বছর চেষ্টা করেও যার বিরুদ্ধে কোনো প্রতিষেধক বের করতে পারে নি? এই সেই মানুষ যার ভিতরে এতটুকু মমতা নেই? ভালবাসা নেই? আমি আবার শ্যালক্স গ্রুনের দিকে তাকালাম, কী ভয়ঙ্কর তার চোখের দৃষ্টি। সমস্ত শক্তি সঞ্চয় করে আমি তার চোখের দিকে তাকিয়ে থেকে জিজ্ঞেস করলাম, তুমি কি এখন আমাকে মেরে ফেলবে?
শ্যালক্স গ্রুন আমার দিকে বিচিত্র দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে, খুব ধীরে ধীরে তার মুখে এক ধরনের হাসি ফুটে ওঠে।
আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম, আমাকে কি মেরে ফেলবে?
তোমার কী মনে হয়?
আমি ঠিক জানি না।
সত্যি জান না?
আমি একটা নিশ্বাস ফেলে বললাম, জানি। এটা একটা খেলা। যে–কোনো খেলাতে একটা প্রতিদ্বন্দ্বী থাকতে হয়। তা না হলে সেই খেলায় কোনো আনন্দ নেই।
খেলায় ঘুঁটিও থাকতে হয়। অর্থহীন প্রয়োজনহীন ঘুঁটি–
না। আমি মাথা নেড়ে বললাম, আমি খেলার ঘুঁটি না। আমি যদি অর্থহীন প্রয়োজনহীন ঘুঁটি হতাম মহামান্য ইয়োরন রিসি সারা পৃথিবী খুঁজে তোমার মুখোমুখি হবার জন্যে আমাকে বেছে নিতেন না!
তাহলে ঘুঁটি কে?
পৃথিবীর পাঁচ বিলিয়ন মানুষ।
শ্যালক্স গ্রুন কোনো কথা বলল না, তার মুখে বিদ্রুপের খুব সূক্ষ্ম একটা হাসি ফুটে ওঠে। আমি তার চোখ থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নিয়ে বললাম, আমি কি যেতে পারি?
যাও।
আমি ভেবেছিলাম তুমি কিছু একটা দাবি করবে।
তুমি ঠিকই ভেবেছ। আমি একটা জিনিস চাই।
আমি ঘুরে তাকালাম, কী?
দেখি তুমি বলতে পার কি না।
আমি একটা নিশ্বাস ফেলে বললাম, ত্রিনিত্রি রাশিমালা?
হ্যাঁ। এক সপ্তাহের মাঝে আমি ত্রিনিত্রি রাশিমালা চাই। তুমি এখন যাও।
যাবার আগে আমি একটা কথা বলতে পারি?
কী কথা?
তুমি এক শ বছর আগের টেকনোলজি ব্যবহার করে একটা অসাধ্য সাধন করেছ। কেমন করে করেছ আমি জানি না, আমি বিজ্ঞান ভালো বুঝি না। কিন্তু আমি জানি ব্যাপারটা কঠিন, ভবিষ্যতে চলে আসতে প্রচণ্ড শক্তি ক্ষয় হয়–এমন কি হতে পারে না যে সেই ভয়ঙ্কর অভিযানে প্রকৃত শ্যালক্স গ্রুন মারা গেছে। তুমি সত্যি নও, তুমি আসলে তোমার ওমেগা কম্পিউটারের তৈরী একটি ত্রিমাত্রিক হলোগ্রাফিক ছবি।
হতে পারে।
আমি কি তোমাকে স্পর্শ করে দেখতে পারি তুমি সত্যি কি না?