য়োমির চোখ দুটি হঠাৎ কেমন জানি জ্বলজ্বল করে ওঠে, খানিকক্ষণ আমার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বলল, তুমি আমাকে আগে কখনো দেখ নি কাজেই আমার সম্পর্কে কিছু জান না। এখন কিছুক্ষণ হল তুমি আমার সাথে কথা বলেছ–তোমার কথা যদি সত্যি হয় তাহলে তুমি আমার সম্পর্কে অনেক কিছু জেনে গেছ? তুমি সেটা বল, দেখি সত্যি বলতে পার কি না।
নুবা, ইগা এবং হিশান একটু অবাক হয়ে এবং বেশ খানিকটা কৌতূহল নিয়ে আমার দিকে তাকাল। আমি হঠাৎ বিব্রত অনুভব করতে থাকি, কোনোভাবে নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম, আমার মনে হয় না সেটা ঠিক হবে য়োমি।
কেন?
কারণ তুমি হয়তো পছন্দ করবে না।
কেন পছন্দ করব না?
একজন মানুষের চরিত্রের অনেক দিক থাকে। যেটা সহজেই প্রকাশ হয়ে যায় সেটা প্রায় সময়েই হয় দুর্বল দিক। সেটা তার মূল চরিত্র নাও হতে পারে।
তবু তুমি বল, আমি জানতে চাই। আমরা একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ প্রজেক্ট হাতে নিয়েছি, এখানে ভুল করার কোনো জায়গা নেই। তুমি সত্যিই আমার চরিত্রের কথা বলতে পার কি না তার ওপর নির্ভর করছে আমরা কী করব। এখানে আমাদের ব্যক্তিগত পছন্দ অপছন্দের কোনো গুরুত্ব নেই। তুমি বল।
বেশ। আমি একটা লম্বা নিশ্বাস নিয়ে বললাম, তোমার ভিতরে প্রতিযোগিতার একটা ভাব আছে য়োমি, তোমার প্রখর বুদ্ধিমত্তা তুমি কেন আড়াল করে রেখেছ সেটা একটা রহস্য। তোমার অনুভূতি খুব চড়া সুরে বাঁধা–
এসব কথা অর্থহীন। য়োমি আমাকে থামিয়ে দিয়ে বলল, আমার সম্পর্কে কোনো তথ্য বল।
আমি য়োমির দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালাম, এক মুহূর্ত দ্বিধা করে বললাম, তুমি একজন প্রতিহিংসাপরায়ণ মানুষ। তুমি অপরাধ করতে সক্ষম। তোমার লাল কার্ড ব্যবহার করে তুমি কোনো একজনকে ভয়ঙ্কর শাস্তি দেয়ার কথা ভাবছ। সম্ভবত মানুষটি তোমার শৈশবের কোনো ভালবাসার মানুষ। আমার ধারণা তুমি অতীতে কোনো বড় অপরাধ করেছ।
য়োমির মুখ মুহূর্তে রক্তশূন্য হয়ে গেল, আমি মৃদু স্বরে বললাম, তোমাকে আমাদের সাথে কাজ করতে দেয়া কোনো কাকতালীয় ব্যাপার নয়। আমার মনে হয় অনেক ভেবেচিন্তে দেয়া হয়েছে। শ্যালক্স গ্রুনের মস্তিষ্ক কেমন করে কাজ করবে সেটা সবচেয়ে ভালো বুঝবে তুমি। আমার ধারণা–
য়োমি প্রাণপণ চেষ্টা করে নিজেকে সামলে নিয়ে বলল, ঠিক আছে রিকি তোমাকে আর বলতে হবে না। যথেষ্ট হয়েছে।
আমি, আমি কি ভুল বলেছি?
য়োমি নিচের দিকে তাকিয়ে বলল, না। তুমি কেমন করে বলেছ আমি জানি না। এটি–এটি প্রায় অসম্ভব।
অসম্ভব নয় য়োমি। তুমি যেভাবে লাল কার্ডটি হাতে নিয়ে সেটার দিকে তাকিয়েছিলে দেখে যে কেউ বলতে পারবে তুমি এটা দিয়ে কাউকে শাস্তি দেবে। তোমার চোখে যে ঈর্ষার ছায়া ফুটে উঠেছিল সেটা দেখে বুঝতে কোনো অসুবিধে হয় না, কোনো একজন ভালবাসার মানুষ তোমাকে ছেড়ে গেছে, তুমি যেভাবে আমার দিকে তাকিয়েছ সেই দৃষ্টি থেকে—
নূবা আমাকে থামিয়ে দিয়ে বলল, রিকি, আমরা তোমার কথা বিশ্বাস করেছি। তুমি সম্ভবত একজন মানুষকে খুব ভালো বুঝতে পার, যেটা আমরা পারি না।
হিশান আমার দিকে সরু চোখে তাকিয়ে বলল, আমি তোমার ধারেকাছে থাকতে চাই না!
সবাই জোর করে একটু হেসে ব্যাপারটা একটু হালকা করে দেয়ার চেষ্টা করে তবুও পরিবেশটা কেমন যেন থমথমে হয়ে থাকে। খানিকক্ষণ কেউ কোনো কথা বলে না, ইগা খুব মনোযোগ দিয়ে নিজের নখকে লক্ষ করতে করতে হঠাৎ মুখ তুলে বলল, তাহলে কি রিকি যাবে শ্যালক্স গ্রুনের সাথে দেখা করতে?
যদি রিকির আপত্তি না থাকে।
না, আমার আপত্তি নেই। আমি মাথা নেড়ে বললাম, সত্যি কথা বলতে কী লোকটিকে দেখার আমার অসম্ভব কৌতূহল হচ্ছে!
কিন্তু তুমি জান ব্যাপারটি ভয়ঙ্কর বিপজ্জনক।
নুবা আমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, তোমার ভয় করছে না রিকি?
হা করছে। কিন্তু কী করা যাবে?
হিশান বলল, জেনারেল জিক্লোকে মেরে ফেলেছে কারণ মানুষটি নাকি নির্বোধ ছিল। অন্ততপক্ষে রিকিকে সে দোষ দিতে পারবে না।
ইগা য়োমির দিকে তাকিয়ে বলল, য়োমি, তোমার কী মনে হয়?
য়োমির চোখ হঠাৎ করে জ্বলজ্বল করে ওঠে, মনে হল রেগে কিছু একটা করবে। কিন্তু করল না, কষ্ট করে নিজেকে সামলে নিয়ে বলল, সত্যি আমার কী মনে হয় জান?
কী?
আমার মনে হয় রিকির জীবন্ত ফিরে আসার সম্ভাবনা খুব কম। শ্যালক্স গ্রুন প্রতিহিংসাপরায়ণ মানুষ–আমার মতোই। রিকি যদি তার সাথে কথা বলে কিছু একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার জেনে যায় সাথে সাথে তাকে মেরে ফেলবে।
তুমি সত্যিই তাই মনে কর?
হ্যাঁ। আমি শ্যালক্স গ্রুন হলে তাই করতাম
আমি মৃদু স্বরে বললাম, আমার মনে হয় য়োমি ঠিকই বলেছে। আমি কিন্তু তবু যেতে চাই।
সত্যি?
হ্যাঁ। আমি চেষ্টা করব বেঁচে একতে। তবু যদি না পারি তোমরা একটা জিনিস জানবে।
কী জিনিস?
জানবে মানুষটার মাঝে কিছু একটা দুর্বলতা আছে। জানবে তার পুরো পরিকল্পনার কোথাও কিছু একটা কারচুপি আছে। পুরো সমস্যাটি তখন তোমাদের কাছে অনেক সহজ হয়ে যাবে।
নুবা আমার দিকে এক ধরনের বিষণ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। খানিকক্ষণ চুপ করে থেকে একটা নিশ্বাস ফেলে বলল, মনে হচ্ছে আমি যদি এখানে না থাকতাম ভালো হত। খুব সহজে খুব বড় সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে আমার– আমি পারি না এসব।