মেয়েটা কোনো উত্তর না দিয়ে কেমন যেন একটু অস্বস্তি নিয়ে তিতুনির দিকে তাকিয়ে রইল। তিতুনি আবার বলল, “বলো, তুমি কোথা থেকে এসেছ?”
মেয়েটা হাত তুলে আকাশের দিকে দেখিয়ে বলল, “ওই তো ওখান থেকে।”
“ওখান থেকে মানে? আকাশ থেকে?”
“বলতে পারো।”
“বলতে পারো মানে?”
তিতুনি আরো এক পা এগিয়ে এলো, বলল, “পরিষ্কার করে বলো তুমি কোথা থেকে এসেছ?”
তিতুনির মতো মেয়েটা একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলল, “পরিষ্কার করে বললে তুমি কিছুই বুঝবে না। তুমি তোমার সৌরজগতের গ্রহগুলো ছাড়া আর কিছুই জানেন না। গ্যালাক্সির নাম শুনেছ কিন্তু সেটা কী তুমি জানো না। আকাশের তারাগুলো তুমি দেখেছ কিন্তু সেগুলো সম্পর্কে তুমি কিছু জানো না। আমি কোথা থেকে এসেছি তোমাকে বোঝানো সম্ভব না।”
তিতুনি চোখ বড় বড় করে বলল, “তুমি এলিয়েন?”
মেয়েটা মাথা নাড়ল। তিতুনি বলল, “কিন্তু এলিয়েনরা দেখতে আমার মতন হয় না।”
“কী রকম হয়?”
“সবুজ রঙের হয়। চোখগুলো বড় বড় হয়। মাথাটা অনেক বড় থাকে। হাত-পাগুলো সরু হয়। আঙুলগুলো লম্বা হয়। এক হাতে তিনটা করে আঙুল থাকে।”
তিতুনির মতো মেয়েটা মাথা নাড়ল, বলল, “হ্যাঁ জানি।”
“জানো?”
“হ্যাঁ।”
“তাহলে তুমি আমার মতো কেন?”
“আমি তোমাকে প্রথম দেখেছি সে জন্যে তোমার মতো হয়েছি।” তিতুনি ভুরু কুঁচকে বলল, “আরেকজনকে প্রথমে দেখলে তার মতো হতে?”
মেয়েটা মাথা নাড়ল। তিতুনি বলল, “তাহলে তুমি যে রকম ইচ্ছা সে রকম হতে পারো?”
তিতুনির মতো মেয়েটা তার মাথা আর ঘাড় এমন করে নাড়ল, যার অর্থ হ্যাঁ কিংবা না দুটোই হতে পারে। তিতুনি যখন কোনো কিছু ঠিক করে বলতে চায় না তখন ঠিক এইভাবে মাথা নাড়ে-এই মেয়েটা কীভাবে জানি সেটা জেনে গেছে। তিতুনি বলল, “তুমি যখন একটা এলিয়েন তাহলে তুমি কেন আমার মতো হয়েছ? এলিয়েনের মতো হয়ে যাও।”
“নাহ্।” মেয়েটা মাথা নাড়ল।
“কেন না?”
“তোমার মতনই ভালো। এলিয়েনদের কী করতে হয় আমি জানি। তুমি হলে কী করতে হয় জানি।”
তিতুনি চোখ বড় বড় করে বলল, “আমি হলে কী করতে হয় তুমি জানো?”
“হ্যাঁ।”
“কীভাবে জানো?”
মেয়েটা একটু লজ্জা পাবার ভান করে বলল, “তোমার মাথার ভেতরে ঢুকে দেখেছি।”
তিতুনি প্রায় চিৎকার করে বলল, “তুমি কী বললে? আমার মাথার ভেতরে ঢুকে দেখেছ?”
“হ্যাঁ।”
“আ-আ-আমার মাথার ভেতরে?” তিতুনির এখনো কথাটা বিশ্বাস হয় না। “তু-তুমি আমার মাথার ভেতরে ঢুকেছ?”
মেয়েটা একটু অপরাধীর মতো ভঙ্গি করে বলল, “হ্যাঁ।”
“এই একটু আগে যে আমার মাথাটা কেমন জানি ঘুরে উঠল, কেমন যেন মনে হলো মাথার ভেতরে কী হচ্ছে-তখন তুমি আমার মাথার ভেতরে ঢুকেছিল?”
“হ্যাঁ।” মেয়েটা প্রায় মাথা নিচু করে ফেলল, তাকে দেখে মনে হলো যেন সে খুব বড় একটা অপরাধ করে ফেলেছে।
তিতুনি তখন আরো গরম হয়ে বলল, “তোমার এত বড় সাহস, তুমি আমার অনুমতি না নিয়ে আমার মাথার ভেতরে ঢুকেছ? আমার মাথায় যদি এখন কোনো সমস্যা হয় তাহলে তোমার খবর আছে বলে রাখলাম।”
মেয়েটা মাথা নাড়ল, বলল, “সমস্যা হবে না। আমি কিছু ধরি নাই, কিছু ওলটপালট করি নাই। খালি দেখেছি।”
“কী দেখেছ?”
“এই তো তুমি কে, কী করো, কী চিন্তা করো-এই সব।”
তিতুনি বলল, “সব দেখেছ?”
মেয়েটা মাথা নাড়ল, বলল, “হ্যাঁ।”
“বলো দেখি আমার ভাইয়ের নাম কী?”
“টোটন।”
“বলো দেখি আজকে সকালে কী হয়েছিল?”
“নাশতা খাবার সময় আমি যখন পানি খেতে যাচ্ছিলাম তখন ভাইয়া আমাকে ধাক্কা দিয়েছে, আর তখন হাত থেকে গ্লাসটা পড়ে ভেঙে গেছে। তখন–”
তিতুনি হাত তুলে বলল, “দাঁড়াও, দাঁড়াও, তুমি কী বললে, আমি?”
“হ্যাঁ আমি। আমি যখন পানি খেতে–”
তিতুনি গরম হয়ে বলল, “মোটেও তুমি পানি খেতে যাচ্ছিলে না, তুমি হচ্ছ এলিয়েন-তুমি তখন কোথায় ছিলে আমি জানি না। আমি পানি খেতে যাচ্ছিলাম।” তিতুনি বুকে থাবা দিয়ে বলল, “আমি।”
“একই কথা।” তিতুনির মতো মেয়েটা বলল, “আমি আর তুমি একই কথা। এখন তুমি যা আমিও তাই। আমি তোমার মগজের দশ হাজার সাতশ’ বার কোটি সাতাত্তর লক্ষ চৌত্রিশ হাজার পাঁচশ ছেচল্লিশটা নিউরন কপি করে আমার মগজে রেখে দিয়েছি।”
তিতুনি কিছুক্ষণ হাঁ করে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে থাকল, তারপর বলল, “কয়টা নিউরন?”
মেয়েটা আবার পুরো সংখ্যাটা বলল। তিতুনি বলল, “তুমি আমার মাথার ভেতরের সবগুলো নিউরন গুনেছ?”
“হ্যাঁ। না গুনলে কপি করব কীভাবে!”
তিতুনি কিছুক্ষণ মেয়েটার দিকে তাকিয়ে রইল তারপর একটা লম্বা দীর্ঘশ্বাস ফেলল, কেন দীর্ঘশ্বাস ফেলল সে নিজেও বুঝতে পারল না। খানিকক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, “কাজটা ঠিক হলো না।”
“কোন কাজটা ঠিক হলো না?”
“এই যে তুমি আমি হয়ে গেলে। যদি এখন কেউ তোমাকে দেখে ফেলে তখন কী হবে?”
মেয়েটা মাথা চুলকে বলল, “কী আর হবে? প্রথমে একটু অবাক হবে, তারপর মেনে নেবে। না মেনে উপায় কী? কখনোই তো বুঝতে পারবে না কে তুমি কে আমি। দুইজনেই তো হুবহু এক রকম।”
তিতুনি গরম হয়ে বলে, “কিন্তু তুমি এলিয়েন। এক্স-রে করলে দেখবে তোমার ভেতরে কিলবিল কিলবিল করছে ড়ওয়ালা জিনিসপত্র। তোমাকে কাটলে সাদা রঙের রক্ত বের হবে, চুল ধরে টান দিলে পুরো চামড়া খুলে ভেতরে ভয়ংকর এলিয়েন বের হয়ে যাবে। আমি জানি।”