আমি মাথা নাড়লাম, বললাম, ঠিক আছে।
কেউ যদি আমাদের লক্ষ করছে সে যেন কোনো সন্দেহ না করে।
ঠিক আছে।
যদি কিছু জিজ্ঞেস করে আমরা বলব যে ট্রাইকিনিওয়াল যোগাযোগ পরীক্ষা করার জন্যে এসেছি।
ঠিক আছে।
ভান করব যে তুমি হচ্ছ আমাদের পরীক্ষার বিষয়। তোমাকে দিয়ে আমরা সিস্টেম পরীক্ষা করি।
ঠিক আছে।
জিগি বিরক্ত হয়ে বলল, কী হয়েছে তোমার? যেটাই জিজ্ঞেস করি তার উত্তর দেও ঠিক আছে? কথা বলতে কি তোমার ইউনিট খরচ হয়?
আমি কষ্ট করে চোখ খোলা রেখে বললাম, ইউনিট খরচ হলে সহজ হত। তোমার মস্তিষ্কের নিউরনে কখনো কেউ স্টিমুলেশন দেয় নি বলে তুমি জান না।
ও! জিগি হঠাৎ করে খানিকটা ব্যস্ত হয়ে বলল, আমি বুঝতে পারি নি ব্যাপারটি এত কষ্টের। তোমার কি খুব কষ্ট হচ্ছে?
খানিকটা। একটু সময় দাও, ঠিক হয়ে যাবে।
জিগি আর কথা বলল না, আমরা পাশাপাশি হেঁটে বড় পুরাতন দালানটির ভেতরে ঢুকলাম। বাইরের গেটের পাসওয়ার্ড জানার কারণে খুব সহজেই দালানের দরজা খুলে ফেলা গেল। ভেতরে পা দিতেই অনেকগুলো বাতি জ্বলে উঠল এবং পরিশোধিত বাতাস সঞ্চালনের জন্যে কিছু পাম্প চালু হয়ে গেল—-আমরা তার চাপা গুঞ্জন শুনতে পেলাম। জিগি একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে বলল, চমৎকার! তার মানে এখানে কেউ নেই।
আমি এতক্ষণে মোটামুটি নিজের পায়ের ওপর সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারছি। করিডরটার দিকে তাকিয়ে বললাম, এখানে দাঁড়িয়ে না থেকে চলে কোনো একটা ঘরে ঢুকে যাই।
হ্যাঁ। জিগি উৎফুল্ল গলায় বলল, মূল পাসওয়ার্ড জেনে গেছি, এখন আর কেউ আমাদের আটকাতে পারবে না।
মাত্র দুদিন আগেই আমি এখানে ছিলাম, তাই করিডর ঘর দরজা খানিকটা পরিচিত মনে হচ্ছে। জিগিকে নিয়ে আমি নির্দিষ্ট ঘরটিতে উপস্থিত হলাম, ভেতরে কমিউনিকেশানের যন্ত্রপাতি, মস্তিষ্কের অস্ত্রোপচারের ব্যবস্থা, নেটওয়ার্ক এবং নেটওয়ার্কের নিয়ন্ত্রণ সাজানো। ঘরটিতে ঢুকে জিব দিয়ে শিস দেওয়ার মতো শব্দ করে জিগি এক ধরনের আনন্দধ্বনি করে বলল, এন্ড্রোমিডার কসম! এই রকম একটা জায়গা যদি আমার থাকত।
আমি অস্ত্রোপচার করার বিছানাটিতে পা ঝুলিয়ে বসে বললাম, এই তো পেয়ে গেলে! কী করবে কর।
কিন্তু পাকাপাকিভাবে তো পাই নি। অল্পক্ষণের জন্যে পেয়েছি। যাই হোক জিগি ঘাড় থেকে ব্যাগ নামিয়ে সাথে সাথে কাজে লেগে গেল। আমি যন্ত্রপাতির ঘুঁটিনাটি তার মতো এত ভালো করে জানি না বলে আপাতত বিছানায় বসে বসে তার কাজ দেখতে লাগলাম।
কিছুক্ষণের মাঝেই বোঝা গেল এটি নেটওয়ার্কের একটা বড় নোড। মানুষের নতুন অস্তিত্ব সৃষ্টি করে এখান থেকেই সেটা এই নেটওয়ার্কে প্রবেশ করানো হয়। এখান থেকে নানা ধরনের ফাইবারের অসংখ্য ক্যাবল ভূগর্ভে চলে গেছে। মূল তথ্যকেন্দ্রগুলো কোথায় কে জানে কিন্তু সবগুলোয়ই এখান থেকে যোগায়োগ করা সম্ভব। জিগি মাথায় একটা হেলমেট পরে উবু হয়ে বসে কাজ শুরু করে দেয়।
ঘণ্টাখানেক পরে উত্তেজিত গলায় জিগি বলল, পেয়েছি।
কী পেয়েছ?
মূল তথ্যকেন্দ্র।
সত্যি? আমি কাছে এগিয়ে গেলাম, জিজ্ঞেস করলাম, কোথায়?
এই দেখ বলে জিগি তার মনিটরে কিছু পরিবর্তনশীল সংখ্যা দেখাতে থাকে। টেবিলে হাত দিয়ে থাবা দিয়ে বলে, এখন শুধু ভেতরে ঢুকে যাওয়া। ঢুকে গিয়ে ইচ্ছে করলেই সব তথ্য পাল্টে দিতে পারি!
হ্যাঁ। কিন্তু আমি একটু ইতস্তত করে বললাম, আমাদের অস্তিত্বগুলো কি পেয়েছ? কোথায় আছে? কেমন আছে?
আছে, আছে এখানেই আছে। জিগি সংখ্যাগুলো দেখিয়ে বলল, এর মাঝে কোনো একটা তোমাদের অস্তিত্ব। আমি ইচ্ছে করলেই এখন সব শেষ করিয়ে দিতে পারি, ধ্বংস করে দিতে পারি, উড়িয়ে দিতে পারি! জিগি আনন্দে হা–হা করে হেসে বলল, আমি এখন একটা ছোটখাটো ঈশ্বরের মতো।
থামো। আমি জিগিকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করে বললাম, ঈশ্বর শুধু ধ্বংস করতে পারে না, তৈরিও করতে পারে। তুমি তো শুধু শেষ করে দেওয়ার কথা বলছ। আমরা তো শেষ করতে চাইছি না–যোগাযোগ করতে চাইছি। আমার অস্তিত্ব কিংবা রিয়ার অস্তিত্বের সাথে কথা বলতে চাইছি। তারা কেমন আছে কোথায় আছে জানতে চাইছি।
হ্যাঁ। জিগি মাথা নাড়ল, মনিটরের সংখ্যাগুলো আরো কিছুক্ষণ মনোযাগ দিয়ে লক্ষ করে বলল, সবচেয়ে ভালো হয় তুমি যদি এখানে ঢুকে যাও।
ঢুকে যাব?
হ্যাঁ। এই যে দেখ এখানে ছয়টা পরাবাস্তব জগৎ রয়েছে, এর মাঝে কোনো একটা তোমার। অন্যগুলো
অন্যগুলো কী?
জিগি মাথা চুলকে বলল, বুঝতে পারছি না। নিজে না দেখে বলা মুশকিল। তুমি ঢুকে দেখে আস। তোমার মাথায় ট্রাইকিনিওয়াল ইন্টারফেস আছে–তোমার জন্যে একেবারে পানির মতো সোজা।
আমি জিগির দিকে কাতর চোখে তাকালাম, ভেতরে কী আছে কে জানে কিন্তু আমি সেখানে ঢোকার মতো সাহস পাচ্ছি না। জিগি বলল, কী হল, ঢুকবে না?
আমি একটা নিশ্বাস ফেললাম, বললাম, ঠিক আছে। ঢুকে দেখে আসি।
জিগি চকচকে চোখে বলল, তোমার কোনো ভয় নেই। এখানে অনেক যন্ত্রপাতি আছে, আমি তোমাকে খুব ভালোভাবে দেখেশুনে রাখব। বাইরের কিছু তোমার মাথায় ঢুকতে দেব না। যদি দেখি তোমার কোনো সমস্যা হচ্ছে।
আমি চমকে উঠে জিগির দিকে তাকালাম, বললাম, সমস্যা কী হতে পারে? কিছু একটা কি মাথায় ঢুকে যেতে পারে?
সেটা তো পারেই। ট্রাইকিনিওয়াল ইন্টারফেস হচ্ছে দ্বিমুখী। তোমার মস্তিষ্ক থেকে যেতে পারে আসতেও পারে। আমি লক্ষ রাখব কিছু যেন না আসে। তুমি ভয় পেয়ো না।