ক্ৰানা চোখ বড় বড় করে বলল, তোমার নিশ্চয়ই মাথা খারাপ হয়েছে।
না, হয় নি। বিশ্বাস কর। পৃথিবীর খুব বিপদ।
আমি কেমন করে সেটি বিশ্বাস করব? তুমি হচ্ছ চাল–চুলোহীন ভবঘুরে একজন মানুষ? তোমাকে বিশ্বাস করার কী কারণ আছে?
আছে। দোহাই তোমার– আমি কাতর গলায় বললাম, আমার চোখের দিকে তাকাও–দেখো আমি সত্যি কথা বলছি কি না।
ক্ৰানা আমার চোখের দিকে তাকাল, তাকিয়ে মাথা নেড়ে বলল, আমি দুঃখিত। আমি খুব দুঃখিত। আমি পারব না।
ক্ৰানা উঠে দাঁড়াল, হাতের কবজিতে ছোট একটা সার্জিক্যাল টেপ লাগিয়ে আমার হাতে একটা প্যাকেট ধরিয়ে দিয়ে বলল, এর ভেতরে দুটি বলকারক ট্যাবলেট দিয়েছি। খিদে পেলে খেও। রক্তক্ষরণ হয়েছে, দুর্বল লাগতে পারে।
আমি কোনো কথা বললাম না, অত্যন্ত আশাভঙ্গ হয়ে ক্রানার দিকে তাকিয়ে রইলাম, আমি বড় আশা করেছিলাম যে এই মেয়েটি ব্যাপারটির গুরুত্বটুকু বুঝবে। মেয়েটি বুঝল না।
ক্ৰানা চলে যাবার পর জিগি আমার দিকে এক ধরনের বিস্ময় এবং আতঙ্ক নিয়ে তাকিয়ে রইল, খানিকক্ষণ চেষ্টা করে বলল, আমার ধারণা ছিল তুমি মানুষটা স্বাভাবিক। ধীরস্থির, ঠাণ্ডা মেজাজের মানুষ। আমার ধারণাটা সত্যি নয়।
আমি কষ্ট করে হাসার চেষ্টা করে বললাম, তোমার ধারণাটা আসলে সত্যি। বিশ্বাস কর।
কেমন করে বিশ্বাস করব? যে মানুষ এভাবে নিজের হাতের ধমনি কেটে ফেলে প্র
য়োজনে কাটতে হয়—
জিগি চিৎকার করে বলল, প্রয়োজনে? প্রয়োজনে?
হ্যাঁ।
জিগি চিৎকার করে নিশ্চয়ই আরো কথা বলত কিন্তু তার আগেই খুট করে শব্দ হল এবং দরজাটা খুলে গেল। আমি দেখতে পেলাম খ্রাউস ভেতরে এসে ঢুকেছে। আমাদের থেকে খানিকটা নিরাপদ দূরত্বে দাঁড়িয়ে সে খানিকক্ষণ চুপ করে দাঁড়িয়ে রইল, তারপর একটা নিশ্বাস ফেলে বলল, আশ্চর্য!
ঠিক কোন ব্যাপারটি নিয়ে আশ্চর্য বলেছে আমি জানি না, কিন্তু সেটি নিয়ে কথা বলতে ইচ্ছে করল না। উস আবার বলল, আশ্চর্য আমার এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না যে আমি তোমাদের কাছে এসেছি।
আমি এবারে জিজ্ঞেস না করে পারলাম না, কী জন্যে এসেছ?
একটা জিনিস জানার জন্যে।
কী জিনিস?
আমি নিশ্চিত তোমরা জান না–তবু কৌতূহল হচ্ছে তাই জিজ্ঞেস করছি। তোমরা কি জান পরাবাস্তব জগতে রিয়া কেন এখনো বেঁচে আছে? তার বেঁচে থাকার কথা নয়। সাতদিন পর তাকে খুন করার জন্যে নুরিগাকে পাঠিয়েছি, তার হাতে অস্ত্র তুলে দেওয়া হয়েছে–তার পরও রিয়া এখনো বেঁচে আছে কেন?
আমার মুখে হাসি ফুটে উঠল, আমি বললাম, হ্যাঁ জানি।
খ্রাউস চমকে উঠে আমার দিকে তাকাল, সত্যি জান?
হ্যাঁ। সত্যি জানি।
খ্রাউস একটা নিশ্বাস ফেলে বলল, আমার জানার খুব কৌতূহল হচ্ছে। বলো, কেন?
আমার অনুমান যদি সত্যি হয়ে থাকে তা হলে নুরিগা এখন পরাবাস্তব জগতে আমাকে এবং রিয়াকে সাহায্য করছে।
অসম্ভব। খ্রাউস মুখ বিকৃত করে বলল, নুরিগা হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে খারাপ মানুষ। তার চরিত্রের প্রত্যেকটা দিক তুলে আনা হয়েছে পৃথিবীর বড় বড় অপরাধীদের ভেতর থেকে। তার চরিত্র হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে জঘন্য মানুষের চরিত্র। শুধু তাই না, রিয়া সম্পর্কে তার মনকে আমরা বিষাক্ত করে পাঠিয়েছি।
আমি আনন্দে হা–হা করে হেসে বললাম, ভুল! তুমি ভুল। নুরিগা পৃথিবীর সবচেয়ে খারাপ মানুষ নয় সত্যি কথা বলতে কী একজন মানুষ কখনো সবচেয়ে খারাপ হয় না। তোমরা যেসব খারাপ মানুষের জিন্স এনেছ খোঁজ নিয়ে দেখো তারাও খারাপ মানুষ হয়ে জন্মায় নি–তারা ধীরে ধীরে খারাপ হয়েছে। পরিবেশ তাদের খারাপ করেছে।
তুমি বলতে চাইছ নুরিগা স্বাভাবিক একটা মানুষ?
আমি বিশ্বাস করি তাকে স্বাভাবিক একটা মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা যাবে।
খ্রাউস মাথা নাড়ল, অসম্ভব। হতেই পারে না।
তুমি নিজেই তার প্রমাণ দেখেছ–নুরিগা এখন রিয়া আর আমার সাথে সাথে পরাবাস্তব জগতে ঘুরছে। আমার ধারণা–
তোমার ধারণা?
আমার ধারণা সেখান থেকে তোমাদের ওপর তারা একটা বড় হামলা করবে।
খ্রাউসকে কেমন যেন হতচকিত এবং ক্রুদ্ধ দেখায়। আমি ষড়যন্ত্রীদের মতো গলায় বললাম, তোমরা কেন নুরিগাকে পৃথিবীর সবচেয়ে খারাপ মানুষ হিসেবে তৈরি করেছিলে আমি জানি না। কিন্তু এ ব্যাপারে আমি তোমাকে সাহায্য করতে পারি।
কী সাহায্য?
তুমি এবং তোমার দলবল নুরিগা থেকে হাজার গুণ বেশি খারাপ মানুষ। তোমরা নিজেদের ব্যবহার করতে পার।
খ্রাউস রক্তচক্ষু করে আমার দিকে তাকাল, তারপর হিংস্র গলায় বলল, তোমার দুঃসাহস দেখে আমি অবাক হয়ে গেছি। তুমি জান আমি তোমাকে কী করতে পারি?
আসলে জানি না। আমি মাথা নেড়ে বললাম, তুমি সম্ভবত আর দশজন মানুষ থেকে অনেক বেশি নিষ্ঠুর আমাদের নিয়ে হয়তো অনেক কিছুই করতে পার। কিন্তু তাতে এখন আর কিছু আসে–যায় না।
খ্রাউস আরো কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল ঠিক তখন তার যোগাযোগ মডিউলটা শব্দ করে ওঠে, সে কানে লাগিয়ে কিছু একটা শুনে বলল, চমৎকার। দুজনকেই লঞ্চ প্যাডে। নিয়ে যাও। তারপর মডিউলটা পকেটে রেখে আমাদের বলল, তোমরা একদিকে খুব সৌভাগ্যবান যে, আমার হাতে যথেষ্ট সময় নেই। তাই তোমাদের মৃত্যুটাকে সেরকম আকর্ষণীয় করতে পারব না।
তুমি হয়তো সেরকম সৌভাগ্যবান নও। আমি মুখে হাসি টেনে বললাম, নুরিগা যখন পরাবাস্তব জগতে গিয়েছে আমি তখন তাকে দিয়ে একটা খবর পাঠিয়েছিলাম। খবরটা কি শুনতে চাও?