.
ত্রাতিনা খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা খবর পেয়ে গেল একেবারে হঠাৎ করে। তাদের মহাকাশের ইতিহাসের উপর লেকচার দেওয়ার জন্যে একজন বয়স্ক মহাকাশচারী এসেছেন। দুই ঘণ্টার টানা লেকচার দিয়ে মহাকাশচারী ছাত্রছাত্রীদের জিজ্ঞেস করল, তাদের কোনো প্রশ্ন আছে কি না। সবারই কোনো না কোনো প্রশ্ন, বয়স্ক মহাকাশচারী ধৈর্য ধরে সবার প্রশ্নের উত্তর দিল। তখন একজন জিজ্ঞেস করল, “তুমি তো অনেক অভিযান করেছ। কখনো কী খুব বিপজ্জনক মিশন করেছ?”
বয়স্ক মহাকাশচারী মাথা নাড়ল। বলল, “হ্যাঁ। আমি আমার ক্রুদের নিয়ে একবার খুব বিপদে পড়েছিলাম। মহাকাশে হঠাৎ করে আমাদের মহাকাশযানের সমস্ত কমিউনিকেশন্স বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। পুরো মহাকাশযানটি হয়ে গেল একটা জড় পদার্থ! অনবোর্ড কোয়াকম্প পর্যন্ত কাজ করছে না। শুধুমাত্র ইঞ্জিন অন অফ করে পৃথিবীতে ফিরে এসেছিলাম কোনো যোগাযোগ ছাড়া।”
আরেকজন জানতে চাইল, “কীভাবে কমিউনিকেশন্স বন্ধ হল?”
“রেডিয়েশান। হঠাৎ করে একটা তীব্র গামা রে বার্স্ট এসে ইলেকট্রনিক্স নষ্ট করে দিল।”
“রেডিয়েশান কোথা থেকে এলো?”
“মহাকাশে মাঝে মাঝে রেডিয়েশান বাস্ট আসে। সূর্য থেকেই অনেক ধরনের বাস্ট আসে।”
আরেকজন জিজ্ঞেস করল, “তখন তোমার বয়স কতো ছিল?”
মহাকাশচারী হাসার চেষ্টা করল। বলল, “বয়স কম ছিল। ষোল বছর আগে–আমার বয়স তখন মাত্র ষাট!”
ত্রাতিনা ভিতরে ভিতরে চমকে উঠল। ষোল বছর আগে রেডিয়েশান বাচেঁ মহাকাশযানের ইলেকট্রনিক্স নষ্ট হয়ে গিয়েছিল? সে হাত তুলে জিজ্ঞেস করল, “তোমার কী তারিখটি মনে আছে?”
“মনে থাকার কথা নয়, আমার দিন তারিখ মনে থাকে না। তবে ঘটনাক্রমে আমার তারিখটা মনে আছে। সেদিন ছিল আমাদের বিবাহ বার্ষিকী, সেপ্টেম্বরের বারো তারিখ।”
ত্রাতিনা ইলেকট্রিক শক খাওয়ার মতো চমকে উঠল। তার মায়ের রহস্যজনক মৃত্যুর দিনটিও সেপ্টেম্বরের বারো তারিখ, ঠিক ষোল বছর আগে।
.
এতোদিন ত্রাতিনা বিচ্ছিনভাবে খোঁজখবর নিচ্ছিল। হঠাৎ করে সে খোঁজ খবর নেওয়ার একটি সুনির্দিষ্ট দিক খুঁজে পেলো। ষোল বছর আগে সেপ্টেম্বরের বারো তারিখ আরো অন্য মহাকাশযান কী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল? হয়ে থাকলে কোথায়? কীভাবে?
পরের কয়েক সপ্তাহে সে ক্ষতিগ্রস্ত মহাকাশযানের খোঁজ নিতে থাকে। বিভিন্ন মহাকাশচারীর সাথে কথা বলে, তাদের অভিজ্ঞতার কথা জানতে চায়। পৃথিবীর বিভিন্ন ল্যাবরেটরিতে লগ ঘাঁটাঘাঁটি করে সে অনুমান করতে পারে সেই দিনটিতে মহাকাশে একটা নিউক্লিয়ার বিস্ফোরণ ঘটেছিল। তার মা নিশ্চয়ই সেই বিস্ফোরণে মারা গিয়েছিল। তার মা জানতো সে মারা যাবে, কারণ নিশ্চয়ই বিস্ফোরণটি ঘটিয়েছিল তার মা। মহাকাশ থেকে একটা গ্রহকণা ছুটে এলে সেগুলোকে ধ্বংস করার জন্যে নিউক্লিয়ার বিস্ফোরণ ঘটননা হতে পারে। কিন্তু সেটি করার জন্যে কাউকে নিউক্লিয়ার বোমা নিয়ে যেতে হয় না। নিচ থেকে সেটি উড়িয়ে দেয়া যায়। তার মা বোমাটি নিয়ে গিয়েছিল। কেন?
ত্রাতিনা হঠাৎ করে ঠিক করল, সে ব্যাপারটি জানতে চেয়ে সামরিক বাহিনীর সর্ব প্রধানকে একটি চিঠি লিখবে।
ত্রাতিনা লিখল:
কমান্ডার লী,
আমার নাম ত্রাতিনা। আমার মায়ের নাম রায়ীনা। আমার মা ষোল বছর আগে সেপ্টেম্বরের বারো তারিখে মহাকাশে একটি নিউক্লিয়ার বোমা বিস্ফোরণ করার জন্যে নিজের প্রাণ দিয়েছিলেন।
কারণটি জানার আমার খুব কৌতূহল হচ্ছে।
বিনীত
ত্রাতিনা
ত্রাতিনা চিঠিটাকে যোগাযোগ মডিউলে প্রবেশ করালো, নিরাপত্তা সূচক মাত্রা দিল, এনক্রিপ্ট করলো। তারপর পাঠিয়ে দিল।
ষোল বছরের একটি মেয়ে হয়ে পৃথিবীর সামরিক বাহিনীর প্রধানের কাছে একটা চিঠি পাঠানোর বিষয়টা ঠিক হল কিনা, সে বুঝতে পারল না। সে অবশ্যি বোঝার খুব বেশি চেষ্টাও করল না।
.
২.৩
ক্যাম্পাসে দুপুর বেলা ট্রলিতে করে নানা ধরনের খাবার নিয়ে আসা হয়। ছাত্রছাত্রীরা সেই খাবার নিয়ে ক্যাম্পাসের খোলা জায়গায় বসে গল্পগুজব করতে করতে খায়। আজকেও ত্রাতিনা খাবারের প্যাকেট নিয়ে কিহি এবং আরো কয়েকজনের সাথে খেতে বসেছে। দক্ষিণ অঞ্চলের খাবার, তুলনামূলকভাবে ঝাল বেশি, খেতে খেতে ত্রাতিনা আহা উঁহু করছে তখন অনেক দূর থেকে সে চাপা এক ধরনের গুম গুম শব্দ শুনতে পেলো। একটু অবাক হয়ে ত্রাতিনা বলল, “কিসের শব্দ?”
কিহি বলল, “আকাশ তো পরিষ্কার। মেঘের ডাক তো হতে পারে না।”
তখন ত্রাতিনা বহু দূরে এক সাথে অনেকগুলো বাইভার্বালকে আসতে দেখলো। এর আগে সে কখনো একসাথে এতোগুলো বাইভার্বালকে উড়তে দেখেনি। ত্রাতিনা বলল, “দেখেছো কতগুলো বাইভার্বাল একসাথে?”
সবাই দেখলো। কিহি বলল, “কোথায় যাচ্ছে কে জানে।”
খেতে খেতে সবাই তাকিয়ে থাকে এবং একটু অবাক হয়ে দেখলো বাইভার্বালগুলো শক্তিশালী ইঞ্জিনের গর্জন করে ঠিক তাদের ক্যাম্পাসের উপর এসে থেমে গেল। একটা বড় বাইভার্বাল মাটি থেকে এক মিটারের কাছাকাছি নেমে এলো। সেটার দরজা খুলে সেনাবাহিনীর পোশাক পরে থাকা অনেকগুলো সশস্ত্র মানুষ লাফিয়ে নেমে বৃত্তাকারে ছড়িয়ে পড়ল। ত্রাতিনা ফিসফিস করে বলল, “সর্বনাশ! মনে হচ্ছে, আমাদের আক্রমণ করবে।”
কিহি বলল, “না, আক্রমণ করবে না। মনে হয়, সামরিক বাহিনীর বড় কোনো অফিসার এসেছে। এরা তার বডিগার্ড।”