কিহির ধারণা সত্যি। কয়েকটা বাইভার্বাল থেকে সামরিক পোশাক পরে থাকা মানুষগুলো নেমে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ার পর বিশাল একটা বাইভার্বাল তাদের কাছাকাছি এসে থামল। নিচে একটা অংশ খুলে যাবার পর সেখান থেকে একটা সিঁড়ি বের হয়ে আসে এবং সিঁড়ি দিয়ে সামরিক পোশাক পরে থাকা একজন ছোটখাটো মানুষ নেমে এলো! কিহি চাপা গলায় জিজ্ঞেস করল, “এটি কে?”
একজন ফিসফিস করে বলল, “সামরিক বাহিনীর প্রধান। কমান্ডার লী।”
ত্রাতিনা চমকে উঠল এবং সাথে সাথে সে বুঝে গেল, তার চিঠি পেয়ে কমান্ডার লী সরাসরি তার সাথে দেখা করতে চলে এসেছে। কী আশ্চর্য!
কিহি চাপা গলায় বলল, “কমান্ডার লী আমাদের ক্যাম্পাসে কেন এসেছে?”
ত্রাতিনা বলল, “মনে হয় আমার সাথে দেখা করতে।” কথাটাকে একটা কৌতুক মনে করে কিহি হেসে উঠতে যাচ্ছিল। কিন্তু সে হাসি থামিয়ে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। কারণ দেখতে পেল, কমান্ডার লী সরাসরি তাদের দিকে হেঁটে আসছে।
ত্রাতিনার সামনে এসে কমান্ডার লী থেমে গেল। তার দিকে তাকিয়ে বলল, “ত্রাতিনা?”
ত্রাতিনা খাবারের প্যাকেটটা নিচে রেখে দাঁড়িয়ে বলল, “হ্যাঁ, আমি ত্রাতিনা।”
কমান্ডার লী তার হাত দুটো দুই পাশে ছড়িয়ে বলল, “মা, আমি কি তোমাকে একবার আলিঙ্গন করতে পারি?”
ত্রাতিনা কোনো কথা না বলে দুই পা এগিয়ে যায়। কমান্ডার লী গভীর ভালোবাসায় তাকে আলিঙ্গন করে। তার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলে, “তুমি কি জান তোমার মা পৃথিবীর সাত বিলিয়ন মানুষের প্রাণ বাঁচিয়েছে?”
ত্রাতিনা বলল, “না জানি না।” কী কারণ কে জানে, ত্রাতিনার চোখ পানিতে ভিজে এলো।
কমান্ডার লী ত্রাতিনাকে শক্ত করে ধরে রেখে ফিসফিস করে বলল, “পৃথিবীর মানুষের কাছে তোমার মায়ের কথা বলার সময় এখনো আসেনি। সারা পৃথিবীতে এখন আমরা মাত্র অল্প কয়জন সেটি জানি।”
ত্রাতিনা ফিসফিস করে বলল, “কখনো কী সেই সময় আসবে?”
কমান্ডার লী বলল, “আমরা আশা করছি আসবে। বিষয়টি অনেক জটিল। আমি তোমাকে একদিন সবকিছু বলব।”
“ধন্যবাদ কমান্ডার লী।”
কমান্ডার লী ত্রাতিনাকে ছেড়ে দিয়ে ঘুরে যেভাবে এসেছিল ঠিক সেভাবে তার বিশাল বাইভার্বালের দিকে হাঁটতে শুরু করে। বিশাল বাইভার্বালটি থেকে একটা সিঁড়ি নেমে এলো, কমান্ডার লী সেই সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠে গেল। গোলাকার দরজাটি বন্ধ হয়ে গেল এবং দেখতে দেখতে সবগুলো বাইভার্বাল গর্জন করে উপরে উঠে যায়। তারপর ঘুরে যেদিক থেকে এসেছিল, সেদিকে উড়ে যেতে থাকে।
বাইভার্বালগুলো চোখের আড়াল হয়ে যাবার পর সবাই ত্রাতিনার দিকে ঘুরে তাকালো। তারা তাদের চোখের সামনে যেটা দেখেছে, সেটা বিশ্বাস করতে পারছে না। কেউ সাহস করে কিছু জিজ্ঞেস করতেও পারছে না। ত্রাতিনা তার খাবারের প্যাকেটটা তুলে নিয়ে যেন কিছুই হয়নি সেরকম ভঙ্গি করে খেতে শুরু করে।
কিহি সাহস করে জিজ্ঞেস করল, “কমান্ডার লী তোমার কাছে কেন এসেছিল?”
“আমি তাকে একটা চিঠি লিখেছিলাম। চিঠিটা পড়ে উত্তর না দিয়ে সরাসরি চলে এসেছে।”
“কী লিখেছিলে চিঠিতে?”
“এই তো-ব্যক্তিগত কথা।”
“কমান্ডার লী তোমার কানে ফিসফিস করে কিছু বলেছে। কী বলেছে?”
ত্রাতিনা খুবই শান্ত ভঙ্গিতে বলল, “বলেছে আমার চিঠিতে কয়েকটা বানান ভুল ছিল। শুদ্ধ বানানগুলো কী হবে সেটা বলে দিয়েছে।”
কিহি অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে ত্রাতিনার দিকে তাকিয়ে বলল, “তুমি আমার সাথে ঠাট্টা করছ, তাই না?”
ত্রাতিনা মাথা নাড়ল। হাসি হাসি মুখে বলল, “তুমি সঠিক অনুমান করেছ কিহি।”
“কেন তুমি ঠাট্টা করছ?”
“কারণ আসলে যে কথাটি বলেছে, সেটা অনেক কম বিশ্বাসযোগ্য! তোমাদেরকে বলা হলে তোমরা কেউ বিশ্বাস করবে না।”
পাশে বসে থাকা একটি মেয়ে কাছে এসে বলল, “আমি কী তোমার সাথে একটা ছবি তুলতে পারি?”
ত্রাতিনা হেসে বলল, “কেন পারবে না! শুধু সেই মেয়েটি নয়, আরো অনেকেই তখন তার সাথে ছবি তুললো।
.
কমান্ডার লী ত্রাতিনাকে কথা দিয়েছিল যে, তার মায়ের পুরো ব্যাপারটি অনেক জটিল। কোনো একদিন তাকে সবকিছু বলবে। কখন বলবে, সে অনুমান করতে পারছিল না। কিন্তু সপ্তাহ শেষ হবার আগেই তার সাথে কমান্ডার লীয়ের দেখা হলো। এবারে দেখা হলো সবার অগোচরে।।
ছুটির দিনগুলোতে ত্রাতিনা মিউজিয়ামগুলোতে ঘুরে বেড়ায়। তার বয়সী ছেলেমেয়েদের বেশিরভাগই কখনো মিউজিয়ামে সময় কাটাতে চায় না। তাই প্রায় সময়েই সে একা একা ঘোরে। সে যখন একটি প্রাচীন ছবির সামনে খানিকটা বিস্ময় এবং অনেকখানি অবিশ্বাস নিয়ে দাঁড়িয়েছিল, তখন হঠাৎ শুনতে পেলো একজন তার কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল, “ত্রাতিনা?”
ত্রাতিনা ঘুরে তাকালো। মধ্যবয়স্ক সাদাসিধে চেহারার একজন মানুষ।। তাকে আগে কখনো দেখেছে বলে তার মনে পড়ল না। মানুষটি মাথাটা আরেকটু নিচু করে বলল, “কমান্ডার লী আমাকে তোমার কাছে পাঠিয়েছে। তোমার যদি সেরকম ব্যস্ততা না থাকে, তাহলে তোমাকে তার কাছে নিয়ে যেতে বলেছে।”
ত্রাতিনা একটু চমকে উঠল। বলল, “না, মিউজিয়ামে ছবি দেখার মাঝে কোনো ব্যস্ততা নেই।”
“চমৎকার। চল তাহলে।”
ত্রাতিনা মানুষটির সাথে বের হলো। মিউজিয়ামের গেটে দাঁড়ানোর সাথে সাথে উপর থেকে একটা সাদামাটা বাইভার্বাল নিচে নেমে এলো। মানুষটির সাথে বাইভার্বালটিতে উঠে ত্রাতিনা অবাক হয়ে যায়। বাইরে থেকে বোঝার উপায় নেই, কিন্তু ভেতরে বাইভার্বালটি চমকপ্রদ। এক কথায় অসাধারণ। ত্রাতিনা অবাক হয়ে বলল, “কী সুন্দর।”